New to Nutbox?

ক্রিয়েটিভ রাইটিং || গল্প: দুই বন্ধু

2 comments

ronggin
74
2 months agoSteemit4 min read

নমস্কার,

তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই অনেক অনেক ভালো আছো। আমিও মোটামুটি ভালো আছি।

friends-3580188_1280.jpg

ইমেজ সোর্স

ছোট্ট এই গ্রামের নাম শান্তিপুর। এই গ্রামে প্রায় ৩০০ মানুষ বসবাস করে। এই গ্রামে রাজু এবং শান্ত দু'জনই থাকে। তাদের একজনের বয়স ৯ বছর এবং আরেকজনের বয়স ৮ বছর। রাজুর বাবা পেশায় একজন মৎস্যজীবী এবং শান্তর বাবা একজন কৃষক। তাদের উভয়ের পরিবারই গরীব। কোনরকম করে দিন চলে যায় তাদের। দুই বন্ধু এই গ্রামের স্কুলই পড়ে। ক্লাস ফোরে উঠেছে এবার তারা। তাদের স্কুল নদীর অন্য পাশে অর্থাৎ প্রত্যেকবার স্কুলে যেতে হলে তাদের নৌকায় করেই যেতে হয়। পড়াশোনায় তারা দুইজনেই ভালো। তবে তাদের পরিবারের লোকজন তাদের পড়াশোনা করাতে চায় না। কারণ এমনিতেই স্কুল অনেকটা দূরত্ব অবস্থিত, তারপরে যদি পড়াশুনা না করে তারা তাদের বাবাদের কাজে সাহায্য করে তাহলে তাদের বাবাদেরও একটু কষ্ট কম হয়।

তাদের বাড়ির পাশের নদীটি মোটামুটি ভালই বড়। এই নদীর পাশে সুন্দর একটা পরিবেশ রয়েছে। তারা স্কুল থেকে ফেরার পথে এই নদীর পাড়ে বসে গল্প করে, বন্ধুরা মিলে অনেক সুন্দর ভাবে তাদের সময় গুলো পার করে। স্কুল থেকে ফিরে তারা যখন বাড়িতে আসে, খাওয়া-দাওয়া করে পুনরায় আবার খেলাধুলা করতে বেরিয়ে পড়ে। একটা সুন্দর লাইফই তাদের কাটছিল। শীতের সময়টাতে নদীতে বেশি জল না থাকায় খুব ভালোভাবেই নৌকায় করে তারা নদী পার হয়ে স্কুলে যেতে পারে। কিন্তু বর্ষার সময়টাতে একটু সমস্যা হয়ে যায় কারণ নদী তখন উত্তাল থাকে স্রোতের কারণে এই সময়টাতে। এখানে যেহেতু খুব বড় নৌকা ব্যবহার করা হয় না তাই কিছুটা রিক্স থেকেই যায় প্রতিদিন নদী পারাপার করার সময়।

একবার এক বর্ষার দিনে দুই বন্ধু স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। সেদিন নদীর অবস্থা খুব বেশি ভাল ছিল না, স্রোতের ধারা একটু বেশিই ছিল। সেই জন্য নৌকার মাঝি নৌকা ঘাটেই রেখেছিল, কোথাও যাচ্ছিল না। তবে অনেক লোকজন ঘাটে জড় হওয়া দেখে এবং প্রত্যেকেরই জরুরী কাজ থাকার কারণে নৌকার মাঝি নৌকায় করে সবাইকে পারাপার করতে চাই। এই নৌকায় পারাপার করার সময় এই নৌকায় রাজু এবং শান্তও ছিল। মাঝ নদীতে নৌকা নিয়ে যাওয়ার পর স্রোতের ধারায় হঠাৎ করে নৌকা ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে। এই সময় নৌকা ডুবে না গেলও এতটা ব্যালেন্স হারিয়ে যায় যে, কয়েকজন নদীর ওই স্রোতের মধ্যে পড়ে যায়। এই স্রোতের মধ্যে রাজুও পড়ে যায়। তখন চোখের সামনে শান্ত দেখে যে, তার বন্ধু জলে ভেসে যাচ্ছে। এই দেখে সে নৌকা থেকে ঝাঁপ দেয় তার বন্ধুকে বাঁচানোর জন্য।

এরকম দৃশ্য সবাইকে অবাক করে তোলে। দু'জনেই গ্রামের ছেলে ছিল তাই সাঁতার জানতো। তবে এই স্রোতের মধ্যে সাঁতার জানলেও কূলে ফেরা অনেকটাই মুশকিল কাজ ছিল। এই সময় দুই বন্ধু সাঁতার কেটে একজন আরেকজন এর হাত ধরে নেয়। তারা স্রোতের বিপরীতে অনেকটা কষ্ট করে সামলে নিচ্ছিল নিজেদের। এই সময় নৌকার মাঝি এবং আশেপাশের কিছু লোক সাহায্য করে তাদের নৌকায় তুলে নেয়। অনেকটা বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে তখন যায় তখন দুই বন্ধু। নিজের কথা না ভেবে এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে বাঁচাতে যে এরকম স্রোতের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সেই দৃশ্য এই যুগে দেখার সুযোগ হয় না তেমন। তাদের এই বন্ধুত্ব দেখে সবাই বেশ অবাক হয়। বন্ধুর জন্য বন্ধু যে কতটা সাহসী হতে পারে এই বয়সে, সেটা সবার ভিতর একটা শিক্ষা প্রদান করে এই ঘটনায়। তাদের বন্ধুত্বের গল্প ছড়িয়ে যায় চারিদিকে এই ঘটনাটা ঘটার পর ।


পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীক্রিয়েটিভ রাইটিং (গল্প)
লোকেশনবারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল।
বন্ধুরা, আমার আজকে শেয়ার করা এই গল্পটি তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিও । সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে






আমার পরিচয়

IMG_20220728_164437.jpg

আমি সুবীর বিশ্বাস( রঙিন)। কলকাতার বারাসাতে আমি বসবাস করি। আমি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিস এন্ড ফিসারিস সাবজেক্ট নিয়ে। বর্তমানে আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যানরত আছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু শান্ত স্বভাবের । চুপচাপ থাকতেই বেশি ভালোবাসি আমি। নতুন নতুন জিনিস শিখতে আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আর্ট করা, ফটোগ্রাফি করা, রেসিপি করা , গল্প লেখা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি স্টিমিটকে অনেক ভালোবাসি এবং সব সময় স্টিমিটে কাজ করতে চাই।

🌷🌷 সমাপ্ত 🌷🌷

Comments

Sort byBest