স্বরচিত কবিতা- শৈত্যকথা ; কলমওয়ালা- নীলম সামন্ত
10 comments
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
বেশ কিছুদিন হল, আপনাদের সাথে কোন কবিতা শেয়ার করিনি। অথচ কবিতাই আমার প্রিয়। শীতের মরসুমে সব থেকে ভালো যেটা লাগে তা হল কবিতা লেখা৷ এই সময়ের মিষ্টি রোদ আর নানান ফুল যেন নতুন নতুন শব্দ তৈরি করে। সকালের কুয়াশাজড়ানো ছবি, আপনারাই তো কত কত পোস্ট করেন। সেই সব দেখে লিখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সব সময় লেখা হয় না৷ তাও চেষ্টা করি।
জানেন তো বর্ষা যেমন প্রেম বয়ে আনে, মানে প্রেমের ঋতু, শীত তেমনি পাতাঝরার মরসুম। জীবনের আত্মিক পরিচয় ঘটায়। সেখানে প্রেম অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা রাখে৷ কিন্তু একটি ছেলের সাথে একটি মেয়ের যে প্রেমের সম্পর্ক তা অনেক ক্ষুদ্র জিনিস। প্রেমের অর্থ এর থেকে অনেক অনেক বেশি বৃহৎ। সেখানে জীবনের পাঠ থাকে। নিজেকে চেনার সুযোগ থাকে৷ শীতের পাতাঝরার পাশাপাশি নানান রঙ আছে, কত ফুল হয়, কুয়াশার রঙ, বরফের রঙ সব মিলিয়ে জীবনের অনেক দিক উঠে আসে। এইগুলো উপলব্ধি করাই হল শীতযাপনের মূল উদ্দেশ্য।
আবার দেখুন এই সময় আমন ধান ওঠার কারণে নবান্ন হয়। যেখানে আমরা বলি দুর্গাপূজা বড় উৎসব যেখানে এই নবান্ন দেখুন সাধারণ মানুষের পেট ভরানোর উৎসব। কাকে বড় বলব কাকে ছোট। পেটের চাহিদা না মিটলে সংসারে অন্য কোন প্রাথমিক চাহিদা জন্ম হয় বলে জানা নেই৷
এই প্রাণের প্রিয় শীতকাল পার করতে করতে একটি কবিতার সিরিজ লিখতে শুরু করেছি। তার দুটি কবিতা আপনাদের জন্য রাখলাম।
শৈত্যকথা সিরিজ
মার্কারি ভেপারের আলো নিভিয়ে যাবার পর ঝুপ করে সকাল নেমে পড়ে, দেখতে দেখতে শহরের ঘুম ভাঙে, ব্যস্ততা বাড়ে। যত্নশীল মানুষরা বাড়তি আলো নিভিয়ে দেয়৷ ঠিক যেভাবে আমরাও অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ধুলো জমতে দিই, তারপর বাতিল ভেবে বাক্সবন্দি করি৷
কত কিই শিখি, শিখতে শিখতে মল্লিকার গর্ভে জন্ম দিই এ বছরের সব চাইতে নরম শীত-সকাল।
এই কবিতাকে বলা হয় গদ্য কবিতা। এর লাইন কবিতার মতো ভাঙা হয় না৷ টানা গদ্যের মতো লেখা হলেও ব্যকরণগত দিক দিয়ে একে কবিতাই বলা হয়। ২০০০ সালের দিকে উত্তর আধুনিক লেখার হাত ধরে এই প্যাটার্নের আধিক্য আমরা বেশি মাত্রায় দেখি।
বাঁক কঠিন হলে গতি কমিয়ে দিতে হয়—
এই নিয়ম অনুযায়ী যে ক'টা আস্তরণ জমা হয়েছে,
তার ওপর বক্তব্য হাল্কা করে
কলম ঝুঁকিয়েছি ইচ্ছের দিকে—
ইচ্ছে— অনেকটাই বাজারের মতো
আমদানি, রপ্তানিতে মশগুল
এই যেমন শীতকাল আগত হলেই চাদর কিনতে মন চায়
সে আমি যে প্রান্তেই থাকি না কেন
আবার খালি হাতে ফিরে আসার পর
কোন এক রাতে ফ্যানের তলায় শুয়ে ভাবি
বড্ড তাড়াতাড়ি চলে এলাম,
আরও কিছুক্ষণ থাকলে
দার্জিলিং বা মানালীর একটি অচেনা গ্রাম আমার হতে পারত
সেখানে শাল আর শৈত্যের দস্যুপনায়
নতুন কোন নদীর নামকরণ হত,
ঝিলমের দোসর
কিংবা তিস্তার সতীন...
এই কবিতাটির প্যাটার্ন দেখুন এখানে কোন পূর্ণচ্ছেদ নেই। এটা ভুলবশত আমি দিইনি তা নয়। আসলে পুরোপুরি ছেদ ফেলার মতো কথার শেষ টানিনি। তাই লাইন ভেঙে লিখেছি যাতে পড়তে বুঝতে সুবিধে হয়, আর কথাগুলো টেনে রাখতে পারে, যেন আরও কোন কথা বা লাইন জন্মাবে৷
আজ আপনাদের সিরিজের দুটো কবিতা দিলাম৷ পরে আবার দেব। কবিতার প্রাণ বড্ড নরম তাই অনেক যত্ন নিয়ে লিখতে হয়। আমি তো কবি না। শুধু চেষ্টা করি। ভুল ত্রুটি থেকেই যাই৷ তাও চেষ্টা করি। কারণ বেঁচে থাকার বিশেষ আলোই যে কবিতা৷
আজ এ পর্যন্তই থাক। আবার আগামীকাল আসব৷ অন্য কিছু নিয়ে। আপনারা ভালো থাকুন ততক্ষণ।
টা টা
পোস্টের ধরণ | ক্রিয়েটিভ রাইটিং |
---|---|
কলমওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Comments