কাউকে কখনো ছোট করে দেখতে নেই।
22 comments
আপনি যদি কখনো মনে করেন চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা আপনার থেকে ছোট। তাহলে আপনি অহংকারী।
যদি আপনি কোন আর্থিকভাবে কম অবস্থাপন্ন মানুষ বা গরিব মানুষকে দেখে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন, তাহলে আপনি টাকার গরমে অমানুষে রুপান্তরিত হয়েছেন।
যদি কোন শ্যাম বর্ণের কাউকে দেখে নাক সিঁটকান তাহলে আপনি চোখে রঙিন চশমা পরে আছেন। যে চশমা হয়তো খুব তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে যাবে।
একটা হাতের সবগুলো আঙ্গুল সমান হয় না, কিন্তু প্রতিটি আঙ্গুল বিভিন্ন কাজের জন্য সৃষ্টিকর্তা নিপুণ হাতে তৈরি করেছেন। আবার একটি আঙ্গুল ছাড়া আপনার হাত অসম্পূর্ণ। কিন্তু আপনার মনে কি এই প্রশ্নটা আসে? কেন হাতের আঙুলগুলো সমান নয় ? যদি আপনি এটা চিন্তা করেন, তাহলে জেনে রাখুন হাতের আঙ্গুল সমান না বলেই আপনি হাত দিয়ে ঠিকমতো কাজ করতে পারেন।
এখন আমার প্রশ্নটা হচ্ছে তাহলে মানুষের ক্ষেত্রে কেন আপনি এতো সমান সমান খুঁজতে যান?
একটা মানুষের টাকা কম থাকতেই পারে, তাই বলে কি আপনি তাকে ছোট করে দেখবেন?
মনে রাখুন আপনার থেকে তার টাকা কম রয়েছে তাই সে আপনার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে এসেছে। যদি তার ঠিক আপনার সমান টাকা থাকতো তাহলে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানে কাজ করানোর মতো লোক খুঁজে পেতেন না।
সমাজে বিভিন্ন জাতি ধর্মের মানুষ রয়েছে। সুইপার নিশ্চয়ই সবাই চেনেন, যারা বিভিন্ন রকম ময়লা পরিষ্কার করে থাকে। এখন কল্পনা করুন যদি এই জাতিটা না থাকতো তাহলে আপনার ময়লা কে পরিষ্কার করতো? ঠিক এমনি করে সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি জাতি নিশ্চয়ই কোন না কোন কাজের জন্য তৈরি করেছেন।
একজন শ্যামা মেয়েকে দেখে নাক সিঁটকালেন, দেখা গেল পার্লারে সেই মেয়েটাই আপনার রুপের পরিচর্যা করে আপনাকে আরো পরিপাটি সুন্দর করে তুলছে। অথচ তার রুপের খবর রাখার কোন সময় নেই। একটু খবর নিয়ে দেখুন এই মানুষটি কারো ঘরের রাজকন্যা এবং সেই বাড়িটা আলোকিত করে রেখেছে। আসলে চেহারার উজ্জলতা নয় মনের উজ্জ্বলতায় সে ভরিয়ে রেখেছে তার ভুবন। আর আপনার মেকি উজ্জ্বলতা হয়তো আপনি টাকা দিয়ে বানিয়ে নিয়েছেন। এবার বলুন তো কার রুপ সত্যিকারের সুন্দর?
একটা পরিবারের তিনটি ভাই।
বড়ভাই নিজে খুব বেশিদূর লিখাপড়া না করে সংসারের হাল ধরেন বাবার সাথে, মেঝো মোটামুটি লেখাপড়া করে ছোট খাটো কাজ করে। তার সংসার পরিচালনা করছে, আর ছোট জন সবার সহযোগিতায় বেশ পড়াশোনা করে নামিদামি লোক হয়ে উঠেছে। ভালো লেখাপড়া করার কারণে তার বেশ ভালো চাকরি হয়ে গেছে। তবে বেচারার এখন ভাবে আর মাটিতে পা পরে না। মজার ব্যাপার হলো বড় ভাইকে এখন মূর্খ বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে খারাপ লাগে না।
যে বড়ভাই তার জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে তাকে গড়ে তুলেছে আজ তার মুখ থেকে কথাগুলো শুনে মুচকি হেসে উড়িয়ে দেয়। কিছুটা আর্থিক সহায়তার জন্য ছোট ভাইকে বলার পর সে যদি দিতে অস্বীকৃতি জানায় তখন কাহিনীটি আপনাদের কেমন লাগবে?
সৃষ্টিকর্তার খেল বোঝা দায়, হয়তো আজ তুমি বড্ড বড়লোক, কাল কিন্তু ফকির বনে যেতে পারে।
আরো একটা ব্যাপার সৃষ্টিকর্তা হয়তো সেই গরিব ভাইয়ের উসিলায় ছোট ভাইটার আর্থিক সক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
তাই বলবো কখনো কাউকে ছোট করে দেখবেন না। মানুষকে সম্মান দিন এবং ভালোবাসুন, দেখবেন আপনি সৃষ্টিকর্তার পছন্দের মানুষ হয়ে উঠেছেন।
আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।
Comments