বিদেশে থাকা মানেই সুখ না!
4 comments
বয়স চল্লিশ বছর। ওমানে আছেন বছর তিনেক এর উপর। একটা কোম্পানিতে চাকুরি করেন। বিগত ১ বছর আগে ধরা পড়েছে ডায়াবেটিস রোগটা। ওষুধ দিয়েছেন ডাক্তারে, বেশ দামী ওষুধ। কারণ ওনার রক্তের সুগার অনেক বেশী থাকে সবসময়। সাথে দিয়েছে চর্বি কমানোর ওষুধও। দাম বেশী হবার কারণে গত ১ মাস যাবত কোন ওষুধ খেতে পারেন নাই। কোম্পানির ক্লিনিকে সুগার চেক করে অনেক বেশী পাওয়া যাওয়ায় আমাদের কাছে পাঠিয়েছে ফিটনেস সার্টিফিকেট এর জন্যে। উনার বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরিক্ষা করার দরকার ছিল। বেশী কিছু করতে পারলেন না টাকা নাই বলে। শুধু রক্তের সুগার চেক করলেন। অনেক বেশী আসলো খালি পেটের টেস্টেই! কম দামি কিছু ওষুধ দিয়ে বিদায় দিলাম। নিশ্চিত না ঐ ওষুধেই উনার ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে আসবে কিন না!
বয়স ৩৬ বছর। বাতের রুগী। নিয়মিত বাতের ওষুধ খান। আজ সকালে কাজের সময় একটা তীব্র গতিতে ছুটে আসা মেটালিক কিছুতে মাথা কেটে যায়। উনার স্পন্সর আমাদের ক্লিনিকের সামনে উনাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে। চিকিৎসাবাবদ একটা টাকাও দিবে না, সব খরচ রুগীকে নিজেকেই বহন করতে হবে। নামকাওয়াস্তে একটা ইনসুরেন্স খুলে দিয়েছে যেটা কার্যত কোন কাজেরই না। খরচ বেশি হবে এই ভয়ে রুগী সেলাই দিতে চাচ্ছিলেন না কাটা জায়গায়। সৌভাগ্যবশতঃ সেলাই ছাড়াই ব্যবস্থাপনা করা গেছে উনার! কম খরচেই বিদায় করা গেল উনাকে! সেলাই দিতে গেলে বেশ খরচ হয়ে যেত।
৪৭ বছর বয়স্ক রুগী। দীর্ঘদিন বিদেশ করছেন। আগে ছিলেন সৌদি আরবে, এখন আছেন ওমান। সৌদি থাকা অবস্থা কোন এক দুর্ঘটনার প্রেক্ষিত উনার একটা কিডনি বিকল হয়ে যায়। অনেক আগের ঘটনা, যখন উনার বয়স ছিল ২০-৩০ এর মধ্যে। উনার ভাষ্যমতে, বাবা-মার সুখের জন্যে অনেক পরিশ্রম করেছেন উনি! এরই মধ্যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধরা পড়ে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল! আজ আমার কাছে এসেছেন শ্বাসকষ্ট নিয়ে। একটু দ্রুত হাটলে বা জোরে জোরে কাজ করলেই শ্বাস টান উঠে যায়। পরীক্ষার করে পাওয়া গেল অনেক বেশী প্রেশার। বুকে নল লাগিয়ে যা পাওয়া গেল তা হাপানীর তুলনায় হার্টের সমস্যা বলেই মনে হলো। একজন কার্ডিওলজিস্ট দেখানোর পরামর্শ দিয়ে এবং প্রাথমিক কিছু ওষুধ দিয়ে বিদায় দিলাম।
আমাদের অনেকের আত্মীয়-স্বজনই বিদেশে কাজ করেন; কারও বাবা, কারও স্বামী, কারও ছেলে! “বাবা বিদেশ থাকে” এই ভাবনায় অনেক ছেলেরা ধরাকে সরা জ্ঞান করে না। তারা জানে না, তাদের বাবা কি ধরণের জীবন পার করছেন বিদেশের মাটিতে! অনেক স্ত্রীই বুঝতে চাননা তাদের স্বামীরা টাকা পাঠাতে গিয়ে নিজের জীবনটাই শেষ করে দিচ্ছেন দিনের পর দিন!
বিদেশ মানেই সুখ না
আজকে এ পর্যন্তই। কেমন লাগলো আজকে লেখাটি তা অবশ্যই জানাবেন কমেন্টের মাধ্যমে। ভাল থাকুন সবাই।
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা নিরন্তর
ডা হাফিজ
Discord: hafiz34#3722
ওমান
২০ই নভেম্বর, ২০২৪
নমিনেশন চালু রাখতে অবশ্য করনীয় কাজের প্রুফঃ
Comments