New to Nutbox?

পুরুষ মানুষ কখনো হার মানে না।।

7 comments

titash
62
13 days ago5 min read


সালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ

পুরুষ মানুষ কখনো হার মানে না। প্রত্যেকটি পুরুষ একেকজন যোদ্ধা। তারা কোন পরিস্থিতিতেই মাথা নত করে না। তারা পরিবারের জন্য, সন্তানের জন্য সব সময় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে। তারা নিজে না খেয়ে পরিবারের মুখে আহার তুলে দিতে চেষ্টা করে। আজকে হারনা মনা এক বজলু চাচার জীবনের কিছু কথা শেয়ার করতে যাচ্ছি।

পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের জন্য আমার হাজবেন্ডের অফিস বন্ধ ছিল। যার ফলে আমরা বিকালবেলা একটি পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আপনারা সবাই জানেন যে রমজানের ঈদের পর থেকে বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার তাপমাত্রা কতটা গরম ছিল। কত মানুষ এই গরমে হিট স্ট্রোক করে মারা গেছে। কিন্তু কিছু মানুষের কাছে এই গরম কিছুই না। এ গরম কিছু মানুষদেরকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখতে পারে নাই। আমরা বাসা থেকে বের হয়ে রাসেল পার্কে যাওয়ার জন্য একটি রিক্সা নিলাম। আমরা রিকশাতে উঠে কিছুদূর যাওয়ার পরেই লক্ষ্য করলাম যিনি রিকশা চালাচ্ছেন, তিনি শরীরের কাপড়টি ঘামে ভিজে আছে। আমাদের আর বুঝতে বাকি রইল না তিনির শরীরের কাপড়টি কেন ভিজে আছে।

আমার হাজব্যান্ড চাচাকে জিজ্ঞেস করলো তার নাম কি। তিনি বললেন তার নাম মোঃ বজলুর রহমান। তারপরে ধীরে ধীরে তিনির বিষয়ে আমরা অনেক কিছু জানলাম। তিনির বাড়ি ফেনী জেলাতে। তিনি যেই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেই গ্রামের নামটিও বলেছিল, কিন্তু আমার এই মুহূর্তে তিনির গ্রামের নামটি স্মরণ নেই। তিনি যখন ক্লাস ফোরে পড়েন তখন তিনির বাবা মারা যান। তারপরে তিনি ফেনীর এক এতিমখানাতে বড় হতে থাকেন। এতিম খানাতে দুই বছর থাকার পরে তার কাছে বন্দী জীবন বিরক্ত মনে হতে লাগলো। তারপর তিনি সেখান থেকে বরিশালে চলে যান। সেখানে এক চায়ের দোকানে কাজ নেন। সেখানেই তিনি শৈশব পার করেন। ১৬ বছর বয়সে বরিশালের এক লঞ্চে চড়ে ঢাকার সদর ঘাটে অবতরণ করেন।

photo_3_2024-05-07_2

ঢাকায় আসার পর কোন কাজ না পেয়ে ভাড়ায় চালিত রিকশা চালানো শুরু করলেন। ২২ বছর বয়সে তিনি এক গার্মেন্টস কর্মী কে বিয়ে করেন। বিয়ে করার পর তিনির স্ত্রীর মাধ্যমে তিনি একটি গার্মেন্টসে ক্লিনারের কাজে জয়েন করেন। তারপর দুইজনের ইনকামে মোটামুটি ভালোই তাদের জীবন চলতে লাগলো। এভাবেই তাদের কোলে একটি কন্যা সন্তান ও একটি ছেলে সন্তান আসে। তারা খুব আদর যত্ন করে দুই সন্তানকে বড় করতে থাকেন। তারা তাদের দুই সন্তানকেই মাদ্রাসাতে পড়ানোর চেষ্টা করেন। মেয়েটিকে মোটামুটি মাদ্রাসায় পড়িয়ে পাত্রস্থ করেন। কিন্তু ছেলেটির লেখাপড়া করে নাই। ছেলেটি পড়াশোনা বাদ দিয়ে কখনো সিএনজি চালাই, কখনো অটো রিক্সা চালায়, আবার কখনো কখনো বাস গাড়ির হেলপারি করে। এভাবেই ছেলেটি বড় হয়ে একদিন বিয়ে করলো। বিয়ের পরে বউ নিয়ে আলাদা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করে। দেখতে দেখতে ছেলের ঘরেও এক কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। ছেলেটি বিয়ের পর থেকে বাবা মার সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখে নাই।

করুনার সময় শ্রমিক ছাটাই করতে গিয়ে বজলু চাচা চাকরি হারান। চাকরি হারিয়ে তিনি কিস্তিতে একটি অটোরিকশা কিনেন। অটোরিক্সা চালিয়ে তিনি তার জীবন নির্বাহ করতে লাগলেন। একদিন রাতের বেলা কেরানীগঞ্জে যাত্রী নিয়ে যান। সেখান থেকে আসতে আসতে রাত প্রায় বারোটার উপরে বেজে যায়। রাস্তা দিয়ে আসার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে অটোরিকশাটি হারান। তারপরে বজলু মিয়া ভেঙ্গে পড়েন। অন্যদিকে তার বউ ও আর গার্মেন্টসে চাকরি করতে পারে না। মোটামুটি বয়স হওয়ার কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রমণ করেছে। এখন দৈনিক দুইজনের ২০০ টাকার উপরে ওষুধ লাগে। খাবার না খেলেও দুইজনের ওষুধ ঠিকই খেতে হয়।

photo_1_2024-05-07_2

অটো রিক্সাটি হারিয়ে বজলু চাচা ঢাকা সিটি ছেড়ে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন। এখানে এসে একটি গার্মেন্টস কোম্পানিতে ক্লিনার এর কাজ নেন। বর্তমানে গার্মেন্টসের শ্রমিকদের বেতন ১২৫০০ টাকা হলেও তিনি যে কোম্পানিতে চাকরি করেন সেখানে তাকে সাড়ে আট হাজার টাকা দেয়। ৩০ দিন ১২ ঘন্টা করে ডিউটি করলে 14 থেকে 15 হাজার টাকা পান। এরমধ্যে ঘর ভাড়া দিতে হয় সাড়ে ৪ হাজার টাকা। প্রতি মাসে দুইজনের ওষুধে খরচ হয় ৬০০০ টাকার উপরে। বাকি যে টাকা থাকে সেটা দিয়ে বর্তমান বাজারে টিকে থাকা খুবই কষ্টকর। আবার মাঝে মাঝে মেয়েকে দেখতে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে যান। সেখানে গেলে দুই তিন হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। মেয়েও আবার মাঝে মাঝে বাবার বাসায় বেড়াতে আসে। সেজন্য তিনি যেদিন অফিস বন্ধ থাকে বা অফিস থেকে আগে ছুটি দেয় সেদিন তিনি ভাড়ায় চালিত রিকশা চালান। কিছু এক্সট্রা ইনকাম করার চেষ্টা করেন।

পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের কারণে বজলু চাচার অফিস বন্ধ ছিল। যার জন্য তিনি সকাল থেকেই ভাড়ায় চালিত রিক্সা চালাচ্ছেন। তিনির জীবনের গল্প শুনতে শুনতে আমরা রাসেল পার্কের গেইটে উপস্থিত হয়ে গেলাম। ঐদিন পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ছিলো। সেই দিনকে লক্ষ্য করে অনেক জায়গায় মিছিল মিটিং সমাবেশ হয়েছে। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলন হয়েছে। অথচ এমন হাজারো বজলু চাচা যে কোম্পানিগুলোতে চাকরি করে, সেখানে শ্রমিকদের ন্যায্য মূল্য দেওয়া হয় না। যেখানে শ্রমিকদের সরকারি স্কেল ১২৫০০ টাকা সেখানে বজলু চাচাকে দেওয়া হয় মাত্র সাড়ে ৮ হাজার টাকা। আমার খুব ইচ্ছা এরকম মানুষদের জন্য কিছু একটা করার। কিন্তু আমার স্বাদ থাকলেও সাধ্য নেই।

সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ,আল্লাহ হাফেজ।।

ফটোগ্রাফির বিবরণ:

2gsjgna1uruv8X2R8t7XDv5HGXyHWCCu4rKmbB5pmEzjYSj1ATxRsaEvyH89EyziiK3D1ksn1tTDvDwLCveqrhctVcDnDqtNbsqFMtuqD1RetzrgjG.png

ডিভাইসমোবাইল
মডেলরেডমি নোট-৮
শিরোনামপুরুষ মানুষ কখনো হার মানে না।।
স্থানচাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ। ।
তারিখ০১/০৫/২০২৪
কমিউনিটিআমার বাংলা ব্লগ
ফটোগ্রাফার@titash

2gsjgna1uruv8X2R8t7XDv5HGXyHWCCu4rKmbB5pmEzjYSfQKFP87GjNCaLdCLKkYFWdxRmYuKurkfDpnYWoUUypXiwgziwKKNP24nNC65i32Am8Fp.png

আমার পরিচিতি

আমি মোছাঃ মুসলিমা আক্তার নীলা। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @titash নামে পরিচিত। আমার জন্মস্থান চট্রাগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভাদুঘর গ্রামে। আমি বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে বাংলা বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করতেছি। আমি বিবাহিত,আমার একটি কন্যা সন্তান আছে। আমি আমার হাসবেন্ডের সাথে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত নারায়নগঞ্জ জেলায় বসবার করছি। আমি আমার হাসবেন্ডের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্ম সম্পর্কে জানতে পারি। প্লাটফর্মটার বিষয়ে জেনে আমি এখানে কাজ করার আগ্রাহ প্রকাশ করি। তারপর ২০২৩ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্মে যুক্ত হয়। আমি ভ্রমন করতে,মজার মজার রেসিপ করতে,বই পড়তে, নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে ও সৃজনশীল জিনিষ তৈরী করতে ভালোবাসি। আমি বাঙ্গালী জাতি হিসাবে ও আমার বাংলা ব্লগের সদস্য হতে পেরে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করি।

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9uuNWjCEgJj5LnknUa3pWA9yop6dT9GDfEUZtz2oDgA9ocMHrCEtkFpngXowo13q8Mn1YvzEMh5bSRg1SNaKSZwbsLwb3YA.png

mCz6aUXpYgcE9hndDxJeFHNCvijWNENnxm5KqcEUM3o1siCoMX3by8iWdE4qYzWA7pZHzh4KthdoHPj2eEciPaXhHTdxhx5dKApkU8hxE3mUrybeUbtQCvbs4JC247APSjksrR6prneL2GBtrunMiz4r5CiYySVGKj1e3nT19qBCX5ekz5F.png

5QqP4NVdsPNcDeePyfoZLTLv8efTACU5P6GADTBgMgfXR7uJx5fN91AE46tFfFA7GwMq22wjUwwY5XDyUBMksyZSJGUEyK1Re6UWVZ1PqVR2ntgu73qAW8iDh6yPt8YVsiJ7enc87gmY874JVVHPQo6hSZvUs47FymTjqs43bSUF1Wvtd8T.jpg

4gZTTLyoV1msFb1u1BdB14ZHSP5sNg8hbP9cbJyTmUqfzL1as2zt5nA5iP9iEBmXtJKZZD3SHGtdFKZ13Up5EmSAxpDYtwYvvxyhsR48F5wdZ6ZhgEKtW9w1csKVawJHrqc3fgSkcpz8WsTY1MvhswZsey8zNe3vkwTdKjCivA3Z6dpaPre.png

Posted using SteemPro Mobile

Comments

Sort byBest