কিছু কথা কিছু মুহূর্ত
11 comments
নমস্কার বন্ধুরা,
আমি জানিনা কিভাবে শুরু করবো।কিভাবে সবটা গুছিয়ে বলতে পারবো !তবুও কিছু কথা আজকে আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম ।
আপনারা সকলেই জানেন গত তিনদিন আগে আমার মায়ের হঠাৎ অসুস্থতা ধরা পড়ে ।আসলে কিছু কিছু দিন মানুষের জীবনে ঠিক কেমন হয়ে আসে বোঝা যায় না ।অসুস্থ হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত সবকিছু নরমাল ছিল বা যদিও কিছুটা বোঝা গিয়েছিল তবুও সেটা আমরা একেবারে ধরতে পারিনি যে পরবর্তীতে কি বিপদ আমাদের অপেক্ষা করছে।
শনিবার সকাল থেকে মায়ের হঠাৎ করে বুকে ব্যথা ।কিছু বুঝে ওঠার আগেই কাছাকাছি একটি নার্সিংহোমে নিয়ে গেছিলাম ।কিন্তু সেখানে খুব প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট হয়েছিল।যেহেতু খুব ছোটো নার্সিংহোম তাই সেখানে ECG করাতে মায়ের আর্টারিতে ব্লকেজ ধরা পড়লো। তাই সাথে সাথে আমাদের আইএলএস হসপিটাল এর এডমিট করতে বললো।সেটা আমাদের বাড়ির খুব কাছে তাই কোনো কিছু চিন্তাভাবনা না করেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভর্তি করালাম ।
ওই সময়টা আমার মধ্যে দিয়ে কি হচ্ছিল আমি সেটা বলে বোঝাতে পারবো না ।কারণ এমনিতেই মায়ের কিছু হলে কোনো সন্তানেরই মাথার ঠিক থাকে না । যখন আমি প্রথমে নার্সিংহোমে নিয়ে গেছিলাম তখন আমি পুরোটাই একা ছিলাম। যেহেতু আমার বাবা খুব অল্পতেই ভীষণ চিন্তা করে তাই বাবাকে পুরোটাই সাইডে রেখে দিয়েছিলাম তারপর যা কাজ করার করেছিলাম কিন্তু একা যখন সবকিছু সামলাচ্ছিলাম তখন যে আমার মনের উপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে যাচ্ছিল একমাত্র আমি জানি ।
যাইহোক যখন আমরা মাকে ILS নিয়ে গেছিলাম খুব দ্রুত ওখানে চিকিৎসা করানো হয় ।যেহেতু আগের নার্সিংহোম থেকে পাঠানো হয়েছিল তাই সবকিছু তারাই রেডি করে আমাদের এখানে পাঠিয়েছিল। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্ত টেস্ট করানো হয়েছিল। ওখানে এনজিওগ্রাম করার পর জানা যায় ৯৯% মেন আর্টারিতে ব্লক রয়েছে । ডাক্তার বলেন ইমিডিয়েটলি এনজিওপ্লাস্টি করতে হবে । হঠাৎ করে এরকম শুনে খুব খারাপ লাগছিল ।কিন্তু আমরা আর অপেক্ষা না করেই দ্রুত চিকিৎসা করতে বললাম। আর তার মধ্যে আমাদের অনেকটা সময় চলে গেছিল ।যে জিনিসটা চার থেকে ছয় ঘন্টা সময় নিতে হয়, আমাদের প্রায় 24 ঘন্টার বেশি সময় কেটে গিয়েছিল। তাই আর কিছু না চিন্তা করে চিকিৎসা শুরু করতে বললাম। সাকসেসফুলি সব কিছু হল।
আর সেই সময়টা আমাদের দাদা(@rme ), ব্ল্যাকস ,দিদিভাই যেভাবে আমার পাশে ছিল আর যেভাবে প্রতি মুহূর্তে আমার খোঁজ খবর রেখেছে তার জন্য কি বলবো আমি নিজেও জানিনা ।আমি অনেকটা সাহস পেয়েছিলাম দাদার থেকে ।কারণ প্রতি মুহূর্তে দাদা আমার খবর নিয়েছে। আর ব্ল্যাকসকে কি বলবো ও তো সবসময় আমার সাথেই থেকেছে,ডাক্তারের দিকটা ওই সামলেছে। আর এই সময়টা নিজের মানুষ সাথে থাকা যে কতটা মনকে সাহস দেয়, সেটা একমাত্র তখন, যে পরিস্থিতির স্বীকার হয় সেই মানুষটাই একমাত্র জানে।
এরপর যখন মাকে দেখতে গেলাম বুঝতে পারলাম যে মা তখন মোটামুটি সবটাই জানতে পেরেছে। কারণ এনজিওপ্লাস্টির আগে মা কিছুই জানতো না যে কি হচ্ছে, কারণ আমরা কোনোভাবে মাকে চিন্তায় রাখতে চাইনি। আমরা সেদিন মাকে দেখে ডাক্তারের সাথে কথা বলে বাড়ি চলে এসেছিলাম ।
তবুও যখন ২৪ ঘন্টার অবসার্ভেশনে রাখা হয়েছিল সেই রাতটা যে কি কেটেছে ,বলতে গেলে সারারাত সেদিন ঘুমাতে পারিনি। খুব চিন্তায় ছিলাম।বাড়ি আসার পর যতবার সেদিন ফোন বেজেছিল ততবার বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠেছিল ।এর পরের দিন যখন ডাক্তারের সাথে কথা বললাম তখন কিছুটা চিন্তা মুক্ত হয়েছিলাম ।
তারপরের দিন অর্থাৎ সোমবার মাকে ঘরে নিয়ে এসেছি ।ঘরে মা আসা মানে অনেকটা শান্তি ।কিন্তু এখন মা এতটাই দুর্বল যে কিছু খেতেও পারছে না ,উঠে বসতেও পারছে না এটা দেখতে যে কি খারাপ লাগছে , আর সেটা দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে ।তবুও মন শক্ত করে মায়ের কাছে থাকছি যখন যা দরকার সমস্ত নিজের হাতে করছি ।আশা করি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে মা ।তবুও এই কটা দিন আমার মনের মধ্যে কি হয়েছে, কি চলেছে বলে বোঝাতে পারবো না ।আশা করি একটু যত্ন নিলে একটু ওষুধ পত্র ঠিক করে খেলে খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।
তবুও কিছু কথা আছে না বললেই নয় এই বিপদের সময়টাতে আমার বাংলা ব্লগের সকল জেনারেল ইউজার এবং প্রত্যেক এডমিন মডারেটর প্রতিমুহূর্তে আমার খবর রেখেছে। তাদের কাছে আমি অনেকটা কৃতজ্ঞ এবং তাদের প্রার্থনায় আমার মা সুস্থ হয়ে উঠেছে ।আর আপনাদের সকলের জন্য আমার তরফ থেকে অনেক অনেক ভালোবাসা থাকবে ।
তাছাড়াও একটা কথা খুব জরুরী সেটা হচ্ছে যে কখনো কোনো অবস্থায় আপনাদের কারো কোন সমস্যা হলে আমার মনে হয় কোনো কিছু ফেলে রাখা উচিত না । যথা শীঘ্রই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।কারণ আমি আজ এই পরিস্থিতি থেকে বুঝতে পারছি যে কোনো কিছুই নিজে থেকে ভেবে চিকিৎসা করার থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিজের চিকিৎসা করা খুব দরকার।ভালো থাকবেন সকলে ।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Comments