গল্প: বড় বোনের মায়ার স্মৃতি
5 comments
হাই বন্ধুরা!
আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।
Infinix Hot 11s
আমার এক খালাতো বড় বোন, বড় খালা খালুর একমাত্র মেয়ে "মনি" । ২০১৪ সালে মাস্টার্স কমপ্লিট করে বেড়াতে এসেছিলেন। তার আগে লাস্ট এসেছিলেন ২০০৭ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে। তবে তার মাস্টার্স পরীক্ষার শেষে প্রাকটিক্যাল বাকি ছিল। আমাদের এখানে বেড়িয়ে যাবেন, তারপরে সেখানে প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা দিবেন। আমরা যারা মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি তারা জানে পরীক্ষার এক মাস পরে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষাটা হয়। পরীক্ষা শেষে লেখাপড়া জগৎ থেকে মুক্তি পেয়ে ঘুরতে আসার ইচ্ছে ছিল নানি খালাদের বাসায়। তখন সবেমাত্র অনার্সে ভর্তি হলাম। লেখাপড়া জগত সম্পর্কে আরো নতুন জ্ঞান আহরণ। বড় বোন আমাকে অনেক অনেক বিষয়ে জানাতে থাকলেন। উনার সহযোগিতা বেশ অনেক কিছু ধারণা পেয়েছিলাম। যেহেতু গ্রামে থাকি জাতীয় অথবা বিশ্ববিদ্যালয় বা ভার্সিটির লেখাপড়া সম্পর্কে তেমন বেশি একটা ধারণা ছিল না। মূলত উনার কাছ থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছিলাম।
২০১৪ সালের উনারা এসেছিলেন,একটি মন খারাপের উপর দিয়ে। মন খারাপ ছিল আমি কোন একটা রাগারাগির কারণে তিনদিন মোবাইল বন্ধ করে রেখেছিলাম, তাদের সাথে কোন যোগাযোগ নিয়েছিলাম না। সে মনে প্রাণে আমাকে ছোট ভাই হিসেবে এতটা ভালবাসতেন যেন তিনটা দিন আমার সাথে কথা না হওয়ায় ও এদিকে ছোট খালার বিবাহ এবং তার পরীক্ষা শেষ তাই রাজশাহীতে থাকতে পারেনি। সোজাস ছুটে চলে এসেছে গাংনী মেহেরপুরে। আমার বড় খালা খালো এখানে আসবেন না, রাস্তাঘাটের ট্রাফিক জ্যাম ও হরতাল জনিত সমস্যার কারণে। কিন্তু সে আসবেন। তার জামা কাপড় সবকিছু রেডি করে নিয়ে খালা খালুকে বলেছিল পারলে আসো, না পারলে পড়ে থাকো, আমি নানি বাড়ি থেকে গেলাম। খালা খালোরা মেয়েকে ছাড়া থাকতেই পারে না। মেয়ে যখন অলরেডি তারাও রেডি। তারা এসে পৌঁছালো, ছোট খালাম্মার বিয়ের মুহূর্তে।
ছোট খালাম্মার বিয়ের বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলাম আমি। এদিকে ছোট মামা ঢাকাতে চাকরি করতেন। বিয়ের কেনাকাটা খরচ বেশ কয়েকজনের মাধ্যমে করেছিলেন। নানা বাড়িতে এই সেই বিষয়গুলো দেখাশোনা গোছগাছ করা দায়িত্ব আমার উপর ছিল। যাইহোক এভাবে ছোট খালার বিয়ের সম্পন্ন হল। এরপর বড় খালা খালু আর আপু এসে খালা আমাদের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন। এদিকে আমি আমার বাড়িতে। আমি তখন দুইটা বাটনওয়ালা মোবাইল ব্যবহার করতাম। একটা মোবাইলের দুইটা সিম আপু জানতেন,তখন পর্যন্ত মোবাইলের সিম অন করি নাই। অন্য মোবাইল চালু ছিল। জানেন দীর্ঘদিন মাছ চাষের সাথে জড়িত রয়েছে। পাশাপাশি পুকুর পাড়ে সবজি চাষ। তখনো আমার পুকুর পাড়ে অনেক শাকসবজি ছিল। তাই তিনটা দিন মোবাইলের দিকে খেয়াল করা হয়নি। ছোট খালাম্মার বিয়ের দিন আসলো। এদিকে আপু নানী বাড়িতে এসেছে, বাড়ির কাজ সেরে নানি বাড়িতে আমি বিভিন্ন ব্যস্ততায় রয়ে গেছি। আপুর সাথে কথা হয়নি। সে রাজশাহী থেকে ছুটে এসেছে ভাইয়ার মন খারাপ এমনটা ভেবে। কিন্তু সে এসে দেখে আমি খালাম্মার বিয়ে উপলক্ষে আমার কাজেই ব্যস্ত। আপুর সাথে সেভাবে কথা বলা হয়নি। সে নাকি ইতোমধ্যে কয়েকবার কান্না করেছে মন খারাপ করে। পরবর্তীতে হঠাৎ নানির বাড়ির দুই গেটের প্রধান গেটের পাশে আমার সামনে উপস্থিত হল। তখন হঠাৎ বলে বসলো তোর এত দাম বেড়ে গেছে কেন। বোনটার উপর কোন মায়া নেই আর। এতটা পথ ছুটে এসেছি মুখ দিয়ে একটা কথা বের হচ্ছে না। আমি তখন বলেছিলাম আপু আপনার সাথে পরে কথা বলছি ব্যস্ত আছে দেখছেন।
আপু যে মন খারাপ করছে কষ্ট পাচ্ছে এটা আমি বোঝার মত সময় পাচ্ছিলাম না ব্যস্ততায়। সে কষ্ট পেয়ে নানী বাড়ি থেকে ছোট নানী বাড়িতে টিভি দেখতে চলে যায়। দীর্ঘক্ষণ আপুর দেখা না পেয়ে হঠাৎ আমার মনে পরল নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছে। এতটা দূর পথ নানী বাড়িতে ছুটে এসেছে আর আমি সামান্য একটু সময় দিচ্ছি না কথা বলছি না ঠিকভাবে,এটা আমার ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু কি করবো বিয়ে বাড়ি বলে কথা অনেক দায়িত্ব মাথার উপর। যাই হোক ছোট খালা আম্মাল বিয়ে হয়ে গেল। তারা শ্বশুর বাড়িতে চলে যায়। আমিও বাড়িতে চলে আসলাম। মোবাইলে সিম অন করলাম। তারপর আপুকে বুঝিয়ে বললাম। কিন্তু সে কিছুতেই আমার কথা বুঝতে ছিল না। শুধু একটা কথাই বলেছিলেন, আমি তোদের সকলের টানে এতদূর পথ ছুটে এসেছি নানি বাড়িতে। আর তুই আমার সাথে কথাই বলছিস না ঠিকভাবে। আমার মনের টানটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে। তখন আমি বুঝেছিলাম ভালোবাসা কাকে বলে। আমি লক্ষ্য করে দেখেছি সে শুধু এতটুকুই চেয়েছিল যে তার কোন ভাই বোন নেই,আমাদের খালাতো সাতটা ভাইয়ের মধ্যে সে আমাকে বেশি ভালোবাসে। এইজন্য আমার প্রতি তার অধিকার বেশি। আমি যখন দুই তিন বছরের ছোট ছিলাম তখন থেকে অনেকবার চেষ্টা করেছিল আমাকে নিয়ে যাওয়ার। কোন কারনে আমার খালাম্মার কোন বাবু হবেনা আর। পরবর্তীতে হয়নি। তাই আমাকে তাদের ছেলে হিসেবে পাওয়ার বারবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি আমার নামটাও বড় খেলা রেখেছিল।
এই দিনের পর থেকে আমি বুঝতে শিখলাম আপু আমাকে অনেক অনেক ভালোবাসেন। তাই ছোট ভাই হয়ে আমি তার পাশে থাকবো। বিভিন্ন কারণে-অকারণে যখন তার পরিবার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম,তখন থেকে আপুর সাথে সুন্দর মিল মহব্বত রেখে চলার চেষ্টা করছিলাম। এরপর ছোট খালাম্মাকে আনতে যেতে হবে। আমি নানির বাড়িতে উপস্থিত হলাম। তখন আপুর সাথে কথা হল। বিস্তারিত সে আমাকে খুলে বলল। তখন আমি আপুর কাছে মাফ চেয়ে নিয়েছিলাম। তিনি আমার জন্য অনেক কিছু কিনে এনেছিলেন। খাবার জাতীয় ভালো লাগার অনেক কিছু তৈরি করে এনেছিলেন এবং সিএসডি ও ক্যান্টিন থেকে কিনে এনেছিলেন। আসলে আমি এভাবে কখনো বুঝি নাই উনি আমাকে মন থেকে এত বেশি ভালোবাসেন এবং আমার প্রতি মায়া। তবে আপুকে আমি একটা কথা বলার আগে আপু বুঝে নিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন। তা হচ্ছে, আমি কথা কাটাকাটি পছন্দ করি না, ঝগড়া বিবাদ পছন্দ করি না, বাড়তি কথা বলা পছন্দ করি না। নিরিবিরি মন মানসিকতা বেশি পছন্দ করি। আপুকে প্রশ্ন করেছিলাম আমার অনুভূতি গুলা তিনি বুঝলেন কিভাবে। তিনি বলেছিলেন আমি তোর চেয়ে বড়। মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে ধারনা আছেন। তাই সে আমার বিষয়ে অনেক কিছু ধারণা করে নিয়েছিল। আসলে তারপর থেকে আমি ভেবে দেখেছি সত্যি তো! একটু কোথাও কথা কাটাকাটি হলে, মন মেজাজ খারাপি হয়ে গেলে, সেখান থেকে আমি অনেকটা দূরে সরে যাই বা থেমে যায়। তারপরে অনেকবার চেষ্টা করেছি কোন কারণে যেন মন খারাপ করে মোবাইল অফ করে থেমে না থাকি। আর আমি বুঝেছিলাম মেয়েদের সাথে মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে কথা বলার চেয়ে সরাসরি কথা বলা বেটার। কারণ এক কথা বললে তারা আর একটা বোঝে। সুন্দর মিল মহব্বত এর মধ্য দিয়ে বেশ কিছু বছর পার করলাম কিন্তু শেষমেষ সারা জীবনের জন্য দুইজন দুদিকে হয়ে যাব এটা কখনো ভাবিনি। তবে আজ বড় বোনের সেই আদর্শ কথা আমি স্মরণ করে। যিনি আমাকে প্রথম সঠিক পথ দেখিয়েছিলেন এবং মানুষের মত মানুষ হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছিলেন।
গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফি | প্রাকৃতিক পরিবেশ |
---|---|
বিষয় | অতীত ঘটনা |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s |
Photo editing | PicsArt app |
ঘটনার লোকেশন | জুগীরগোফা |
ব্লগার | Sumon |
ঠিকানা | গাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ |
Comments