রক্তযোদ্ধা
16 comments
মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় থেকেই দেখেছি, যারা প্রতিনিয়ত স্বেচ্ছায় রক্ত দেয়, তাদের কাছে রক্ত দান করা এক প্রকার নেশা। এই মানব সেবামূলক নেশা এতটাই গভীর ও তীব্র যে, যা বলে বোঝানো যাবে না।
যদিও সবার মাঝে এই নেশা জাগ্রত হয় না, তবে যারা এই কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে স্বেচ্ছায় জড়িত, তাদেরকে কখনো এ কাজ থেকে নিরুৎসাহিত করা যায় না বরং তাদের কার্যক্রম দেখে, অন্য অনেক মানুষরাই উৎসাহ পায়।
এক কথায় বলতে গেলে, এ মানুষগুলোর সম্মান আমার চোখে অনেক ঊর্ধ্বে। যারা মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এরকম কাজে জড়িত, তাদের জন্য অন্তরের অন্তস্থল থেকে শুভেচ্ছা জানাই প্রতিনিয়ত।
সেবার সম্ভবত আমরা দ্বিতীয় কি তৃতীয় বর্ষে পড়ি। যেহেতু পঞ্চমতলা থেকে অষ্টমতলা পর্যন্ত কলেজ একাডেমি আর নিচে হসপিটাল, তাই দেখা যায় অনেক সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা থাকে,তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বহিরাগত লোকজন উপরে চলে আসে।
কমিউনিটি মেডিসিন ক্লাস চলছিল, বেশ কঠিন সাবজেক্ট। লেকচারার মশাই তার নিজের গতিতে লেকচার দিয়ে যাচ্ছে, পুরো ক্লাসরুম যেন নীরব নিস্তব্ধ, হঠাৎই দরজার সামনে এক মাস বয়সী ছেলের আগমন। সবার নজর তখন সেদিকে, এমনকি স্যারের নজরো।
মাছ বয়সী ছেলেটা এবার খুব আকুতি-মিনতি করে বলেই ফেলল, নিচে তার মা হসপিটালে ভর্তি আছে। খানিকবাদেই ডেলিভারি হবে, তবে এখনো একব্যাগ বি নেগেটিভ রক্ত সংগ্রহ হয়নি। তাছাড়া ব্লাড ব্যাংকে এই গ্রুপের রক্ত নেই। তাই বাধ্য হয়ে উপরে চলে এসেছি, কি করব বুঝতে পারছি না।
পড়াশোনা তে আমাদের সবার থেকে মনি অনেক পিছিয়ে। ওর আসলে মেডিকেলের এত গুরুত্বপূর্ণ পড়াশোনা মাথায় ঢোকে না বললেই চলে। অনেকটা বাবা-মার মন রক্ষার্থেই এই প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে।
এমনিতেই রোজার মাস চলছিল, তার ভিতরে ভোররাত পর্যন্ত ও যে ঠিকমত ঘুমায়নি, তা যেন মনির চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। ও মূলত লেকচার গ্যালারি রুমের পিছনে বসে নিজের মতো করে ঘুমোচ্ছিল, হঠাৎই যখন এমন খবর কানে ঢুকেছে ওর , তখন মুহূর্তেই দাঁড়িয়ে বলল স্যার আমি তাহলে যাই, রক্ত এক ব্যাগ দিয়ে আসি।
মনির এমন কর্ম দেখে সবাই হতবাক হয়েছিল, কেননা নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত সহজে কেউ কাউকে দিতে চায় না। তার ভিতরে, ও নিজেও রোজা ছিল। তবে ছেলেটার আকুতি-মিনতি ওর মন গলিয়ে দিয়েছিল। এরপর স্যারের অনুমতি নিয়ে মনি চলে গিয়েছিল ছেলেটার সঙ্গে।
অবশেষে ক্লাস শেষে যখন আমরা নিচে গিয়েছিলাম, তখন জানতে পারলাম সেই ছেলেটার নতুন ভাই হয়েছে, তার মা সুস্থ আছে এবং এদিকে মনি দিব্যি রক্ত দান করে বিশ্রাম নিচ্ছে। মনিকে স্যালুট জানাই অন্তর থেকে, তবে মনির মত যারা এমন মহৎ কর্মের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাদের জন্য ভালোবাসা নিরন্তর।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Comments