New to Nutbox?

SBD recovery case #1 : beneficiary rme [round 39]

5 comments

sbd-recovery
73
11 days agoSteemit3 min read

This post is made for recovering lost SBD : 1470

Recovered so far : 1346.928 SBD


গল্প (রক্ত তৃষা) - পর্ব ৩৭


vampire-2115396_1280.jpg
Copyright Free Image Source : PixaBay


কমলাদেবীর দুই হাত পিছমোড়া করে বাঁধা, দুই পায়ের গোছও এক করে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখা, বিন্দুমাত্র নড়বার ক্ষমতা নেই তাঁর । মুখে কাপড় দিয়ে শক্ত করে বাঁধা । কী ঘটতে যাচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারছেন কমলাদেবী, কিন্তু তাঁর যে কিছুই করার ক্ষমতা নেই । শুধু বিস্ফারিত দুই চোখ মেলে তাকিয়ে থাকা ছাড়া ।

এতক্ষণে দ্বিতীয় যমদূতটি খাঁড়া হাতে এসে পড়লো । বলি দেওয়ার খাঁড়াটি যেমন দীর্ঘ তেমনই ভারী । একটু আগে তাতে শান দিয়ে ধার তোলা হয়েছে । মশালের আলো পড়ে খড়গের ধারালো প্রান্ত মাঝে মধ্যে ঝিলিক মারছে । সেই শানিত খড়গের ভয়াল রূপ প্রত্যক্ষ করে শিউরে উঠলেন কমলাদেবী । তাঁর ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা ভেবে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললেন ।

কাপালিক খাঁড়া হাতে দাঁড়ানো যমদূতটার কপালে সিঁদুর পরিয়ে দিলো কাঁপা হাতে । তারপরে রক্ত জবার মালাটিও গলায় পরালো । সব শেষে খাঁড়াটির গায়ে সিঁদুর দিয়ে একটা চোখ এঁকে দিলো । তারপরে খাঁড়ার মাথার যাকে সিঁদুরের টিপ পরিয়ে অনুচ্চস্বরে সংস্কৃত মন্ত্র আওড়ালো কিছুক্ষণ । বলি দেওয়ার আগে খাঁড়ার পুজো করতে হয়, সেটিই করলো এতক্ষন ধরে কাপালিক । ব্যাস, বলির জন্য খাঁড়া এখন প্রস্তুত ।

যমদূতটি খাঁড়া কাঁধে করে হাঁড়িকাঠের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো । আর প্রথম যমদূতটা এসে পুনর্বার কমলাদেবীর চুলের গোছা ধরে টেনে হিঁচড়ে তাঁকে হাঁড়িকাঠে চড়ালো । যমদূতটা যখন কমলাদেবীর মাথাটা ধরে হাঁড়িকাঠের অপর পাশে ঝুলিয়ে দিয়ে ঘাড়ের ওপর খিলটা শক্ত করে এঁটে দিলো তখন কমলাদেবীর চোখ ফেটে জল এলো । তিনি ততক্ষণে বুঝে ফেলেছেন তাঁর অবধারিত পরিণতি কী । হায়রে নিষ্ঠুর নিয়তি !

হাঁড়িকাঠে গলা দিয়ে পড়ে রয়েছেন কমলাদেবী । মৃত্যু এখন অতি নিকটে তাঁর । পেটে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে । কমলাদেবীর মনে মৃত্যুভয় সঞ্চার হয়েছে । হাত পা দ্রুত ঠান্ডা হয়ে আসছে তাঁর । গর্ভের শিশুটির জন্য অসহনীয় কষ্টে হৃদয় টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে তাঁর । প্রথমবার মা হতে যাচ্ছিলেন তিনি । কত স্বপ্ন, কত আশা ছিল তাঁর শিশুটিকে ঘিরে । অথচ তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথে তাঁর বাচ্চাটিরও মৃত্যু অবধারিত আজ । তিনি হয়তো কোনো মহা পাপ করেছিলেন, তার শাস্তি পাচ্ছেন আজ, কিন্তু তাঁর শিশুটি তো কোনো পাপ করেনি, নিষ্কলুষ অপাপবিদ্ধা সে । তবে, বিধাতা তাকে কেনো এতো নিষ্ঠুর শাস্তি দিচ্ছেন ? জন্মের আগেই মৃত্যুই কি তার একমাত্র পাওনা ছিল ?

অবরুদ্ধ কান্নার বাষ্পে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে কমলাদেবীর । মানুষকে বিশ্বাস করার ফল যে এতটা মারাত্মক হতে পারে আজ জীবন দিয়ে তা উপলব্ধি করতে যাচ্ছেন কমলাদেবী । চন্ড, বিশ্বাসঘাতক ! জ্বলন্ত চক্ষে চন্ডের দিকে চাইলেন কমলাদেবী । দাঁতে দাঁত ঘষে একটা অভিশাপবাণী উচ্চারণ করলেন কমলাদেবী । কিন্তু, মুখে কাপড় বাঁধা থাকাতে শুধু মাত্র একটা অস্পষ্ট গোঙানির মতো শোনালো সেটাকে ।

আরো একবার বিদ্যুৎ চমকালো । সহসা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে উঠলো মন্দির প্রাঙ্গন । সেই উজ্জ্বল আলোয় কমলাদেবী দেখলেন কাপালিকের বাঁ হাতের মুঠিতে একটা ট্যাঁক ঘড়ি । ঘড়ি !!! কাপালিকের হাতে ঘড়ি ? এ যে অসম্ভব ব্যাপার ! ধুম করে কমলাদেবীর মনে পড়ে গেলো - মন্দিরে যখন প্রথম পা দিয়েছিলে তখন দূর থেকে তিনি কাপালিককে পুজোতে বসে থাকতে দেখেছিলেন । তখন কাপালিকের ডান উরুর উপরে রাখা এই ঘড়িটিই দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। আর ঘড়িটি দেখে তাঁর তখন বড্ড বেমানান মনে হয়েছিল । একজন সর্বত্যাগী, শ্মশানচারী কাপালিকের কাছে ঘড়ি যে একদমই বেমানান । তাই তখন তাঁর মনে খটকা লেগেছিলো । কিন্তু, পরমুহূর্তে ভুলে গিয়েছিলেন খটকা লাগার কারণটি । খুব সম্ভবতঃ কাপালিক যখন এক পলকের জন্য ঘুরে বসে কমলাদেবীর দিকে তাকিয়েছিল তখন তার উরু থেকে ঘড়িটি নিচে মাটিতে পড়ে যায়, তাই আর সেটাকে দেখতে পাননি পরে তিনি ।

[চলবে]

Comments

Sort byBest