হয়ে গেল পঞ্চম নাট্যগোষ্ঠী দ্বারা আয়োজিত স্কুল নাট্যোৎসব। একটি প্রতিবেদন।
7 comments
বিভিন্ন স্কুলগুলির মধ্যে অনুষ্ঠিত হল নাট্য উৎসব
চলুন আজ আপনাদের কিছু অদ্ভুত জিনিস দেখাই। যে সকল পারদর্শিতা দেখলে আপনারা নিজেরাই হয়তো অবাক হবেন। দুদিন আগে খড়দহ রবীন্দ্র ভবন হলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সুখচর পঞ্চম নাট্যগোষ্ঠী দ্বারা আয়োজিত নাট্য উৎসব। এই নাট্য উৎসবের নাম ছিল 'টিনের তলোয়ার'। আপনারা অনেকেই জানেন টিনের তলোয়ার প্রখ্যাত নাট্যকার উৎপল দত্তের একটি বিখ্যাত নাটকের নাম। সেই নামটি তারা ব্যবহার করেছে অনুষ্ঠানটির নামকরণে।
এই নাট্য উৎসবে এই বছর অংশগ্রহণ করেছিল পাঁচটি স্কুল। সবকটি স্কুলের বালক বালিকারা অতি মুন্সিয়ানার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের নাটক এবং শারীরিক কসরত প্রদর্শন করলো। সঙ্গে ছিল নৃত্যনাট্যও৷ আমি সেই অনুষ্ঠানে ছিলাম বিচারকের ভূমিকায়। যে পাঁচটি স্কুল অংশগ্রহণ করেছিল তাদের নম্বরের ভিত্তিতে বিচার করবার জন্য মোট পাঁচজন বিচারক ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। আমি ছিলাম তাদের মধ্যে একজন।
স্থানীয় শিক্ষক হিসেবে আমাকে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এই অনুষ্ঠানের বিচার করবার জন্য। আমিও কাগজ কলম নিয়ে বসে পড়েছিলাম নম্বর দিতে। কিন্তু কাকে ছেড়ে কাকে দেখব। সবকটি বিদ্যালয়ই ভীষণ সুন্দরভাবে অংশগ্রহণ করল এই অনুষ্ঠানে। এক একটি বিদ্যালয়ের এক একরকম পারফরমেন্সে আমি রীতিমতো অভিভূত হয়ে গেলাম। তার মধ্যে একটি বিদ্যালয় স্টেজের মধ্যে তৈরি করল মানব পিরামিড। বাংলার একটি লোকশিল্প অথবা লোকনৃত্য রায়বেঁশের নাম আপনারা শুনেছেন। এই রায়বেশেতে মানুষেরা পিরামিডের মত আকৃতির একটি বন্ধন প্রাচীর তৈরি করে। সেই শিল্পটিই সেদিন প্রদর্শিত হল মঞ্চের উপর।
অনবদ্য তাদের ভাবনা। আর তার থেকেও অবাক করার হলো তাদের মঞ্চের উপর করা সেই হিউম্যান পিরামিড। যা দেখলে রীতিমত অবাক হয়ে যেতে হয়। অথচ ছেলেমানুষ ছাত্রছাত্রীরা কত সুন্দর করে এই বন্ধন প্রাচীর তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিল বিচারকদের। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত ছিল প্রচুর দর্শক। বিচারক হওয়ার জন্য আমি বসেছিলাম একেবারে সামনের সারিতে। তাই সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি খুব সামনে থেকে দেখবার সুযোগ হয়ে গেছিল। সেদিনের সেই অনুভূতি সামনে তুলে আনতে পেরে আমার নিজেরই খুব ভালো লাগছে। আপনারাও ছবির মাধ্যমে দেখুন কেমন সুন্দর করে তারা মঞ্চের উপর পিরামিড তৈরি করেছিল।
এছাড়াও সেই দিনের অনুষ্ঠানে ছিল বিভিন্ন নাটক এবং নৃত্যনাট্যের আয়োজন। একটি স্কুল উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা 'কেনারাম বেচারাম' নাটকটি সুন্দর ভাবে মঞ্চস্থ করল। এছাড়াও আরেকটি স্কুল নৃত্যনাট্যের মাধ্যমে শিশু শ্রমিক প্রথার বিরুদ্ধে একটি তীব্র বার্তা সকলের সামনে তুলে ধরল। সব মিলিয়ে তাদের প্রচেষ্টা ছিল চোখে পড়ার মত। দর্শকরাও মুহূর্মুহু হাততালি দিয়ে ভরিয়ে দিল শিল্পীদের। শিল্পীরা সকলেই কচিকাঁচা। ফলে তাদের এত সুন্দর বিভিন্ন পারফরম্যান্স আমাদের অবাক করে দিয়েছিল।
আমি আপনাদের সামনে সেদিনের অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ছবি নিয়ে এলাম। এখন আপনাদের কেমন লাগে সেটাই অপেক্ষা। আশা করি কচিকাঁচাদের দ্বারা অনুষ্ঠিত হওয়া এই নাটক এবং অনুষ্ঠানের মুহূর্তগুলি আপনাদের ভাল লাগবে। আমি তো ফাইলের মধ্যে করে বিভিন্ন স্কুলের প্রাপ্ত নম্বর লিখে কর্তৃপক্ষ অথবা আয়োজকদের হাতে তুলে দিয়ে এসেছি। এখন বাকি বিচারকদের হিসাবে যারা প্রথম স্থান অধিকার করবে তারাই নিয়ে যাবে পুরস্কার। পুরস্কার বিতরণী এখনো বাকি আছে। কর্তৃপক্ষের কথা মত তারা জানুয়ারি মাসে পুরস্কার তুলে দেবে যোগ্য স্কুলের হাতে।
আশা করি কচিকাঁচাদের অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠান আপনাদের ভালো লেগেছে। বাকি মন্তব্য কমেন্ট এর মাধ্যমে নিশ্চয়ই জানাবেন।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Comments