নাটক রিভিউ "আলতা সুন্দরী" ৩৫ তম পর্ব
6 comments
কেমন আছেন আপনারা? আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার সহায়তায় ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকে ভালোবেসে উপস্থিত হলাম সুন্দর একটি বাংলা নাটক রিভিউ নিয়ে। বৃন্দাবন দাস রচিত জনপ্রিয় এই নাটকের নাম আলতা সুন্দরী। এই নাটকে মোট ৬২ পর্ব। আজকে আমি উপস্থিত হলাম ৩৫ তম পর্ব রিভিউ করে শেয়ার করতে। চলুন তাহলে শুরু করি।
নাটকের নাম | আলতা সুন্দরী |
---|---|
রচনা | বৃন্দাবন দাস |
পরিচালক | সালাহউদ্দিন লাভলু |
অভিনয়ে | চঞ্চল চৌধুরী, আ খ ম হাসান, শামীম জামান, রহমত আলী, ম ম মোরশেদ, জয় রাজ, রাশেদা চৌধুরী, মনিরা মিঠু, সাইকা আহমেদ, লারা লোটাস, পুতুল, ডায়না সহ আরো অনেকে। |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
ধরণ | হাস্যরসাত্মক এবং সামাজিক |
মোট পর্ব | ৬২ |
রিভিউ | ৩৫ তম পর্ব |
দৈর্ঘ্য | ১৬ মিনিট |
প্ল্যাটফর্ম | ইউটিউব @cdchoicedrama চ্যানেল |
চরিত্রেঃ
- শামীম জামান (আলতা সুন্দরী/নছের)
- আর খ ম হাসান (নায়ক মেসের)
- চঞ্চল চৌধুরী (রহিম বাদশা) সহ আরো অনেকে
আলতা সুন্দরীকে খুঁজে পাওয়ার জন্য রহিম বাদশা এখনো পাগল পারা। সে পাগলের মত খুঁজে চলেছে যখন সুযোগ পাই। কখনো গুলজারের বাড়িতে এসে উপস্থিত। কখনো পারুলের বাড়িতে এসে উপস্থিত। কখনো গানের দলের ওস্তাদের বাড়িতে। কিন্তু এখনো সে মন থেকে নিশ্চিত হতে পারেনি আলতা সুন্দরীর আসল পরিচয় কি। যেখানেই যাই,কারোর কথার সাথে কারোর কথার মিল পায় না। তার কাছে এক অবিশ্বাস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে আলতা সুন্দরী। সে মন থেকে কখনো ভুলতে পারে না আবার কখনো বিশ্বাস করতেও পারে না সত্যটাকে। সে যে গানের দলে দেখেছে এমনকি তার সাথে গায়ে ধাক্কা লেগেছে সেটাই সত্য। অনেকেই তাকে বুঝানোর চেষ্টা করে সে একজন ছেলে মানুষ অভিনয় মেয়ে মানুষ সাজে। কিন্তু তাতেও ব্যর্থ হয়। গুলজারের হাতে মার খেয়েছে তারপরে গুলজারের বাড়িতে এসে উপস্থিত হয় আলতা সুন্দরীকে দেখার আশায়। কিন্তু গুলজার এর বাড়িতে আলতা সুন্দরী বলে কেউ নেই গুলজারের কোন বোন নেই এটা সত্য। গুলজার অনেক মান অপমান করে তারপরেও খুঁজে চলেছে। এরপর পারুলের কাছে যায় আলতা সুন্দরীর খোঁজ নিতে কিন্তু সেখানেও দেখে নছের মিয়া এসে উপস্থিত। পারুল বিশ্বাস করাতে পারে না এই ব্যক্তি গানের দলে আলতা সুন্দরী সেজে নাচ করত। পাগল পারা হয়ে আলতা সুন্দরী কে ভাবতে ভাবতে গাছতলায় বসে থাকে অনুভবে আলতা সুন্দরীকে খুঁজে পায়। মনে একপ্রকার প্রশান্তি খুঁজে পাই রহিম। কিন্তু সেই কল্পনাও যেন ভাঙিয়ে দেয় মাসুমা। মাসুমা তার এই পাগলামি দূর করতে বলে। সবকিছু ভুলে তাকে ভালবাসতে বলে। কিন্তু কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারে না রহিম বাদশা।
এদিকে আলতা সুন্দরী নাটকের গানের উস্তাদ ফেলু গায়েন আর হাসেম জোয়ারীর মধ্যে এক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। কিছুদিন আগের রাতে রিহার্সালে আলতা সুন্দরী পার্ট নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এক প্রকার দ্বন্দ্ব হয়েছে। কিন্তু এই দ্বন্দ্বে হাসেম জোয়ারের লস। গানের দল যদি গানের আসল না বসায় তাহলে হাসেম জোয়ারীর জোয়ার ব্যবসা চলবে না। এদিকে সে শহর থেকে নায়িকা এনেছে তাদের খরচ দেবে কোত্থেকে। তাই সবসময় সে গানের দলের নসু ভিলেনকে সাথে নিয়ে নতুন নতুন বুদ্ধি তৈরি করতে থাকে। এক পর্যায়ে ওস্তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। ওস্তাদ ক্ষমা না করলেও তারা নিজ থেকে ক্ষমা তৈরি করে নেওয়ার চেষ্টা করে। সব সময় তার সাপোর্ট হিসেবে নসু ভিলেন কথা বলছে। এই বিষয়টা গানের দলের ওস্তাদ খুব ভালোভাবে বুঝে ফেলেছে নসু তার পক্ষ নিয়েছে। অতঃপর ওস্তাদ যখন চলে যায় তারা দুইজন বুদ্ধি তৈরি করতে থাকে। গানের দলের নায়ক হওয়ার চিন্তা নসু ভিলেনের। আর গানের দলের ভিলেনের পাট দিয়ে দিবে গুলজারের হাতে। এখানে মিস রানীর সাথে নসু ভিলেন একসাথে কাজ করতে পারবে মনের মত। বিষয়টা হাসেম জোয়ারীর কাছে অনেক ভালো লাগে।
নাটকে আরো একটি পর্যায়ে আমরা লক্ষ্য করে দেখি মনের মধ্যে শত ইচ্ছে থাকলেও গানের দলে ফিরতে পারছে না নছের মিয়া। সে তার ভালোবাসার মানুষ পারুলের কাছে ওয়াদ বদ্ধ হয়েছে মেয়ে মানুষ সেজে আর গান করবে না। কিন্তু পারুল তাকে মানা করেনি গানের দলে যুক্ত হতে। তবুও তার মধ্যে এক প্রকার রাগ ক্ষোভ কাজ করছে। তাই সে আর গানের দলের দিকে তাকাবে না। কিন্তু যখন রাতে গানের দলের রিহার্সাল শুরু হয়, বিভিন্ন বাধ্য যন্ত্রের বাজনা তার কানে এসে বাঁচতে থাকে। তখন তার মনটাতে খুবই কষ্টে ভরে যায়। বিষয়টা পারুল বুঝতে পারে কিন্তু কিছুই বলার থাকে না। সে শুধু এতটুকুই বলতে চায় সে তো তার গানের দলে যেতে মানা করেনি। মানা করেছে মেয়ে মানুষ সেজে নাচ না করতে।
আমরা আলতা সুন্দরী নাটকের ৩৫ তম পর্বে তিনটা বিষয় ক্লিয়ার ভাবে লক্ষ্য করেছি। একদিকে রহিম বাদশা পাগল পারা হয়ে এখনো আলতা সুন্দরী কে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সে সত্য বিশ্বাস করতে পারছে না নিজের মন থেকে। কারণ তার দৃষ্টিতে আলতা সুন্দরী একজন মেয়ে মানুষ। গ্রামের মানুষেরা তার সাথে মিথ্যা ছলনা করছে আলতা সুন্দরীকে দূরে সরিয়ে রেখে। তাই সে খুবই মর্মাহত। তবে আলতা সুন্দরীর আসা শেষ ছাড়ে নাই। যেই গোলজার তাকে মারার জন্য তাড়া করত তার কাছেও সে ছুটে যায় আলতা সুন্দরীকে দেখার জন্য। আরেক দিকে লক্ষ্য করি সুন্দর গানের দলটাকে দিন দিন বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছুদিন বিউটির জন্য গানের দলটা অচল হয়ে গেছিল। এখন যেন বিউটির সমস্যা সমাধান না হতে আবারো সমস্যা সৃষ্টি করেছে হাসেম জোয়ারী। ওস্তাদ বুঝতে পেরেছে হাশেম জোয়ারের উদ্দেশ্য। উস্তাদ যতই তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে না কেন কিন্তু সে যেন কাঠালের আঠার মত লেগে থাকার কৌশল বের করতে থাকে। এদিকে আরো একটা বিষয়ে আমরা লক্ষ্য করি আলতা সুন্দরী ও রূপে-নসের ভালবাসার মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসাবে পেয়ে গেছে কিন্তু মনের স্বস্তি খুঁজে পান নাই। তার মনটা এখনো গানের দলে পড়ে রয়েছে। সে মন থেকে ভুলতে পারেনি গানের দলের আলতা সুন্দরী পাঠ। কিন্তু মনের রাগ অভিমান যেন দল থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে তাকে। শুধু ওয়াদাবদ্ধ হয়েছে ভালোবাসার মানুষটা পাওয়ার জন্য। মানুষটাকে পেয়েছে কিন্তু স্বস্তিটা খুঁজে পাইনি এখনো। সমস্ত অভিনয় বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই এই নাটকে রহিম বাদশার প্রেম পাগলের অভিনয়। যে কারোর বুঝ মানতে চায় না নিজের মনের মানুষকে পাওয়ার জন্য। আরেকদিকে দেখেছি হাশেম জুয়ারী নিজের অর্থ উপার্জনের জন্য গানের দলটাকে নিজের মত ব্যবহার করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আরো লক্ষ্য করেছি আলতা সুন্দরী ওরূপে নসের মিয়ার মানসিক ট্রাজেডি অনুভূতি। যে কষ্টের অনুভূতি প্রিয়জন পাশে থাকতেও প্রিয়জনকে বলতে পারে না। সবকিছুর মধ্যেই রয়েছে অসাধারণ অভিনয় এবং গ্রামীন পরিবেশ। যা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।
রিভিউটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমি মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের bidyut01 এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। এক পরিবার থেকে "আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে" চারজন সদস্য রয়েছি। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ভালোলাগা রেসিপি তৈরি, নাটক রিভিউ, ভিডিও ও ফটোগ্রাফি করা সহ ভ্রমণ করতে পছন্দ করি। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে সদস্য হয়ে পোস্ট শেয়ার করার।
Comments