তুলনাকে উন্নতির কাজে লাগান।(Make comparisons to improve yourself.)
3 comments
সেটা নিজের কাজের গতি, নিজেকে উন্নত করবার চাইতেও অন্যের সাথে তুলনায় আমরা বেশি অভ্যস্থ। ফলস্বরূপ হাতে পড়ে থাকে হতাশা, আর ঈর্ষা।
ব্যক্তিজীবন তথা কর্মজীবন সর্বত্রই এই উদাহরণ হামেশাই চোখে পড়ে।
ভেবে বলুন দেখি কতবার ছাত্রাবস্থায় নিজেদের ক্লাসের প্রথম ছাত্র ছাত্রীর সাথে নিজেকে তুলনা করে তারমত ফলাফলের জন্য পরিশ্রম করেছিলেন?
আচ্ছা! বড়ো হয়ে, কতবার নিজে কেনো পারছেন না, সেটা না ভেবে;
যারা সফল হয়েছে, তারা নিশ্চই কোন বিকল্প পথ অনুসরণ করেই সেই সফলতা অর্জন করেছেন এটা ভেবেছেন?
এরপর কতবার কার্যক্ষেত্রে অন্যের প্রশংসায় ঈর্ষান্বিত হয়েছেন?
আপনার সামনে অন্যের প্রশংসা শুনে, মনে মনে ভেবেছেন, কি এমন করেছে যার জন্য এত প্রশংসা, আমার পরিশ্রম চোখে পড়ে না!
সংসারের ক্ষেত্রে একটা পদ কোনোদিন ভালো হয়নি শুনলে গাল ভার হয়েছে, কখনো পাশের বাড়ির ছেলের বউয়ের অথবা স্বামীর প্রশংসা আপনাদের হতাশ করেছে।
দৈনন্দিন জীবনে এরকম ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে, যেগুলো কারোর অস্বীকারের জায়গা নেই।
এখন এদের মধ্যেও ব্যতিক্রমী মানুষ আছে।
কি ভাবছেন নিজের কথা ফলাও করে বলবো?
নিজের ঢাক নিজে পেটালে সেটায় স্বার্থকতা নেই।
তবে, বাস্তবিক উদাহরণস্বরূপ একটা ঘটনা আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে পারি।
যে বছর আমি মাধ্যমিক দেবো, সে সময় আমি পড়ার একজন পিসিমার কাছে ইংরিজি পড়তে যেতাম;
তার পড়ানোর ধরন ছিল, একটা অধ্যায় শেষ হলেই তিনি পড়ার ব্যাচে পরীক্ষার ঘোষণা করতেন।
সেই ব্যাচে সঞ্চারী বলে একটি মেয়ে পড়তো, যার মা এবং পিসিমা একই স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন।
সঞ্চারী এ. পি. যে আব্দুল কালাম(ভারতের রাষ্ট্রপতি সহ, একজন বিখ্যাত গবেষক) এর গবেষণা কেন্দ্রে পরে কাজ করত, বর্তমানে স্বামী সহ বিদেশে পাড়ি দিয়েছে।
যাক! যে প্রসঙ্গে বিষয়টি উপস্থাপন, সেটা হলো মেয়েটি আমার চাইতে ঢের বেশি পড়াশুনায় ভালো ছিল।
তবে, ওই চিরকাল একটির পিছনে আমি দৌড়েছি, আর সেটা ইংরেজি।
সেই সপ্তাহে আমি ওই ব্যাচে পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছি, মানে ওই সঞ্চারীর চাইতেও বেশি, এটা জেনে নাই নাই করে দশবার আমার খাতা ও দেখেছিল, কিভাবে আমি ওর চাইতে বেশি নম্বর পেতে পারি!
সেই সময় একটু বিব্রত লেগেছিল বটে, তবে এটা সঞ্চারী নিজের কমটা জানতে তথা নিজেকে উন্নত করতে করছিল। একই কাজ কবরী(আমার প্রিয় বান্ধবী)ও আমার সাথে করেছিল!
আসলে এরা দিনে ১০ ঘণ্টাই পড়াশুনা করতো, খেলাধুলো এদের রুটিন কোনো কালেই ছিল না, কাজেই একটা মানুষ এত দুরন্ত হয়ে পারিবারিক সমস্যা বয়ে কি করে ভালো করতে পারে?
তারা আমার ব্যাক্তিগত সমস্যা সম্পর্কে জানতো, যে সময় মা চলে যান, তখন আমার খেলার বয়স।
এরপর যেদিন আমাকে সেই পিসি বলেছিলেন, সিজন অফ ইন্ডিয়া নিয়ে তিনি যে ইংরিজিতে রচনা আমাদের লিখে দিয়েছেন, সেটাতে একমাত্র কবরী গুড পেয়েছে।
শুনেই, চুপচাপ বাড়ি এসে পড়া মুখস্থ করে, সেই রাতে পড়া দিয়ে গুড নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম।
আজকের এই কথাগুলো হয়তো আগেও বলেছি, হয়তো অনেকেই আমার মুখে কথাগুলো শুনেছেন, তাহলে এগুলোর পুনরাবৃত্তি কেনো করছি?
কারণ, এখন কাজের প্রতি সেই স্পৃহা আর চোখে পড়ে না, কেবলমাত্র ঈর্ষা তথা অনৈতিক, অপ্রয়োজনীয় তুলনা, নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বজ্ঞানী প্রমাণের প্রয়াস ছাড়া।
কেনো আমার হচ্ছে না?
কোথায় কম রয়ে যাচ্ছে? কিভাবে নিজের ব্যবহার তৎসহ কাজকে উন্নত করা যায়? ইত্যাদি ইত্যাদি।
সেটার চাইতে আমরা সবসময় এটা নিয়ে সমালোচনা করতে ব্যস্ত, ওই মানুষের ওটা পাওয়ার যোগ্যতা নেই! আমার জানা কিভাবে সে ওই জায়গায় পৌঁছেছে!
ছাড়ুন তো মশাই, এমনি এমনি এত কম সময়ে সব কি আর হয়, ওসব অন্য ব্যাপার আপনি বুঝবেন না!
দিন রাত এত পরিশ্রম করে কাজ হচ্ছে না, আর এই সেদিন এসেই পদোন্নতি! উহু গল্প আছে এর পেছনে!
আমারই পরিবারের এক আত্মীয় মোটেই অন্যের রান্নার প্রশংসা শুনতে পারেন না।
কেউ যদি ভুল করে বলে ফেলেন তার সামনে অন্যের কোনো একটা পদ বেশি ভালো রান্না হয়েছিল, ব্যাস সেইদিন থেকে গাল ভার আর সাথে বকবক শুরু।
এতো বছর দিন রাত রান্না করে খাওয়ালাম, তার কোনো সুনাম নেই, একদিন খেয়েই বাড়ির রান্নায় খুঁত খুঁজতে শুরু করেছে।
আমি আর রান্না করতে পারব না কাল থেকে, লোক দেখো।
ভারী মজা লাগে আমার এগুলো দেখতে।
মজা শব্দটা এই জন্য ব্যবহার করলাম, এই সকল মানুষের নেওয়ার ক্ষমতা কত কম সেটা ভেবে।
হতেই পারে একজন দু একটি বিষয় আমাদের চাইতে ভালো, হতেই পারে আমি দু একটি ক্ষেত্রে ভুল, সেটা মেনে নিতে যোগ্যতা প্রয়োজন।
যারা, আমি আর আমার মধ্যে সীমিত তারা হলো কুয়োর ব্যাঙ। তাদের পরিধি সীমিত কাজেই, পৃথিবীর আর সকল কিছুই তারা ওই পরিধি দিয়ে বিচার করেন।
যদি নিজেদের উন্নত করতে হয়, তাহলে অন্যের ভালোটা নেবার প্রয়াস করে সেটা অর্জনের পিছনে পরিশ্রম করা উচিত।
তুলনা করলে, হতাশা ছাড়া শেষ পাতে কিছুই পড়ে থাকবে না।
এগুলো একেবারেই নিজস্ব অভিমত, আমরা ভিন্ন, কাজেই সহমতের আশা না রেখেই বিষয়টি আজকে তুলে ধরলাম।
ভালো কাজ করলে, এমনিতেই সময় সঠিক ফলাফল এনে দেবে, নিজের পরিশ্রমে যদি কার্পণ্য না করেন আর তুলনা করাটা বন্ধ করতে হবে।
Comments