কালী পূজা। পর্ব:-১০
1 comment
কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
আমার বারাসাতে কালী পুজো দেখতে অনেক বেশি ভালো লাগে কারণ এখানে অনেক বড় করে এবং অনেক সুন্দর করে প্যান্ডেল করা হয়। বড় বড় থিম প্যান্ডেল করা হয় আবার ছোট ছোট যে প্যান্ডেল গুলো হয় সেগুলো দেখতে অনেক সুন্দর হয়। তাই আমিও ভেবেছি আজ রাতে বারাসাতের যে কটা প্যান্ডেল করেছে সবই দেখার চেষ্টা করব। সেই মতো হাঁটা শুরু করলাম, হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলাম একটি সুন্দর আলোময় রাস্তায়। এই রাস্তার লাইটিং টা আমার খুবই নতুনত্ব এবং আকর্ষণীয় লেগেছে। বেতের ঝুড়ির মুখে কুচি করা কাপড় বেঁধে ঝুড়ির ভেতরে একটি লাইট লাগিয়ে দিয়েছে। এটি দেখতে অত্যন্ত সুন্দর লাগছে এবং পুরো রাস্তা সুন্দর লাল নীল গোলাপি নানান রংয়ের আলোয় আলোকিত হয়ে গেছে। এই আলোময় রাস্তা ধরে একটু হাঁটতে সামনে দেখতে পেলাম সুন্দর একটি প্যান্ডেল। এবারের প্যান্ডেল দেখে আমার মন ছুয়ে গেল আর সব থেকে বেশি ভালো লাগলো উপরে মাঝখান বরাবর লেখা "তবু মনে রেখো"।
এই লেখাটি মাঝখানে রেখে চারিদিকে ছোট ছোট সাদা রংয়ের কুলো রাখা আছে। আর এ কুলোর মধ্যে এক একটি শব্দ করে লেখা আছে "বনে থাকে বাঘ গাছে থাকে পাখি জলে থাকে মাছ ডালে আছে ফল" । আর এই লেখাগুলো এবং কারুকার্য গুলো পুরোটাই রয়েছে বেতের পাটির ওপরে। আগের যুগে গ্রামের দিকে এই পাটির ওপরেই সবাই বসতো বা খাওয়া-দাওয়া করত। বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন আসলে এই পাটির ওপর এই বসতে দিত। এই পাটির একদম উপরে এবং নিচে লাল রংয়ের কাপড় কুচি করে ঝোলানো আছে। একদম ওপরে দুদিকে দুটো মাছের মত দেখা যাচ্ছে। প্যান্ডেলের সামনের এই দৃশ্য দেখে বোঝা যাচ্ছে এই প্যান্ডেলটি একটু সাহিত্যিক আরেকটু গ্রাম বাংলার ছোঁয়া আছে। সামনে আবার দেখা যাচ্ছে একটি গরুর গাড়ি, আগেকার দিনে এই গরুর গাড়িতে করে সবাই আসা-যাওয়া করতো। গরুর গাড়ির চাকার কাছে কিছু মাটির হাড়ি দেখা যাচ্ছে। চারিদিকে কেমন সাহিত্য সাহিত্য ভাব, বাংলা সাহিত্যের এক একটি কবিতার ছবি দিয়ে তার উপরে কবিতার কিছু লাইন লেখা আছে।
কবিতার লাইনগুলো পড়ে মনে পড়ে যাচ্ছে ছোটবেলার কথা। এই কবিতাগুলো তখন পড়তে অনেক ভালো লাগতো। আরেকটু ভেতরে ঢুকে দেখি সামনে একটি ছোট মাটির রান্নাঘর। খরকুটো দিয়ে সেই রান্না ঘরের ছাদ করা, তার সামনে দুটি খেজুর গাছ যার পাতা রান্না ঘরের ছাদে এসে পড়েছে। রান্নাঘরটি দেখে সেই ছোটবেলার আমার দিদা ঠাকুমার কথা মনে পড়ে গেল। অনেক আগে আমাদেরও এরকম রান্নাঘর ছিল। সেই সব দিনের একটা আলাদাই আনন্দ ছিল যেটা এখন আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। আরেকটু সামনে এগিয়ে দেখি বিভিন্ন সাহিত্যিক এবং দেশপ্রেমীদের মূর্তি। আর তার পাশে তাদের লেখা বিখ্যাত কবিতা। তবে সব থেকে বেশি ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা। আমার এই প্যান্ডেলটি দেখতে এত ভালো লাগছিল আমি এখানে দাঁড়িয়ে কবিতা পড়া শুরু করে দিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর বর মশাই ডাক দেওয়ায় আমি এগিয়ে গেলাম।আসলে আমি ছোটবেলা থেকে কবিতা পড়তে অনেক বেশি ভালোবাসি। অনেকে আছে গল্প বা উপন্যাস পড়তে বেশি ভালোবাসে কিন্তু আমি কবিতা প্রেমী তাই চারিদিকে এত কবিতা দেখে আমার খুবই ভালো লাগছিল।
ওপর দিকে তাকিয়ে দেখি সাদা কাগজ কেটে সুন্দর ফুল করে কারুকার্য করা হয়েছে। আরেকটু সামনে দেখি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি সাদা রংয়ের মূর্তি বানানো হয়েছে। এই মূর্তিটি দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। আর একটু সামনে এগিয়ে দেখি কালী মায়ের প্রতিমা। অসম্ভব সুন্দর করেছে এই মায়ের প্রতিমা, মায়ের মুখটি দেখে মন ভরে গেল। কালী মায়ের চারিপাশে মায়ের বিভিন্ন রূপের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। আর এই ছবির ওপরে এবং নিচে কুলো এবং মায়ের মুখমণ্ডল দিয়ে কারুকার্য করা হয়েছে। কালী মাকেও এখানে গ্রামের বধুর মত দেখা যাচ্ছে। এই প্রতিমার পাশেই আরো একটি কালী মায়ের প্রতিমা দেখতে পেলাম এই প্রতিমাকে পূজো করা হয়েছে। মাথার ওপরে ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম এখানে আরো সুন্দর করে লাইটিং করা হয়েছে। সরু বাঁশের ছোট টুকরো করে ত্রিকোণ ভাবে বেঁধে তার ভেতরে একটি করে লাইট দিয়ে সুন্দর করে বেঁধে রাখা। আরো কিছু একতারা দেখতে পেলাম যেটা ওপরেই লাইটের আশেপাশে বাঁধা আছে। পুরো ব্যান্ডেলটি কালো কাপড়ের পরে লাল কাপড় কুচি করে বিভিন্ন কর্ণারে দিয়ে রাখায় সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্যান্ডেলটা দেখে সত্যি অনেক মুগ্ধ হলাম।
ক্যামেরা পরিচিতি : Realme
ক্যামেরা মডেল : realme narzo 60 pro
ক্যামেরা লেংথ : 26 mm
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।
Comments