"এসো নিজে করি"- ইভেন্টে বানিয়ে ফেললাম অনেকটাই পরিবেশবান্ধব হাওয়াকল।
30 comments
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
আশাকরি আপনারা বেশ ভালোই আছেন৷ আমিও ভালো আছি। দেখতে দেখতে ছুটির দিন ফুরিয়ে এলো। আগামীকাল আমার ফেরার ট্রেন। সারাদিন গোছগাছের হাজার ব্যস্ততার মধ্যেই ঠিক করলাম একটা কিছু বানাই৷ এমাসের এসো নিজে করি সপ্তাহ শেষের পথে এদিকে সময়ের অভাবে কিছুই করে উঠতে পারিনি৷
যেহেতু দেশের বাড়িতে আছি আর গ্রামেই আছি তাই গ্রামের সমস্ত পরিবেশ বান্ধব জিনিসপত্রগুলো চোখের সামনে যেন ঘুরঘুর করে। এই সব দিয়েই কিছু একটা বানাবো ভাবছি মাথায় এলো হাওয়াকলের কথা৷ ধান চাষ বাবাদের বাড়িতে হয় না৷ তাই মাকে বললাম খড় জোগাড় করে দিতে। মা পাশের বাড়ির কাকিমার থেকে নিয়ে এনে দিলেন৷ বাকি জিনিস আমিই ঘরে খুঁজে বার করেছি। সকাল সকাল হলুদ কাগজের ঠোঙায় মোড়া পাঁউরুটি ডিমের টোস্ট খেয়ে প্রায় ন'টা নাগাদ বসে গেলাম। সাড়ে এগারোটায় বাবা বাজার থেকে বাড়ি ফিরলেন যখন কান্ডকারখানা দেখে আমারই ছোটবেলায় স্মৃতি আওড়াচ্ছিলেন৷ আমি নাকি ছোট থেকেই ঝাঁটা শুকনো পাতা বাঁশের কাঁঠি এই সব নিয়েই ছুটির দিনগুলো কাটিয়ে দিতাম। বিশ্বাস করুন আমার সেসব যে বিরাট মনে আছে তা নয়৷ খুবই আবছা স্মৃতি। তবে বড় বেলার ক্রাফটের কাজ মনে পড়ে। যাইহোক বেলা একটা দেড়টা নাগাদ যজ্ঞ শেষ হল৷ খিদেও পেয়ে গেছিল। আবার এবাড়ি আসার তাড়া। কোনমতে সব বোঁচকাবুচকি বেঁধে চলে এলাম৷ এখন শান্ত হয়ে বসে ব্লগ লিখছি।
হ্যাঁ বন্ধুরা, আজ আমি এসো নিজে করি সপ্তাহের জন্য বানিয়েছি পরিবেশ বান্ধব (যদিও পুরোটা না) হাওয়া কল৷ চলুন উপকরণ ও কিভাবে বানিয়েছি সেই সব কিছু দেখাই।
🌼উপকরণ🌼
- কার্ডবোর্ড
- বড় স্প্রাইটের বোতল
- সুতলি দড়ি(পাটের দড়ি)
- বারবিকিউ স্টিক
- ফেভিকল আঠা
- হট গ্লু গান
- আইসক্রিম স্টিক
- খড়
- পুরনো কাপড়ের ব্যাগ
- চার্ট পেপার
- ফেভিকল
- এয়ার ড্রাই ক্লে
- কাঁচি
- মেরুন রঙের উল
🌿হাওয়া কল বানানোর পদ্ধতি🌿
প্রথমেই গোল গোল শেপের তিনটে কার্ডবোর্ডের কাট আউট করে নিলাম।
এবার ফেভিকল আঠা লাগিয়ে তিনটেই পর পর বসিয়ে চিটিয়ে নিয়েছি।
এই ভাবে বেসটা মোটা তৈরি করলাম।
এরপর বোতলটার ওপরের শঙ্কু আকারের অংশটা এবং নিচের অংশটা কেটে বাদ দিয়ে দিলাম। ওই কাঁচিটা দিয়েই কেটেছি। আজকালের বোতল এতো পাতলা কি বলব। আগে হলে আমায় ছুরি গরম করে কাটতে হত৷
কাটা বোতলের গায়ে আঠা লাগিয়ে পাটের দড়ি জড়াতে শুরু করলাম।
মোটামুটি শেষ হয়েছে। ওপরের সামান্য অংশ ছেড়ে দিয়েছি কারণ যে চালা হবে তাতেই ঢাকা পড়ে যাবে৷
এভাবেই হয়ে গেল মিলের দেওয়াল।
আইসক্রিম স্টিকগুলো দুই মাপের করে কেটে নিলাম। লম্বাগুলো দিয়ে হবে দরজা আর ছোটগুলো জানালা বানানোর কাজে ব্যবহার করব।
এখানেও ফেভিকল দিয়ে চিটিয়ে নিয়েছি। জানালা ও দরজা আলাদা আলাদা করে।
এবার চালা বানানোর জন্য চার্টপেপার টা লম্বা করে খানিকটা কেটে নিলাম। আলাদা কোন মাপ করিনি। আন্দাজেই কেটেছি৷
পানের খিলির মতো মুড়ে আঠা লাগিয়ে দিলাম। আর দেখতে হল শঙ্কুর আকার।
বেশ কিছু খড় এরকম ছোট ছোট সাইজের কেটেছি যেগুলো শঙ্কুর নিচের দিকটাতে ছিটিয়ে দেব।
বড় বড় মাপের খড় নিয়ে প্রথমে ওপর থেকে সেটাতে শুরু করলাম। বেশ খানিকটা করে নেওয়ার পর নিচটাও চিটিয়েছি।
এবং তৈরি করলাম হাওয়া কলের জন্য খড়ের চালা।
এই কাজটি করতে সবথেকে বেশি সময় লেগেছে প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি। কারণ নানান জায়গা ফাঁকা থাকার ফলে ছোট বড় মাপের খড় কেটে কেটে একটা একটা করে ফেভিকল আঠা লাগিয়ে ছিটিয়েছি।
আবারো আইসক্রিম স্টিকগুলো ছোট ছোট মাপ করে কেটে নিয়েছি।
গোলাকার যে বেসটা বানিয়েছিলাম তার চারপাশে হট গ্লু গানের সাহায্যে ওই কেটে রাখা স্টিকগুলো চিটিয়ে বেড়া তৈরি করলাম।
সামনে কিছুটা ফাঁকা রেখেছি কারণ রাস্তারও জায়গা দরকার।
ছ'টা বারবিকিউ স্টিক নিয়ে স্টিকের কোণার দিকগুলো এক জায়গায় করে হট গ্লু গান দিয়ে চিটিয়ে তার ওপর উল জড়িয়ে নিয়েছি দেখতে সৌখিন করার জন্য। এবং এভাবেই তিনটে ডানা বানালাম।
তিনটে ডানা মাপ মতো জুড়ে দিয়ে চালার মাথায় লাগিয়ে দিলাম।
তৈরি হলো হাওয়া কলের পাখার ব্লেড বা ডানা৷
এবার হাওয়া কলটিকে একটু সাজানোর প্রয়োজন তাই কালো রঙের ক্লে দিয়ে রাস্তার দু'দিকের পাথর বানিয়ে নিয়েছি।
ইটগুঁড়ি রংয়ের ক্লে দিয়ে মোরাম রাস্তার বা মাটির রাস্তা বানিয়েছি।
দুইপাশের অংশগুলো একেবারেই ফাঁকা লাগছিল বলে সবুজ রঙের ক্লে দিলাম এলোমেলো ভাবেই। ফলে মনে হচ্ছে সবুজ ঘাসের চাদরে হাওয়া কলের আশপাশ মুড়ে আছে৷
এবার কয়েকটা বস্তা বানিয়ে নেওয়ার জন্য কাপড়ের ব্যাগের সাইট থেকে আয়তাকারের কিছু শিট কেটে নিলাম।
শিটগুলোকে মুড়ে নিয়ে তলা এবং সাইডের জোড়া লাগাবার অংশ হট গ্লু গান দিয়ে চিটিয়ে নিলাম।
তারপর প্রত্যেকটা ব্যাগের মতো যা তৈরি হলো তাকে উল্টে দিলাম। খোলা মুখটা ভাঁজ করে নিয়েছি।
দেখে মনে হচ্ছে বস্তার খোলা মুখ।
এরকম একটি প্যাকেটে খানিকটা চাল দিয়ে ভরে দিলাম। এবার মনে হচ্ছে তোর চালের বস্তা?
এভাবেই মুগ ডাল ও মসুর ডাল দিয়ে আরো দুটো বস্তা ভরে দিলাম।
ঘাসের যেটুকু অংশ দেখা যাচ্ছে সেখানকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে লাল ক্লের ছোট ছোট ড্রপ দিয়েছি, বিশেষ কিছু না ওই ফুল ফুটেছে সেটে দেখাবার জন্য। জানেনতো আপনারা আমি ফুল ফোটাতে কত ভালোবাসি৷
এভাবেই প্রায় তিন চারঘন্টা ধরে তৈরি করে নিলাম বেশ খানিকটা পরিবেশবান্ধব হাওয়াকল
🪷🪷অন্তিম দর্শন🪷🪷
বন্ধুরা, কেমন লাগল আমার অনেকটা পরিবেশ বান্ধব হাওয়াকল? আমার তো বেশ ভালোই লেগেছে। বহুদিন বাদে এমন কিছু বানালাম। বাবা মা দু'জনেই বেশ খুশি৷ বাড়িতে নতুন বইয়ের আলমারি করা হয়েছে৷ মা সেখানেই তুলে রেখেছে৷ কি জানি কতদিন ভালো থাকবে৷ তবে আজ আছে৷ অনেকদিন পর আমার হাতের কাজ দেখে বাবা মা দুজনেই বেশ খুশি৷ আপনাদের কেমন লাগল জানার অপেক্ষায় রইলাম।
আবার আসব নতুন কিছু নিয়ে৷ আজ এ পর্যন্তই।
টা টা
পোস্টের ধরণ | আমার বাংলা বল ইভেন্ট, এসো নিজে করি |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা,ইনশট |
১০% বেনিফিসিয়ারি লাজুক খ্যাঁককে
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Comments