New to Nutbox?

গয়না বড়ি|| মেদিনীপুরের ঐতিহ্য || বিশ্বজুড়ে মেলে ধরা বাঙালিয়ানার শিল্পের ভিডিওগ্রাফি

12 comments

neelamsamanta
67
2 days agoSteemit4 min read

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


IMG-20241124-WA0025.jpg






আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



আজ আমি আপনাদের কাছে নিয়ে এসেছি পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার ঐতিহ্য গয়নাবড়ি

ছোট থেকেই দেখতাম শীত পড়ার সাথে সাথে আমাদের বিশাল লম্বা ছাদে সমস্ত ঠাকুমারা কাকিমারা এবং মা মিলে সকাল সকাল বসে যেত গয়না বড়ি দিতে। শীতের মিঠা রোদ আর উত্তরে বাতাস সব মিলিয়ে দুধ সাদা বড়ি গুলো দেখতে কি অপূর্ব লাগতো। গ্রাম বাংলার মেয়ে বউরা কোথাও আঁকা না শিখেই যে কতখানি শৈল্পিক তা শীতের ছাদ দেখলেই বোঝা যেত। চাল কুমড়ার বড়ি মসুর ডালের বড়ি এছাড়াও তিন থাকের গয়না বড়ি, পোস্তর বা তিলের ওপর দেওয়া গয়না বড়ি, এ যেন বড়ির বাহার। সেই সমস্ত দিনে দোকান বাজারে বা মেলায় হাটে গয়না বড়ি কিনতে পাওয়া যেত না। তাই শহরাঞ্চলে আমাদের যে সমস্ত আত্মীয় বাড়ি থাকতো সবার বাড়িতেই কৌটো ভর্তি নানান ধরনের বড়ি পাঠানো হতো। তবে শুধু যে শহরাঞ্চলের আত্মীয় বাড়ি তা নয় প্রত্যেকেই প্রত্যেকের মেয়ের বাড়ি বা ননদের বাড়ি বা বাপের বাড়ি, বোনের বাড়ি অল্প বিস্তর পাঠিয়ে দিত। আসলে দেওয়া এই যে সম্পর্কের ভালোবাসার এক অবিচ্ছেদ্য দিক এবং বনেদিয়ানা তা বলার অপেক্ষা থাকে না।

IMG-20241124-WA0034.jpg

গয়নাবড়ি দেওয়া যে খুব সহজ কাজ তা কিন্তু নয়, এর তোর জোর শুরু হয় আগের দিন সকাল থেকে। প্রায় ৬-৭ ঘন্টারও বেশি বিউলির ডাল ভিজিয়ে রাখতে হয়, রাত্রি বেলায় বেটেও নিতে হয়। এবং ওই বেটে রাখা ডাল সারা রাত্রি ঢাকা হয়ে থাকতো। আর ভোর বেলায় আরো একবার শিলপাটায় বেটে নিত মা ঠাকুমারা। তারপর বেশ কিছু সময় ধরে ফেটিয়ে তার ফেনা তুলে নেয়ার পরে শুরু হয় আসল শিল্প কার্য।

IMG-20241124-WA0033.jpg

আমিও গতকাল সকালবেলায় অল্প পরিমান বিউলির ডাল ভিজিয়ে দিয়েছিলাম। কারণ প্রবাসে কখনো নিজে নিজে গয়না বড়ি দিইনি, তাই এখানকার রোদে ঠিকমত হবে কিনা সেটাও আমি বুঝতে পারিনি। পরীক্ষামূলকভাবে করছে যেহেতু অনেকটা ডাল নষ্ট করবো না ভেবেই অল্প পরিমাণ ভিজিয়ে ছিলাম। গতকাল রাতে যথারীতি ডালটা বেটে নিয়ে ঢাকা দিয়ে দিয়েছিলাম৷ সকাল সকাল আরো একবার মিক্সচার গ্রাইন্ডারে ঘুরিয়ে নিলাম। আমারতো শিলপাটা নেই তাই মিক্সচার গ্রাইন্ডারই অগতির গতি। মোটামুটি সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে বসে প্রায় আধ ঘন্টার উপরে ডালটা ফেটিয়ে ফেনা তুলে নেওয়ার পর শুরু করলাম গয়নাবড়ি দিতে। কত ছেলেবেলার স্মৃতি উঠে এলো, মনে মনে প্রসন্ন হলাম।

IMG-20241124-WA0032.jpg

ছোট থেকেই কাজটি করতে আমি ভীষণ ভালবাসতাম কিন্তু একেবারে যখন ছোট ছিলাম তখন আমার ঠাকুমা কিছুতেই করতে দিতেন না। তখন টুথপেস্ট এর মুখ কেটে নিয়ে, পলিথিন ফুটো করে তার মধ্যে ঢুকিয়ে তৈরি করে নিতাম বানানোর যন্ত্র। তার ওপর কাদা দিয়ে শুরু হতো আমাদের ছোটদের শিল্পকার্য। তবে আমি বরাবরই যেহেতু নিখুঁত প্রকৃতির মানুষ তাই মোটামুটি তেরো চোদ্দ বছর বয়স থেকেই মায়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বড়ি দিতাম। অনেকেই তার নতুন জামাইবাড়ি বড়ি পাঠানোর জন্য আমার কাছে নিয়ে আসত বড়ি দেওয়াতে। আর আমিও খুশি হয়ে দিতাম৷ আসলে এই কাজগুলো করতে আমায় কেউ জোর করত না। মনের আনন্দেই করতাম। আজও সেই শিল্প নেশাকে জাগিয়ে রাখতেই দিয়ে দিলাম গয়না বড়ি৷

InShot_20241124_225655084.jpg

চোঙের মতো যে জিনিসটা আমি ব্যবহার করেছি ওটা টিনের তৈরি। আমাদের গ্রামের হাটে বিক্রি হয়। এবার বাড়ি গিয়ে নিয়ে এসেছিলাম।

এত বড়ির গল্প বললাম কিভাবে বড়ি দিয়েছি তার একটি ছোট্ট ভিডিও বানিয়েছি। লিংকটি আপনাদের জন্য নিচে দিয়ে দিলাম। অবশ্যই দেখবেন আর মতামত জানাতে ভুলবেন না।

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণলাইফস্টাইল ব্লগ
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমআইফোন ১৪
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপইনশট


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

PUSS.zip_-_18.png

PUSS.zip_-_21.png

1000205505.png

Comments

Sort byBest