New to Nutbox?

ছোটবেলায় গরমের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে ছুটি কাটানো

28 comments

rme
89
17 days agoSteemit5 min read

kids-6545941_1280.jpg

Copyright Free Image Source : Pixabay


আমাদের ছোটবেলায় স্কুলে গরমের ছুটি পড়লেই আমি গ্রামের বাড়িতে চলে যেতুম । প্রায় একটি মাস মজাসে কাটিয়ে ছুটি শেষ হওয়ার মাত্র অল্প কিছুদিন পূর্বে শহরে ফিরতাম । গ্রামের বাড়িতে গ্রীষ্মের ছুটি কাটানোর একটা আলাদা মজা ছিল । সব চাইতে মজার যে জিনিসটা উপভোগ করতাম সেটি হলো অবাধ স্বাধীনতা । গ্রামের বাড়িতে বাবা বেশি দিন থাকতো না । আমাদের পৌঁছে দিয়ে ২-৩দিন মাত্র কাটিয়েই শহরে চলে যেতো । টিউশনি থাকতো এ জন্য বাবার গ্রামের বাড়িতে বেশিদিন থাকা হতো না ।

গরমের ছুটিতে গ্রামে বাবা না থাকাতে আমরা অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করতাম । পড়াশোনার চাপ প্রায় থাকতো না বললেই চলতো এই সময়টাতে । শুধু খেলা আর খেলা, আর তার সাথেই চলতো নানারকম মজার এডভেঞ্চার । আজ দু'এক কথায় কিশোর বয়সের সে সব দিনের কিছু স্মৃতিচারণ করবো ।

আমাদের ছোটবেলায় গ্রামে এতটা গরম পড়তে কখনো দেখিনি । আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না, কিন্তু গরমের সময় তার জন্য খুব একটা কষ্ট কখনো পেয়েছি বলে তো মনে পড়ে না । গরমের দিনে খুব ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠতাম । আমার মনে আছে ছোটবেলায় গ্রামে গরমের ছুটি কাটাতে যখন যেতুম ওই সময়টাতে সূর্য কেবল উঠি উঠি করছে এমন কাক-ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়তুম । শহরে আমার ছিল মর্নিং স্কুল । আটটায় ক্লাস শুরু হয়ে যেতো । সাড়ে সাতটার মধ্যে স্কুলে পৌঁছানোর নিয়ম ছিল, কিন্তু আমাকে যেতে হতো সাতটা বাজতে বাজতে । কারণ, বাবা ছিল এসিস্ট্যান্ট প্রিন্সিপ্যাল, তাকে স্কুল শুরুর অন্তত এক ঘন্টা আগে যেতে হতো । বাধ্য হয়ে তার সাথে আমাকেও যেতে হতো । তাই খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার চমৎকার একটা অভ্যাস তৈরী হয়েছিল ছোটবেলায় ।

কিন্তু, গ্রামে গেলে আরো ভোরে উঠতাম । আর বিশেষ করে গরমকালে তো ভোরে উঠতে দারুন লাগতো । সূর্য ওঠার মুহূর্তে ঘুম থেকে উঠেই চলে যেতুম আমাদের বাড়ির লাগোয়া ভিটেতে । এই ভিটে অনেকটাই বড় ছিল । ৬-৭ বিঘা জমি নিয়ে বিশাল একটা বাগান, পুকুর আর ডোবা, ঝোপ ঝাড় ছিল । বাগানে ছিল বেশ সাপের উপদ্রব । আমার ছোটদাদুর বাঁশঝাড় আর বেতঝাড় ছিল বেশ বড় । সেখানেও ছিল ভারী সাপ, শিয়াল আর গোসাপের উপদ্রব । বড় বড় বিশাল চেহারার মনিটর লিজার্ড বা গোসাপ বের হতো আমাদের গ্রামের পথে ঘাটে, ঝোপ-ঝাড়ে আর বাড়ির আনাচে কানাচে । কুমিরের মতো বিশাল চেহারা তাদের । সারাক্ষন সাপের মতো জিভ বার করতো ।

বাগানে গিয়ে আমাদের ছোটদের মেইন কাজই থাকতো কাঁচা আম, পাকা আম সব কুড়িয়ে আনা । তারপরে কাঁচা আম গুলো ভালো করে ধুয়ে বালতির ঠান্ডা জলে চুবিয়ে রাখতুম । এরপরে শুরু হতো বই পড়া । এক নাগাড়ে সকাল ন'টা অব্দি পড়া চলতো । এটাই ছিল সারা দিন-রাতের সেরা পড়া । এরপরে সকালে ভাত খেতে বসতুম । সকালের মেনুতে প্রায় প্রতিদিনই থাকতো নানান রকমের শাক-সবজি আর ভাজাভুজি, ডাল । কিছু কিছু এখনো মনে আছে । গরম ভাতে বাড়িতে তৈরী ঘী, উচ্ছে ভাজা, মৌরালা বা পুঁটি মাছ দিয়ে শুক্ত, কাঁচা আম বা সজনে ডাটা দিয়ে তিলে মুগের ঘন ডাল, শাক দিয়ে মাছের ঝোল থাকতো দুই তিন পদের, আর শেষ পেতে অবশ্যই বাড়ির দুধে আম-কাঁঠাল থাকতো ।

দারুণভাবে সাঁটিয়ে আমরা ছোটরা দলবেঁধে চলে যেতুম বাগানে । সাথে দু'তিনটে মাদুর থাকতো । আর থাকতো গল্পের বই, দাবা অথবা ক্যারম বোর্ড । বেশিরভাগ দিন ক্যারম বোর্ড নিয়ে যেতুম । একটা ঘন ছায়াওয়ালা আম গাছের নিচে দু'তিনটে মাদুর পেতে চলতো গল্প, আড্ডা আর দাবা বা ক্যারম খেলা । দুপুর অব্দি চলতো খেলা । আর সেই সাথে চলতো আম খাওয়া । মাঝে মাঝে ডাব খাওয়া হতো । আমি পাকা আম তেমন একটা পছন্দ করতাম না, তাই ডাবের জল আর ডাবের কচি শাঁস খেতুম পেট পুরে । এক একবারে ২০-২৫ টা অব্দি ডাব পাড়া হতো । খাওয়া দাওয়া মিটলে বাকি ডাবগুলো পুকুরপাড়ের আনারসের ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে ফেলতাম । পরের দিনের জন্য সঞ্চয় আর কী । এর পর স্নানের সময় হয়ে যেতে উঠে পড়তুম সবাই ।

ডিপ টিউবওয়েল চেপে ঠান্ডা শীতল জল তুলে সেই জলে স্নান করতাম আমরা ছোটরা সবাই এক সাথে ভীষণ মজা করে । এক ঘন্টা ধরে স্নান করে বাড়ি ফিরে গা মুছতে মুছতেই দুপুরের খাওয়ার ডাক পড়তো । আবার এক প্রস্থ ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সাথে টক-ডাল, মাছ ভাজা, দুপুরে পুকুর থেকে ধরা টাটকা মাছের ঝোল দিয়ে ভালোমতোন সাঁটিয়ে ফের আমবাগানে । এবার সঙ্গে থাকতো মাদুর আর বালিশ । গাছের ছায়ায় মাদুর পেতে একটু গড়িয়ে নিতাম সবাই । ঝির ঝিরে মিষ্টি হাওয়ায় ঘুম এসে যেত চোখে ।

বেলা একটু গড়ালেই তড়িঘড়ি সবাই উঠে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটতাম খেলার মাঠে । ব্যাট, বল, স্ট্যাম্প নিয়ে শুরু হয়ে যেত আমাদের ক্রিকেট ম্যাচ । সে কী খেলা ! দারুন উত্তেজনাপূর্ন সেইসব ম্যাচ খেলতে খেলতে একটা সময় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই দ্রুত মাঠ ছেড়ে বাড়ি ফিরতাম সবাই । এরপরে বড় একটা ছুরি, বালতি ভর্তি সকালে কুড়ানো কাঁচা আম, গামছা আর ঝিনুক নিয়ে চলে আসতুম শান বাঁধানো প্রকান্ড পুকুর পাড়টায় । তারপরে পুকুরের পুব পাশে গিয়ে নেমে পড়তুম আমাদের চাষের জমিতে । বিঘার পর বিঘা জুড়ে তরমুজ, বাঙ্গি, কুমড়ো, তিল আর ডাল চাষ করা হতো । আমরা তরমুজ আর বাঙ্গির ক্ষেতে নেমে যেতুম । মিষ্টি দেখে তরমুজ বা বাঙ্গি কেটে পেট ভরে খেয়ে আবার পুকুর পাড়ে চলে আসতুম ।

এবারে হাত-পা-মুখ ধুয়ে বাঁধানো ঘাটে বসে চলতো আড্ডা । সেই সাথে এন্তার কাঁচা আম ঝিনুক দিয়ে ছাল তুলে নুন আর কাঁচা লঙ্কা মিশিয়ে উস উস করে খাওয়া চলতো । সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা অব্দি এভাবে আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরে একটু বই নিয়ে বসতে হতো আবার । সাড়ে আটটায় আবার রাতের খাওয়া । রাতে ভাজাভুজি, শুক্ত, ডাল এসব খাওয়া নিষেধ ছিল । রাতের বেলা মেইনলি চলতো বড় মাছের কালিয়া আর কুঁচো মাছের ঝাল আর টক । রাতে আইটেম কম থাকতো কিন্তু খাওয়া বেশি হতো । কারণ বড় বড় মাছের নানান রকম পদ ছাড়া আর কিছু রান্না হতো না । ওই সব তো একটু বেশিই খেতে হয়, কি বলেন আপনারা ?

খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়তুম । রাত সাড়ে ন'টা বাজতে না বাজতেই ঘুমে একদম কাদা আমরা ।

এটাই ছিল গরমের দিনে আমাদের ছেলেবেলা ।


------- ধন্যবাদ -------


পরিশিষ্ট


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png


steempro....gif

»»——⍟——««

Comments

Sort byBest