New to Nutbox?

বাস্তব ধর্মী গল্প " ফেসবুক" অন্তিম পর্ব

20 comments

tanuja
82
2 years agoSteemit6 min read

facebook
image source: copyright freepixabay || image credit: geralt

বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন ? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ আমার সেই বাস্তব ধর্মী গল্পটির অন্তিম পর্ব আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

আমার সেই বান্ধবীর স্বামীর নাম " প্রদীপ" । আমি বললাম সাথী এটা তোর পারিবারিক একটা সমস্যা। আর এটা নিয়ে তোর স্বামীকে কিছু বলতে পারবো না। আর তোকে কি পরামর্শ দেবো বুঝতে পারছি না। সাথী বললো ওকে বলতে হবে না। কারণ ওকে বলে কোনো লাভ নেই। তুই আমাকে বল। আচ্ছা সাথী তুই সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত নেই কেন? তোর ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ , ইনস্টাগ্রাম কিছুই নেই। তুই তো পারিস এসব কিছুতে যুক্ত হতে। সাথী রেগে গিয়ে বললো তুই ও আমাকে এসব কথা বলছিস। আপনাদের আগেই বলি। সাথী খুব সাধারণ একটা মেয়ে। ওর মনে কোনো অহংকার নেই। ও সবসময় কাছের আপন লোকদের নিয়ে থাকতে ভালবাসে। তবে ওর স্বপ্ন ছিলো কলেজের প্রফেসর হওয়ার। আর ও ছিল আমাদের ক্লাসের ভিতর ফার্স্ট গার্ল। সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে দিলো ওর বাবা মা। সাথী আমাকে বলতো ওর ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এগুলো ওর ভালো লাগে না। এগুলো নিয়ে সাথীকে অনেকবার বলেছি। যে তুই সোশ্যাল মিডিয়া যুক্ত হওয়ার জন্য। কিন্তু ওই যে একই কথা। ওর ভালো লাগে না। যেনো একটা আদিম যুগের মানুষ।

আমি বললাম সাথী একটা কথা বলবো রাগ করবি না, কষ্ট ও পাবি না।আর আমাকে সত্যি কথা বলবি। সাথী বললো ওকে তুই বল। আর আমি তো তোকে সব কথা বলি। হ্যা তা তো বলিস! এবার তাহলে শোন সাথী। তোর স্বামী অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসে কিনা এটা জানিস। সাথী ভয় পেয়ে গেল।আর বললো আমি জানি না। আর যদি কাউকে পছন্দ করে তাহলে আমার কি হবে। আমি মরে যাবো তো। আমি রেগে গিয়ে বললাম বাজে কথা না বলে কাজের কথা বল। আর মরে গিয়ে কোনো সমাধান হয় না। এ জীবনে বেঁচে থেকে লড়াই করতে হবে। আর আমি তো পিছনে আসি। ওর সামনে ওকে সাহস দিচ্ছিলাম কিন্তু মনে মনে আমি ভয় পাচ্ছিলাম। কারণ এ গুলো যদি আমার সাথে হতো তাহলে আমি কি করতাম? কিন্তু সাহস হারালে চলবে না। আর সাথী আমার জীবনের বেস্ট ফ্রেন্ড। আর ও ছাড়া আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নেই। জীবনে বন্ধু তো অনেক পাওয়া যায় কিন্তু মনের মতো বন্ধু একজনই হয়। সাথী বললো এভাবে প্রায় বছরখানেক চলছে। একদিন আমি বিরক্ত হয়ে বললাম -
যথা রীতি প্রতিদিনের মতো একদিন প্রদীপ অফিস থেকে ৭.০০ দিকে বাড়ি ফিরলো। আর সে দিন ছিল আমাদের অ্যানিভার্সারি। বাড়ি ফিরে শুধু আমাকে বললো এক গ্লাস জল দেও বলেই সে রুমে চলে গেল।
আমি কিছুক্ষন পর জল নিয়ে ঘরে ঢুকে দেখি ফ্রেশ হয়ে খাটে শুয়ে ফোন দেখছে। আমি জল দিয়ে বললাম চা তৈরি করবো তুমি খাবে। প্রদীপ বললো আজ একটু কফি বানাও। আমি কিছু না বলে কফি বানাতে গেলাম। কফি নিয়ে রুমে গিয়ে তাকে দিলাম। ও আমার সাথে কোনো কথা না বলে ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আমি একটু রেগে গিয়ে বললাম প্রদীপ তুমি যেনো আজ কত তারিখ। প্রদীপ হেসে দিয়ে বললো আজ ১৪ ই ডিসেম্বর,কেনো কি হয়েছে? আমি দেখলাম তার মনেই নেই যে আজ আমাদের অ্যানিভার্সারি। আমি বললাম তারপর কি হলো সাথী? তুই প্রদীপকে কিছু বললি না। সাথী বললো এরপর আমি নরম স্বরে বললাম এখন ফোনটা রেখে আমার কথা একটু শোন। প্রদীপ বললো হ্যা শুনছি তুমি বলো। আমি তো সারাদিন একা একা বাড়ীতে থাকি, একটা কথা বলার মতো কেউ নেই। আর তুমি তো বাড়ি ফিরে ফোনে ব্যস্ত থাকো। আমার সাথে তোমার কথা বলার সময় নেই। আমি তো তোমার স্ত্রী আমার তো কিছু চাওয়ার থাকতে পারে। আমি ও তো চাই তোমার সাথে একটু সময় কাটাতে। তুমি অফিসে চলে গেলে আমি বাড়ীতে একা। তোমার মা - বাবাকে আসতে বললে ও তারা এসে থাকতে চায় না। আর এই খানে তো সবাই যার যার মতো থাকে। কেউ কারও সাথে দেখা হলে সৌজন্যবোধ টুকু তাদের নেই। সব যেনো এক একটা রামগরুড়ের ছানা। আর তুমি ও বাড়ীতে এসে ফোনে ব্যস্ত থাকো। এসব শুনে প্রদীপ বললো তুমি এখন ও সেই অজ পাড়াগাঁয়ের মেয়ে হয়ে থাকলে। একটু মডার্ন হও সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেখো অনেক বন্ধু পাবে। তোমাকে একটা আই ফোন দিলাম তা আলমারিতে শোপিস করে সাজিয়ে রেখেছো। তুমি এখন বাজে কথা গুলো বন্ধ করে এখান থেকে যাও।

সাথী বললো এরপর আমি রুম থেকে বেরিয়ে এসে তোকে ফোন দিলাম। বাকি টুকু তো তুই সবকিছু জানিস। আমি সব শুনে বললাম এই হলো কাহিনী তোর স্বামীর। শোন তুই একটা কাজ কর সাথী। তুই বাড়ি ফিরে গিয়ে একটা ফেসবুক খুলে নে। আর সে খানে বন্ধুদের সাথে চ্যাট করবি। মাঝে মাঝে তোর ছবি শেয়ার করবি। সব কিছু শুনে সাথী বললো আমি এ সব পারবো না আমার ভালো লাগে না। আরে বোকা তুই কি সত্যি সত্যি করবি নাকি। তুই তো ওকে ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে করবি। শোন সাথী রাগা রাগী কিছু করবি না কৌশলে সব কিছু করতে হবে। কথায় আছে না "কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হয়" । শুধু দায়িত্ব কর্তব্য টুকু পালন করবি। তারপর কি হয় আমাকে জানাবি।

সাথীকে সব কিছু বুঝিয়ে দিলাম। সাথী ওর বাড়ি ফিরে গিয়ে আমার কথা করতে লাগলো। এভাবে বেশ কয়েক মাস কেটে গেলো। একদিন সাথী ফোন দিয়ে বললো আমরা দার্জিলিং ঘুরতে যাচ্ছি চার দিন পর। আমি বললাম বাহ বন্ধু ঔষধ এ কাজ হয়েছে দেখি। সাথী বললো হ্যা অনেকটা হয়েছে। ও এখন অনেক টা সময় আমাকে দেয়। ও এক সপ্তাহ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে ঘুরতে যাওয়ার জন্য। তুই আসবি আমাদের সাথে। তুই আসলে অনেক মজা হতো। আমি হেসে বললাম আরে বোকা তোরা দুইজনে যাচ্ছিস আমি কি তোদের সাথে গিয়ে "কাবাব মে হাড্ডি" হতে চাই না। তোরা যা আর তুই ভালো থাকলে এতেই আমি খুশি। এরপর আমি ফোন কেটে দিলাম। তারপর ও আস্তে আস্তে সংসারের কাজে জড়িয়ে গেলো। আর আমি ও আমার পড়াশুনায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম। আর তখন নানা রকম চিন্তা। এক টেনশন রেখে আর এক টেনশন কি করে নিজের ক্যারিয়ার গড়বো। তাই খুব একটা বেশি কথা হতো না। আর এখনও মাঝে মাঝে ওর সাথে ভিডিও কলে কথা হয়। ও এখন দুই ছেলে মেয়ের মা হয়ে গেছে। তাই মাঝে মাঝে ভাবি এত বন্ধুত্ব ও এত ভালোবাসা এখন কোথায় হারিয়ে গেলো। আর এখন আমরা দুই জন দুই প্রান্তে। হাজার মন চাইলে ও আমাদের আর দেখা হবে না। শুধু কথা হবে।

সাথীর কথা মাঝে মাঝে খুব মনে পড়ে। সময়ের বিবর্তনে মানুষকে পরিবর্তন হতে হয় কিন্ত তারপর ও সে কখনও তার পুরনো স্মৃতি ও ছেলেবেলার কাটানো সময় ও ছেলেবেলার বন্ধুকে ভুলতে পারে না। তাই ভাবলাম তার কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করি। কারণ আপনাদের সাথে তো আমার শেয়ার করতে ভালো লাগে। আর আমার সেই বন্ধুর কথা আপনাদের সাথে গল্প আকারে তুলে ধরলাম।

আর জীবন চালাতে গেলে সব কিছুর প্রয়োজন হয়। কিন্তু অতিরিক্ত কোনো কিছু ভালো না। আর এই সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে অনেক কাছের মানুষ পর হয়ে যাচ্ছে। শুধু মাত্র দূরের মানুষকে অতিরিক্ত সময় দেওয়ার কারণে। আমি বলবো না যে গুলো খারাপ। এটাও জীবনের একটা অংশ। কিন্তু এর জন্য সব কিছু ভুলে গেলে চলবে না। পরিবারের মানুষগুলোকে ফেলনা মনে করলে হবে না। তোমার সেই পরিবারের মানুষগুলোর ও তো তোমার কাছে চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে। তাই আমাদের সবকিছু মেইন টেইন করে চলতে হবে। আর পরিবারের মানুষগুলোকে ও সময় দিতে হবে।

জানিনা আমার গল্প আপনাদের ভালো লাগবে কি না। কারণ সবার ধ্যান ধারণা এক না। এক একজন এক একরকমের হয়ে থাকে। আর যদি ভালো না লাগে কমেন্ট করে জানাবেন। আর ভালো লাগলে ও কমেন্ট করে জানাবেন। সব কিছু আপনাদের কাছে।

Comments

Sort byBest