ছোটবেলার বন্ধুকে আইবুড়ো ভাত দিলাম
4 comments
নমস্কার বন্ধুরা,
কিছুদিন আগে ছিল আমার এক বান্ধবীর আইবুড়োভাত বন্ধুদের তরফ থেকে।বান্ধবী বলছি ঠিকই, এই বন্ধুত্ব আমাদের ২০০৪ সাল থেকে । প্রায় কুড়ি বছর হতে চললো এই বন্ধুত্বের। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বন্ধু টিকে থাকাটাই অনেক বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে কুড়ি বছর মানে অনেকটা সময়।কিন্তু এখন সময়ের চাপে অর্থাৎ ব্যস্ততায় হয়তো সেভাবে কথা বলা হয়ে ওঠে না। তবুও যোগাযোগ থেকে গেছে ।আর সেখান থেকেই সেই বান্ধবী আজ বিয়ে ।
ভাবলেই পুরো বিষয়টা অবাক লাগে। যেন মনে হয় এইতো আমরা এক বেঞ্চে বসে গল্প করতাম ,একসাথে স্কুলে যেতাম। তার আবার বিয়ে! সময় যে কিভাবে চলে যায় বুঝতেই পারি না।তাই এই বন্ধুর বিয়েতে আমরা আইবুড়ো ভাত দেবো বলে ঠিক করেছিলাম।
আইবুড়ো ভাত অনুষ্ঠানটি এক কথায় বিয়ের আগে আইবুড়ো অবস্থায় আদরের সন্তানকে প্রত্যেক মা রান্না করে খাওয়ায়। অনুষ্ঠানের পরতে পরতে জড়িয়ে থাকে অপত্য স্নেহ আর ভালোবাসা ছোঁয়া। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে আপেক্ষিক ভাবেই সে অন্য পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠে তাই বাড়িতে তার বেড়ে ওঠা বিয়ের আগে সেখানে তার আনুষ্ঠানিকভাবে খাওয়া-দাওয়ারই আনুষ্ঠানিক নাম আইবুড়ো ভাত। আগে মা ছাড়াও মাসি, পিসি, কাকিমনিরাও বাড়িতে ডেকে খুব সুন্দর করে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করতো। এখন কিন্তু এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বন্ধু-বান্ধবদের আইবুড়ো ভাত খাওয়া দেওয়ার চল। এখন প্রিয় বন্ধুদের আমরা বিয়ের আগে সুন্দর করে আনুষ্ঠানিকভাবে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করি।
আর আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বিশেষ বন্ধুকে বিশেষ উপহার এই চল কিন্তু অনেকটাই জনপ্রিয় হয়ে গেছে বলে আমার মনে হয়। মা কাকিমারাই যে শুধু দেবে এমন কোনো কথা নেই ।বন্ধুবান্ধব দেওয়া যায়। সেই ভেবেই এখন আইবুড়ো ভাতের আয়োজন।
আমরা প্রত্যেকেই পড়াশোনা শেষ করে যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। আর কর্মসূত্রে সবাই আমরা কোন না কোনো সেক্টরে কাজ করছি ।তাই ওইভাবে সময় করে দেখা করা হয়ে ওঠে না কিন্তু এই অনুষ্ঠানটা আমরা ঠিক করেছিলাম ঠিক পুজোর পরপর করবো যখন একটু চারিদিকে চুরির আমেজ চলবে। এটা আমরা আয়োজন করেছিলাম দুর্গাপুজোর পরে আর কালীপুজোর ঠিক আগে। ওই সময়টা বেশিরভাগ বাঙালি ছুটির রেস চলে।
আমরা সল্টলেকের সপ্তপদী রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম। ওখানে খুব সুন্দর করে আইবুড়ো ভাতের অনুষ্ঠানের জন্য বরের টোপর আর বউদের মুকুট থাকে। এমনকি বরণ করার জন্য প্রদীপ ,ধান, দূর্বা ফুল সমস্তটাই সাজানো থাকে ।এতে করে আমাদের অনেকটাই সুবিধা হয়।
তাছাড়া আইবুড়ো ভাতের থালির ব্যবস্থাও থাকে যেখানে ভাত, ডাল, পোলাও, ইলিশ ,চিংড়ি ,ভেটকি ফ্রাই, লুচি আলুর দম ,পাবদা ,মটন কষা, তাছাড়াও শেষ পাতে থাকবে মিষ্টি, চাটনি, পাপড় সব মিলিয়ে একদম ইলাহি আয়োজন থাকে। এখানে আগে থেকে বুকিং করার কোনো প্রয়োজন নেই ।
আর বাঙালিয়ানায় বন্ধুর এই আইবুড়ো ভাতের আয়োজন করতে চাইলে সকলেই এই ধরনের রেস্টুরেন্টের আসতেই পারেন। এছাড়াও এরকম অনেক ধরনের রেস্টুরেন্ট আছে যেহেতু এই সপ্তপদী রেস্টুরেন্ট একদম আমাদের বাড়ির কাছে তাই জন্যই এই রেস্টুরেন্ট আমরা বেছে নিয়েছিলাম ।
দুপুর দুটোর মধ্যেই এসে গিয়েছিলাম ।অনেকদিন পর সবার সাথে দেখা হয়ে খুব ভালো লাগছিল ।বেশ কিছুক্ষণ গল্প করার সাথে সাথেই খাবার চলে এসেছিল ।তার আগে আমি আশীর্বাদ পর্ব সেরে নিলাম ।তারপর কবজি ডুবিয়ে খাওয়া দাওয়া ।দারুন একটা সময় কাটিয়ে কাটালাম। সবশেষে বিয়ে কার্ড পেয়ে ভীষণ খুশি হলাম। আর মন থেকে এটাই চাই আমার বান্ধবীর বিবাহিত জীবন অনেক সুখের হোক, ভালো থাকুক এবং পরিবারের সকলকে ভালো রাখুক। সব শেষে দারুন একটা মুহূর্ত এবং সময় কাটিয়ে বাড়ির দিকে চলে এলাম। এবার বিয়ে বাড়ি যাওয়ার অপেক্ষা🤭।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Comments