New to Nutbox?

ছোটবেলার স্মৃতিচারণ - মৎস্যশিকারী আমি

59 comments

rme
89
2 years agoSteemit6 min read


Copyright Free Image Source : Pixabay


প্রত্যেক বছর বর্ষাকাল এলেই এখনো মনটা ছটফট করে ওঠে ছোটবেলার মাছ শিকারের কথা মনে পড়লে । আমি আসলে দারুন ভালোবাসতাম মৎস্য শিকার করতে । বিশেষ করে বর্ষার দিনে গ্রামের পুকুর, খাল-বিলে মাছ ধরার যে কি মজা তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না । বড়শি আর জাল এই দুটোই ছিল আমাদের প্রধান হাতিয়ার মৎস্য শিকারে ।

অনেক ভাবেই আমরা ছোটরা মাছ শিকার করতাম । কেউ খ্যাপলা জাল ছুঁড়ে, কেউ বড়শি দিয়ে, কেউ অগভীর জলে জাল পেতে মাছ শিকার করতাম আমরা । আমি জাল ছুঁড়তে জানতাম না, আর ভোরবেলায় ধানখেতের মধ্যে অগভীর জলে জাল পাততে যেতেও মন সায় দিতো না । ওই কাজটিতে এক্সপার্ট ছিল আমার কাকাতো-জেঠাতো ভাইয়েরা ।

আসলে আমি একটু বাবু মানুষ ছিলাম ছোট্টবেলাতেই । কাদা মাখামাখি পছন্দ করতাম না বিশেষ । তাই, ভোরবেলায় ধানক্ষেত, ডোবা বা অগভীর বিলের জলে মাছ ধরার জাল পাততে যাইনি কোনোদিনও । তবে, পুকুরে বড়শি দিয়ে প্রচুর মাছ ধরেছি । খালে কাজিন ভাইদের সাথে জাল ছুঁড়ে মাছ মারার সঙ্গী হয়েছি । বিলের জলে নৌকো করে বড়শি দিয়ে মাছ ধরেছি । আর ডোবার জলে তো রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে মাছ শিকার করতাম সমবয়সীদের সাথে ।

বর্ষাকালে আমাদের গ্রামের কাঁচা রাস্তা বেশ অগম্য হয়ে পড়তো কাদায় । তাই, স্কুল ফাঁকি দিতে ইচ্ছেমতো । বাবা রাজি থাকলেও মা মোটেও স্কুলে পাঠাতে চাইতো না এসময়টায় । আমি তাই মাঝে মাঝে ক্লাসে যেতাম বর্ষাকালে । কিন্তু, প্রায় দিনই বাড়িতে থাকতাম । সকাল বেলাটায় নমো নমো করে কোনো রকমে পড়া শেষ করেই আমরা মেতে উঠতাম মাছ শিকারে ।

বাড়িতে সব সময়েই নানান আকারের ছিপ-বড়শি, হুইল মজুত থাকতো । এক এক রকম মাছের জন্য এক এক রকমের ছিপ-বড়শি বা হুইল । পাটকাঠি ছিপের ক্ষুদ্র বড়শি ছিল পুঁটি মাছ শিকারের জন্য । মজবুত বাঁশের চাঁছাছোলা কঞ্চির ছিপ আর মাঝারি আকারের বড়শি ছিল ফলুই, তেলাপিয়া, কৈ, শোল, টাকি, জাপানি পুঁটি, ট্যাংরা, বান, নাইলোটিকা এসব শিকারের জন্য । আর বেশ মজবুত প্রকান্ড হুইল বড়শি গুলো ছিল রুই-কাতলা, মৃগেল, বড় শোল, ভেটকি এসব শিকারের জন্য ।

খ্যাপলা জালও আমাদের বাড়িতে বেশ কয়েক রকমের মজুত থাকতো সবসময় । বড়, ছোট ও মাঝারি সাইজের খ্যাপলা জাল, কোনোটায় লোহার নল গুলো মোটা নিরেট আর ভারী, আবার কোনটায় সরু ফাঁপা ও হালকা । কোনোটার জালের ফাঁস বড়, কোনোটার মাঝারি আবার কোনোটার খুবই ক্ষুদ্র ।

পাতা জালও ছিল অনেক রকমের । লম্বা, খাটো, দীর্ঘ প্রশস্ত, কম প্রশস্ত । কোনোটার জালের ঘরগুলি খলসে, পুঁটি, বান মাছ ও পারশে ট্যাংরা শিকারের জন্য । আবার কোনোটার জালের ঘরগুলি তেলাপিয়া, নাইলোটিকা, শোল, টাকি শিকারের জন্য । আরেক প্রকারের পাতা জাল ছিল । খুবই ক্ষুদ্র জালের ঘরগুলো । চিংড়ি শিকারের জন্য শুধু এগুলো ।

ছোটবেলায় মাছ শিকার করতে গিয়ে অনেক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি আমি । আমার কাজিনেরা বড় গাঙে মাছ শিকার করতে গিয়ে কুমির অব্দি দেখে এসেছে । আমার অবশ্য সে রকম সৌভাগ্য কোনোদিনও হয়নি । তার আগেই গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসি । তবে, খালে একবার নৌকাডুবি হয়েছিল আমাদের মাছ ধরতে গিয়ে । একটুর জন্য নৌকোর তলায় চাপা পড়া থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম আমি । বেশ কয়েক ঢোক খালের ঘোলা জল পেটে যাওয়া ছাড়া আর তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি সেবার ।

এবার একটা মজার ঘটনা শেয়ার করে আজকে শেষ টানছি । জীবনে প্রথম পেন দিয়ে লিখে পরীক্ষা দেই আমি ক্লাস টু তে । এর আগে পাঠশালা, ছোট ওয়ান আর বড় ওয়ান এর সব কয়টি পরীক্ষায় আমি হয় শ্লেট বা পেন্সিল ব্যবহার করেছি । তো, সেবার বর্ষার শেষের দিকে মিড টার্ম এক্সাম পড়লো । সেদিন সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিলো আর হাওয়া দিচ্ছিলো বেশ । বর্ষার জোলো হাওয়া । গায়ে মাখলেই মনটা চিড়িং বিড়িং করে লাফাতো মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য ।

তো পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে আমি আর আমার এক সহপাঠী দুজনে মিলে প্ল্যান করতে থাকলাম যে কোনোরকমে পরীক্ষাটা দিয়েই বাড়ি ফিরে আজকে মাছ ধরতে যেতে হবে । এই ধরণের নানান পরিকল্পনায় অর্ধেক পথ এসে হঠাৎ আমরা একটা জিনিস লক্ষ করে আনন্দে দিশেহারা হয়ে গেলাম । রাস্তার এক সাইডে খুবই নিচু মতো ছোট্ট একটা ডোবা ছিল । বিলের নতুন বর্ষার জলে এখন সেটা একদম টইটুম্বুর । একেবারেই ছোট্ট একটা ডোবা । অথচ এখন মাছে ভর্তি । পরিষ্কার মাছের খলবলানি শোনা যাচ্ছে ।

রইলো পরীক্ষা মাথার উপরে । আমরা দু'জনে নেমে পড়লাম মাছ ধরতে । কিন্তু, ধরবো কি করে ? যতই ছোট ডোবা হোক হাত দিয়ে তো আর জলের মধ্যে মাছ ধরা সম্ভব নয় । তাই, মনের মধ্যে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দু'জনে ফের রওনা দিলাম স্কুলে । অঙ্ক পরীক্ষা তখনকার দিনে ছেলেদের কাছে রীতিমতো আতংক ছিল । সবাই ভীষণ নার্ভাস আর টেনশনে থাকতো ।

এই দিন আমিও খুবই টেনশনে ছিলাম । অঙ্ক পরীক্ষার ভয়ে নয় । পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে সেই ডোবায় মাছেরা থাকবে তো ? আমাদের আগে আর কেউ মেরে নিয়ে যাবে না তো ? এই চিন্তায় তখন পরীক্ষা মাথায় উঠে গিয়েছে । যাই হোক পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে আমি আর আমার সেই সহপাঠী মিলে সেই ডোবা থেকে মাছ ধরে তবে বাড়ি ফিরেছিলাম । হাতের কাছে কোনো সরঞ্জাম না থাকাতে আমি জামা খুলে আর মাথার ছাতা দিয়ে বহু কষ্ট করে বিশাল সাইজের একটা নাইলোটিকা ধরে ফেললাম ।

সেদিন বাড়ি ফিরে হুলুস্থুলু কান্ড ঘটে গিয়েছিলো । পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরলাম জামা ছাতা সব বিসর্জন দিয়ে প্রকান্ড একটা নাইলোটিকা হাতে ঝুলিয়ে । মাছের কানকোর ছিদ্র দিয়ে গাছের ছালের দড়ি ঢুকিয়ে হাতে ঝোলাতে ঝোলাতে একরকম নাচতে নাচতে বাড়িতে এসে ঢুকলাম । কান্ড দেখে মায়ের তো একদম চক্ষুস্থির । দাদা question paper চাইলো । আমি বললাম জামা ছাতা সব ভুলে রাস্তায় ফেলে এসেছি । আর জামার বুকপকেটে রয়েছে question paper ।

এরপরে কি ঘটলো সেটা আর নাই বা বললাম । তবে, হ্যাঁ সেবার অঙ্ক পরীক্ষায় আমি ১০০ তে ৯৯ পেয়েছিলাম । আমি জাতে মাতাল হলেও তালে ঠিকই ছিলাম । হে হে :)


পরিশিষ্ট


প্রতিদিন ১৫০ ট্রন করে জমানো এক সপ্তাহ ধরে - ৭ম দিন (150 TRX daily for 7 consecutive days :: DAY 07)


trx logo.png




টার্গেট ০৩ : ১,০৫০ ট্রন স্টেক করা


সময়সীমা : ৩১ জুলাই ২০২২ থেকে ০৬ আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত


তারিখ : ০৬ আগস্ট ২০২২


টাস্ক ২১ : ১৫০ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

১৫০ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : 79b899084a340546689a07cb9cd8afb0ba9cf8517a182bcf59986433ff75ca03

টাস্ক ২১ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png

Comments

Sort byBest