New to Nutbox?

পর্ব -১ | আমার ড্রাইফ্রুটস সফর ( 10% @shy-fox এবং 5% @abb-school এর জন্য বরাদ্দ )

4 comments

bull1
57
2 years agoSteemit5 min read

নমস্কার স্টীমইটের বন্ধুরা! সবাই কেমন আছেন? আশা করি ভালই আছেন। এইটা আমার প্রথম পোস্ট আমার বাংলা ব্লগে। অবশ্য আগেও একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা হচ্ছে পরিচিতিমূলক পোস্ট। যেটা সবাইকেই দিতে হয় আরকি। ওইযে সেই হাতে আইডি লেখা কার্ড তুলে সেলফি দেওয়া পোস্টটা। কিন্তু সবার সাথে কোন অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া বা কোন ঘটনা বলা তেমন পোস্ট আমার এই প্রথম। চেষ্টা করছি ঘটনাটা নিজের ভাষায় বর্ণনা করার। কতটা কি সফল হলাম না হলাম তা আপনারাই বিচার করবেন। তাছাড়া যেহেতু আমি এক্কেবারে নতুন‚ কোনোভাবে যদি গ্রুপের নিয়ম ভেঙ্গে ফেলি ভুল করে তাহলে আপনারাই একটু সতর্ক দেবেন বড় দাদা দিদি হিসাবে। এটা আমার অনুরোধ। দুই একটা ভুল নিশ্চয়ই হবে শুরুতে। আপনাদের পরামর্শ পেলে ঠিকই পরবর্তীতে তা শুধরে নিতে পারব।

ঘটনা হলো গতকাল আমি গিয়েছিলাম কোলে মার্কেটে। ওইযে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের শিয়ালদা স্টেশনের পাশে যে বিশাল বাজারটা বসে। সবাই নিশ্চয়ই কম বেশি শুনেছেন বা যারা এখানে এসেছেন মানে যারা বাংলাদেশ থেকে এখানে এসেছেন তারা হয়তো অনেকেই গেছেন ওখানে। আমিও ওখানেই গেছিলাম। অবশ্য গিয়েছিলাম বললে ভুল বলা হবে। ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে আমায় ওখানে পাঠানো হয়েছিল। কর্তৃবাচ্যে নয়‚ ভাববাচ্যে বুঝতে হবে বাক্যটা। আসলে আমার এক দুসম্পর্কের আত্মীয় থাকে বালিগঞ্জে। আমার মায়ের মামার পিসতুতো ভাই না পিসের মাসতুতো ভাই না এমনই কি যেন একটা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে পারিবারিক অনুষ্ঠানের ছবি দেখে যোগাযোগ হওয়া আর ক্রমশঃ প্রয়োজনভিত্তিক ঘনিষ্ঠতা হওয়া আরকি। তা সেই আত্মীয় পরশুদিন রাতে আমায় ফোন করেছিল। কেন? না‚ পরেরদিন আমি ফাঁকা আছি কিনা আর তার বাড়িতে যেতে পারবো কিনা তা জিজ্ঞেস করার জন্য।

ভাবলাম হয়তো কোন অনুষ্ঠান আছে। নেমন্তন্ন ফেমন্তন্ন করছে। বেশী কিছু না ভেবেই হ্যাঁ বলে দিলাম। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে সেটা কোন নেমন্তন্ন ছিল না। তাদের বাড়িতে ড্রাই ফুডস ফুরিয়ে গেছে। ড্রাই ফ্রুটস মানে ওই আখরোট‚ কাজু‚ কাঠবাদাম‚ খেজুর ইত্যাদি ইত্যাদি! মানে জানেনই তো আপনারা নিশ্চয়ই! এদিকে তারা কোথা থেকে না জানি খবর পেয়েছে যে কোলে মার্কেটে সস্তায় ড্রাই ফ্রুটস পাওয়া যায়। অগত্যা ওনাদের স্মরণ এসেছে যে আমার বাড়ি অমুক জায়গায় আর সেখান থেকে কোলে মার্কেট খুব কাছে! আর আমি চাইলেই তা কিনে তাদের বাড়ি দিয়ে আসতে পারি। সেই জন্যই এই আর্জেন্ট তলব।

st3.jpg
কোলে মার্কেটে লেবু ডিপার্টমেন্ট! কি দারুণ লাগছে না দেখতে?

5.jpg
কত জামাকাপড়! বুঝি না এত কমে কিভাবে বিক্রি করে!

সে যাই হোক একেতো আত্মীয়‚ তা সে হলই বা লতায় পাতায়। আত্মীয়দের সাথে সবসময়ই সম্পর্ক ভালো রাখা দরকার! তাছাড়া কেউ সাহায্য চাইলে তাকে যতটা সম্ভব সাহায্য করাটা অবশ্যই উচিত। তাই আমিও কোন দ্বিরুক্তি না করে রাজি হয়ে গেলাম পরের দিন কোলে মার্কেট থেকে ড্রাই ফ্রুটস কিনে তার বাড়িতে দিয়ে আসতে।

st1.jpg
কততো মৌমাছি! দেশি খেজুর আর আমসত্ত্বর উপর ঝাঁকে ঝাঁকে ছিলো!

পরেরদিন সকালে মাঠে গিয়ে ব্যায়াম করে‚ তারপর সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত পড়িয়ে তারপর স্নানটান করে‚ খেয়েদেয়ে নিয়ে বাসে চেপে বেরিয়ে পড়লাম মার্কেটের উদ্দেশ্যে। কোলে মার্কেটে আমার বাড়ি থেকে বেশি দূর না। আমি তো মাঝেমধ্যেই বাজারের ব্যাগ নিয়ে চলে আসে এখানে, বাজার করতে। মালপত্র বেশ সস্তাতেই পাওয়া যায়। আর পাইকারি নিলে বা একটু বেশি নিলে তো কথাই নেই‚ অন্য যে কোন বাজারে থেকে অনেক অনেক কম দামে পাওয়া যায় এখানে। তা আমি এসেছিলাম ওই কলেজস্ট্রিট হয়ে। এই কলেজস্ট্রিটে আমার একটা কাজ ছিল‚ সেটা সেরে আসলাম শিয়ালদা স্টেশনের কাছে কোলে মার্কেটে ড্রাই ফুসের দোকানে। দোকানদার ভালো লোক। আমার বহুদিনের চেনা। মাঝে মধ্যে ওনার দোকান থেকে টুকটাক কেনাকাটা করাই হয়। ভদ্রলোক সম্ভবত দক্ষিন ভারতীয়। মানে ওনাদের কথার টান আর নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা শুনে যা মনে হয় আরকি! যদিও তামিল নাকি তেলেগু না অন্ধ্র না অন্য কোন রাজ্যের লোক তা বুঝিনা।
এখন এই প্রসঙ্গে কথা উঠলই যখন‚ দক্ষিন ভারতের ভাষা নিয়ে ওই প্রচলিত গল্পটা শুনেছেন কি? সেই যে মুঘল সম্রাট আকবর তার সভাসদ আবুল ফজলকে বলেছিলেন এমন দুটো জিনিস খুঁজে আনতে যেগুলো বাইরে থেকে কিছুই বোঝা যায় না কিন্তু স্বাদ মিষ্টি! আবুল ফজল সারা ভারত চষে আকবরের সামনে হাজির করেছিলেন বাংলা থেকে আনা একটা আম আর দক্ষিণ ভারত থেকে আসা একটা মানুষ। কিন্ত কেন? কারণ বাংলার থেকে যে আম তিনি নিয়ে গেছিলেন সেটা ছিল বাইরে থেকে সবুজ কিন্তু ভেতরে পাকা এবং অসম্ভব মিষ্টি! আকবরের শর্ত মতো বাইরে থেকে দেখে কিছু বোঝা যাবে না কিন্তু স্বাদে মিষ্টি। আবুল ফজলের নাম অনুসারেই নাকি সে ফলের নাম হয়েছে ফজলি আম। অন্যদিকে দক্ষিণ ভারতের মানুষের কথাও উত্তর ভারতীয়রা কিছু বুঝতে পারেনা ( সম্পূর্ণ আলাদা দুটো ভাষাগোষ্ঠী বলে) কিন্তু তা শুনতে খুব মিষ্টি লাগে।

st2.jpg
এই দোকান থেকে সব কিনলাম। দোকানদারের ছবিটা ক্রপ করে দিতে হল ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করা হয়নি বলে।

যাইহোক যেখানে ছিলান। আমি গেলাম সেই মিষ্টিভাষী দোকানে। গিয়ে দেখি বিশাল ক্যাচাল হচ্ছে। চারিদিকে একটা ইউক্রেন ইউক্রেন ভাব। একটা লোক ঘন্টা খানেক আগে এসে বলে গেছে ১৩ কেজি কাজু স্টোররুম থেকে আনিয়ে রাখতে। ও নিয়ে যাবে। এখন এসে বলছে ১৩ কেজি না‚ ওর লাগবে আড়াই শো গ্রাম। ১৩ কেজি নাকি পরের দিন নেবে। সেই নিয়েই বিশাল ঝামেলা। দোকানদার তাকে এই মারে কি সেই মারে অবস্থা। ভদ্রলোক বলছে "কাজু নিতে হবেনা‚ তুই আমার ১৩ কেজি কাজু প্যাক করার সময়ের দাম দে"। খরিদ্দার লোকটা ততোধিক তেড়িয়া হয়ে বলে যাচ্ছে "আমি বললাম তো পরেরদিন নেব। তখন সব সুদ আসলে দাম মিটিয়ে দেব।" আর আশেপাশে সব লোকেরা ঘিরে দাঁড়িয়ে বিনা পয়সার সার্কাস দেখছে। ওদের উৎসাহ কোনো বাঁধা মানছে না। দুই দল ভাগ হয়ে তর্ক করছে দোকানদার নাকি খরিদ্দার কার যুক্তি ঠিক তা নিয়ে। সম্ভবত মারামারি শুরু হওয়ারও একটা সম্ভাবনা ছিলো। শুরু যে হয়নি সেটা ভাগ্য ভালো। যাইহোক‚ সেইসব তাত্ত্বিক আর প্রায়োগিক ব্যপারস্যাপার মিটলে আমি সেই দোকান থেকে কেজি খানেক কাজু‚ কাঠবাদাম আর কিশমিশ কিনলাম। দাম মেটালাম। আর তারপরেই মোবাইলে তাকিয়ে দেখি একি? ট্রেন আসতে বাকি আর মাত্র ১৫ মিনিট। এদিকে টিকিটও কাটা নেই। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হবে। সময় লাগবে। অগত্যা মালপত্র ভর্তি ব্যাগখানা কষে জড়িয়ে ধরে স্টেশনের দিকে দে ছুট। পা দুখানা সাথে থাকতে ট্রেন পাবনা মানে? ইয়ার্কি নাকি? যেতে যেতে অবশ্য টুক করে একটা ছবি তুলে নিতে ভুলিনি। এখানে দেব বলে।

st4.jpg
ঐইইই যে দূর থেকে দেখা যাচ্ছে শিয়ালদহ স্টেশন!

আজ এইটুকুই থাক। শিয়ালদহ স্টেশন আর বালিগঞ্জের ঘটনা পরের পোস্টে বলছি।

(চলবে)

Comments

Sort byBest