New to Nutbox?

একজন রাহেলা বানু এবং কিছু এলোমেলো চিন্তাভাবনা

13 comments

tithyrani
65
last month4 min read

|| আজ ২৫ মার্চ, ২০২৪ || রোজ: সোমবার ||

হ্যাল্লো বন্ধুরা

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসী, সবাইকে আমার নমষ্কার /আদাব। আশা করছি আপনারা সকলে ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও মহান সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদে ভালো আছি।আজ আপনাদের সামনে হাজির হলাম আবারো নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আশা করছি আপনাদের ভালোলাগা বা মন্দ লাগা টুকু আপনাদের মূল্যবান মতামত এর মাধ্যমে জানাবেন।


রাহেলা বানু। মোহাম্মদপুর এ উনি একটা ভ্যান নিয়ে পিঠা বিক্রি করেন। সাথে একটা গামলায় থাকে ছোলা বুট। তবে উনার পিঠার খুব বেশি ভ্যারিয়েশন না, মাত্র দুইটি পিঠা উনি বিক্রি করেন। চিতই পিঠা আর চাপটি পিঠা। সাথে থাকে ৩ রকমের ভর্তা। সর্ষে ভর্তা, মরিচ ভর্তা আর শুটকি ভর্তা। উনার বয়স বেশ ভালোই, তাই কাজেও কিছুটা স্লো আবার সহজে খুব বেশি কিছু মনেও রাখতে পারেন না।যেমন - পিঠা খেয়ে কে টাকা দিয়েছে, কে দেয় নি কিংবা কে কয়টা পিঠা খেলো, এসবের হিসেব তিনি খুব একটা মনে রাখতে পারেন না। কিংবা কেউ ২০ টাকার পিঠা খেয়ে ৫০ টাকার নোট দিলে টাকা ফেরত দেয়ার সময় তার মনে থাকে না যে কত টাকা ফেরত দিবেন। এসব কারণে অবশ্য তার দোকানে তেমন বেশি ভীড় ও হয় না।


তার সাথে আমার পরিচয়ের একটা মজার কাহিনি আছে। তার কাছে ১ম দিন একটি চাপটি পিঠা নিয়েছিলাম। খেয়ে বেশ মজাই লেগেছে। তাই ২য় দিন গিয়ে আবারো চাপটি পিঠা নিয়েছি। আমি আবার পিঠা নিয়ে আগে টাকা দিয়ে দিয়েছি৷ তবে সেদিন আরো একটি পিঠা খেতে ইচ্ছে করছিলো। তাই পরে আরেকটি পিঠা নিয়ে খেলাম। খাওয়া শেষে সেই পিঠার দাম দিয়ে হাটা দিয়েছি। পেছন থেকে শুনি উনি সমানে ডেকে যাচ্ছেন। আমি যেহেতু প্রথমে বুঝি নি যে আমাকে ডাকছেন, তাই বেশ কিছুদূর চলেই এসেছিলাম। পরে পেছনে তাকিয়ে দেখি উনি আমাকেই ডাকছেন! উনার কাছে ফেরত গেলাম। উনি বলে যে আর টাকা কই? মানে আমি পিঠা খেয়েছি ২ টা কিন্তু দাম দিয়েছি একটার! পরে উনাকে মনে করায় দিলাম যে প্রথম পিঠার দাম তো আমি পিঠা খাওয়ার আগেই দিয়ে দিয়েছি। তারপরে মনে করে বললেন, আচ্ছা, তাহলে ঠিক আছে। এমন ঘটনার আকষ্মিকতায় আমিও কিছুটা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম এবং মনে মনে বেশ খানিকটা বিরক্তও হয়েছিলাম উনার উপর।



কিছুদিন পরে আবার কি মনে করে উনার দোকানে গিয়ে বসলাম পাশে চেয়ার নিয়ে। পিঠা খেতে খেতে গল্প করলাম বেশ অনেকক্ষণ। জানলাম উনার দুই ছেলে। সামর্থ্য হওয়ার পর বিয়ে করে এখন দুই ছেলেই আলাদা আলাদা থাকেন, উনার খোঁজ রাখেন না। তাই উনি এভাবেই নিজের খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা করেন। তখন বেশ কিছু চিন্তাভাবনা মাথায় এলো। উনার ছেলেরা যখন উনার সাথে যোগাযোগ রাখে না, উনিও উনার মতোন একটা ব্যবস্থা কিন্তু করেই নিয়েছেন, তবুও ভিক্ষাবৃতি বেছে নেন নি। উনার এই ব্যবসায় উনি যে অনেক পটু তেমনটা কিন্তু মোটেও না। উনার অনেক কিছুই মনে থাকে না, তবুও উনি এটা দিয়েই উনার খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা যোগাড় করে ফেলছেন কিন্তু। তখন মনে হলো, আসলেই মানুষের চেষ্টা আর ইচ্ছা থাকলে কোন কিছু আটকা থাকে না। হাল ছেড়ে না দিলে মানুষের বয়স হয়ে গেলেও আত্নসম্মানের সাথে বাঁচা যায়, আত্নসম্মানের সাথে বাঁচতে জানতে হয়। অথচ অনেক শিক্ষিত পরিবারে অনেক বাবা-মা সন্তানের থেকে অনেক অপমান সহ্য করেও মনে হাজারো দু:খ কষ্ট নিয়েও মুখ থুবড়ে পড়ে থাকেন কি জানি কিসের জন্য। তারা প্রতিবাদ করতেও পারেন না, এভাবে রাহেলা বানুর মতোন ঘুরে দাঁড়াতেও পারেন না।

এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে
🌼 ধন্যবাদ 🌼

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
@rme as your proxy
witness_vote.png

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20211205_182705.jpg

আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি।
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।



Posted using SteemPro Mobile

Comments

Sort byBest