প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসী, সবাইকে আমার নমষ্কার /আদাব। কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করছি আপনারা সকলে ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় পরিবার সহ ভালো আছি, সুস্থ আছি। আজ ২৯ অক্টোবর, ২০২৪। ২৯ অক্টোবর আমার জন্য স্পেশাল একটি দিন। আজ সে নিয়েই আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলে এসেছি। তো চলুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে চলে যাই আজকের পোষ্ট টি তে.... ৷
আজকের দিনটি আমার জন্য অনেক স্পেশাল। কারণ, আজ একটি সূর্যমুখী ফুলের জন্মদিন, আমার মায়ের জন্মদিন 😍। মা , পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্বের কারণ। মা , পৃথিবীতে সন্তানের জন্য স্বয়ং ঈশ্বরের রূপ! একজন সন্তান কে পৃথিবীতে আনা থেকে শুরু করে, আজীবন মায়েদের ভূমিকা থাকে সন্তানের জীবনে! যখন সন্তান কথাও বলতে পারে না, নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না - তখন যেমন সন্তানের সবকিছু বুঝে যান একজন মা , তেমনি, সেই সন্তান যখন অনেক বড় হয়ে যায়, তখনও মাঝে মাঝে সবকথা বলতে পারে না, শেয়ার করতে পারে না, তেমন পরিস্থিতিতেও মা ঠিকই বুঝে যান!
আমার জীবনে আমি আজ যতটুকু যা, তার পেছনে সবচেয়ে বেশি যেই মানুষ টার অবদান, আজ সেই মানুষ টার জন্মদিন। আমি বরাবরই হোমসিক মানুষ। আমার বেশি আবেগের জায়গা নিয়ে কথা বলতে গেলেই গুলায় ফেলি, ঠিকঠাক গুছিয়ে প্রকাশ করতে পারি না। তবে, আমার ছোটবেলা থেকে দেখে আসা আমার আইডল আমার মা! নিজের চেয়ে পরিবারের অন্যের প্রয়োজন যায় কাছে সবসময়ই প্রায়োরিটি পেতো। বাবা সংসারে টাকা দিয়েই হাত পা ঝাড়া! আমাদের সংসারের বাকি সবকিছুই এক হাতে সামলে নিতো মা! শুধু আমাদের বাসাটা না, বাবার গ্রামের বাড়িতেও কখন কার কি প্রয়োজন, সেদিকেও মায়ের নজর এড়াতো না। বাবার লিমিটেড ইনকাম থেকে নিজের শখের কোন কিছুর জন্য খরচ করতে মাকে খুব কমই দেখেছি। আমাদের তিন ভাই বোন এর পড়াশোনা, টিউওশন থেকে শুরু করে যে কেনাকাটাতেও মা, আবার অসুস্থ হয়ে পরে থাকলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময়ও সেই মা! নিত্যদিনের কে কি খাবে, এ ওটা খায় না, সে সেটা খায় না- এসবের ম্যানেজার ও মা! আমার মা! ছোটবেলা থেকে দেখে আসা আমার সুপারম্যান! আমার আইডল!!
মাঝে মাঝে মা কে দেখে আগে খুব বিরক্ত হতাম! তখন মনে হতো, একটা মানুষের নিজস্ব শখ, নিজস্ব ভালোলাগা বলে কিছু থাকে না কিভাবে! একটা মানুষ বাকিদের সকলের জন্য এত ভাবে, অথচ নিজের প্রতি এত উদাসীন হয় কীভাবে! ইলিশ মাছ মায়ের খুব পছন্দের খাবার। সেটাও যেদিন রান্না হতো, মা ভালো পিস গুলো বাকিদের দিয়ে নিজের পাতে সেই লেজ অথবা মাথাই নিতো! আমি দেখতাম, আমার ভীষণ রাগ হতো! মায়ের সাথে রাগ হলে মা হেসে বলতো, তাহলে কি এগুলো ফেলে দিবো নাকি? মায়েরা বুঝি এমন ই হয়! মায়ের থেকে শিখেছি অনেক। তবে অনেক অনেক অনেক কিছুই শিখতে পারি নি! মায়ের মতো ঠিক আমি হতেও পারি নি!
আমার যে কোন কাজের অনুপ্রেরণা আমার মা! আমি পড়াশোনার দিক থেকে যতটুকু, কাজের দিক থেকে যতটুকু এবং আমার ব্যক্তিগত দিক থেকে যতটুকু, পুরোটার পেছনে অনুপ্রেরণা আমার মা! যখন ই আমি ভেঙে গিয়েছে, ভয়ে পিছিয়ে গিয়েছি- মা সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছে। জোর করে নি কোন কিছুতে, স্বাধীনতা দিয়েছে। তবে পথও মা দেখিয়ে দিয়েছে! তারপরেও অনেক ভাবে, অনেক সময়ে, মাকে নানাভাবে কষ্ট দিয়েছি! হয়তো অনেক শখই পূরণ করতে পারি নি মায়ের। তবে মা, ঠিকই তার আদরে কাছে টেনে নিয়েছে বারবার, ক্ষমা করেছে বারবার!
আজকের এই বিশেষ দিনে, আপনাদের কাছে আমার মায়ের জন্য দোয়ার দরখাস্ত রইলো। আমার মা যেন সুস্থ থাকেন, সুখী থাকেন। এখন ধীরে ধীরে বাবা-মা মিলে তাদের শখগুলো পূরণ করছেন। আপনারা দোয়া করবেন যেন এভাবে আরোও অনেক গুলো বছর সুস্থ থেকে তাদের অপূর্ণ শখগুলো একসাথে পূরণ করতে পারে। আমার মা যেন থাকে দুধে-ভাতে! ❤️❤️❤️
আজ আর কথা বাড়াচ্ছি না। আমার জন্য দোয়ার দরখাস্ত রইলো আপনাদের কাছে। সকলের সুস্থতা কামনা করে আজকের লেখা এখানেই শেষ করছি।
আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি।
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।