বেশ কিছুদিন পর আবারও সবকিছু নতুন ছন্দে ফিরে আসছে দেখে একটু ভালো লাগলো। যেহেতু দেশের এই পরিস্থিতির জন্য আমরা সবাই নেটওয়ার্কের বাহিরে ছিলাম তারজন্য আমাদের সব ধরনের কাজ বন্ধ ছিল। তবে পরিস্থিতি এখন একটু স্বাভাবিক হয়েছে বলে আবারও নতুন পোস্ট নিয়ে আপনাদের কাছে হাজির হলাম। আমার টাইটেল দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কি পোস্ট শেয়ার করতে চলে এসেছি। হ্যাঁ,আমি ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কিন্তু দেখেছি ২০২৪ সালের যুদ্ধ। আমার নিজের চোখে দেখা কিছু বাস্তব ঘটনা আজ শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। আপনারা নিশ্চয়ই টিভিতে যাত্রাবাড়ী,শনিআখড়া, রায়েরবাগ, নারায়ণগঞ্জ আর নরসিংদীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো দেখেছেন।
আমার বাসা শনিআখড়ার মেইন রোড থেকে একটু ভিতরে আর সেজন্য সেই সময়ের ঘটনার সাক্ষী হতে পেরেছি। ঢাকার মধ্যে অন্যসব জায়গায় আন্দোলন হলেও আমাদের এখানের এই জায়গা গুলো রেড জুনের মধ্যে ছিল। গত বৃহস্পতিবার আমরা রেস্টুরেন্ট যাওয়ার সময় দেখতে পাই মেইন রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখলাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি সেদিন থেকেই এদিকের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে যখন নেট অফ করে দেওয়া হয় তখনই বুঝতে পারি পরিস্থিতি খুবই খারাপ।
ছেলে বড় হচ্ছে বলে ওয়াইফাই লাইন রেখে ডিস লাইন কেটে দিয়েছিলাম আর টিভিও বিক্রি করে দিয়েছিলাম। সেজন্য আমরা একদমই কোনো খবর জানতে পারছিলাম না। তারপর সকাল বেলা বারান্দায় গিয়ে রায়েরবাগ থেকে ভেসে আসা গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেলাম। সারাদিন এই শব্দ শুনতে পেলাম। এরপর বিকাল বেলা আমার হাজবেন্ড বলে চলো বাহিরে গিয়ে দেখি কি অবস্থা। আমরা শুক্রবার বিকালে একদম শনিআখড়া মেইন রাস্তায় চলে যাই। সেদিন রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ দেখে অবাক হয়ে যাই। রাস্তার একপাশে গাড়িতে ভর্তি ছিল আর একপাশ ফাঁকা ছিল। আমার ছেলের মাথায় পতাকা বেঁধে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
কিন্তু ছবি তুলতে পারিনি, কারণ আন্দোলনকারীরা তুলতে দেয়নি। কেউ যদি ছবি তুলে বা ভিডিও করে তাহলে মোবাইল ভেঙ্গে ফেলা হয়। আমরা সেখানে প্রায় ২ঘন্টার মতো ছিলাম আর সেই সময় এত পরিমাণ ছাত্রদের রক্তাক্ত দেহ দেখেছি যা আগে কখনও কোনো আন্দোলনে দেখিনি। একটু পর পর দেখতে পেলাম রিকশা,ভ্যান কিংবা অ্যাম্বুলেন্সে করে রাগেরবাগ থেকে ঢাকা মেডিকেলের দিকে ছেলেদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরপর যখন সন্ধ্যা হয়ে গেলো তখন একজন ছাত্র এসে আমার হাজবেন্ড কে বললো বাচ্চা আর মহিলা মানুষ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন না,বিপদ হতে পারে। ছেলেটি বলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দু'জন মহিলা আন্দোলন দেখতে এসেছিল আর তারা হঠাৎ করে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
এই কথা শুনে ভয় পেয়ে আমরা চলে আসি। যেহেতু নেট বন্ধ ছিল তারজন্য এই পরিস্থিতি দেখতে সেখানে ড্রোন পাঠানো হয়। হঠাৎ করে দেখলাম সবাই উপরে কি যেনো দেখছে। এরপর তাকিয়ে দেখি কালো পাখির মতো দেখতে ড্রোন ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদিকে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যা না দেখলে বুঝতে পারতেন না। এই জায়গার কোনো দৃশ্যই ভালো করে টিভির খবরে দেখানো হয়নি। কারণ এদিকে কোনো ধরনের সাংবাদিক আসতে দেওয়া হয়নি। আমরা এই কয়দিন একদম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটিয়েছি। রাতে ঘুমিয়ে রয়েছি আর হঠাৎ করে গুলির শব্দ কানে ভেসে আসতো।
আমি এই প্রথম নিজের চোখে এমন আন্দোলন দেখলাম। এর আগে সবসময় এসব ঘটনা টিভিতে দেখেছি। এমনকি আমার ছেলে এখনও বলে আম্মু বাহিরে মনে হয় শব্দ শুনা যাচ্ছে। কখনও ভাবতে পারিনি আমাদের এদিকে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হবে। কারণ এর আগে কখনও এমন হতে দেখিনি। যাই হোক অনেক কথা বলেছি আজ আর নয় আবার দেখা হবে নতুন কোনো পোস্টের মাধ্যমে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন।
আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।
আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।