জীবনে প্রথম স্বচক্ষে দেখা একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা
9 comments
হাই বন্ধুরা!
আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি মর্মান্তিক একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প থেকে বেশ কিছু জানবেন। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি।
Infinix Hot 11s
২০১৩ সাল, এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি হয়েছে গাংনীর সুপরিচিত "মেপল কম্পিউটার" প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। এই কম্পিউটার এর মালিক ছিলেন তখনকার গাংনী পৌর মেয়র আশরাফ ভান্ডারী ছোট ভাই হাবিব। আমি ক্লাসে উপস্থিত। কম্পিউটারের ঘরটা ছিল একটি কম্পিউটার বিষয়ক যন্ত্রপাতি বিক্রয়ের দোকান এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। দোকানে দুইজন ছেলে ছিল। একজনের নাম তুতা আরেকজনের নাম সাগর। তুতা আমার সমবয়সী, সাগর ৫ বছরের ছোট হবে। তারা আমাকে বেশ সহযোগিতা করত। আমি বেশ সকাল করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য উপস্থিত হয়ে যেতাম। দশটায় উপস্থিত হলে দুইটাই বের হতাম। ভর্তি হওয়ার পর দেড় ঘণ্টার গন্ডি পেরিয়ে, বেশি ফ্রি ভাবে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ ছিল। ঠিক এমনই একটা দিন সকাল সাড়ে এগারোটার বা বারোটা বাজে। আমি বেশ মনোযোগ সহকারে কম্পিউটারে টাইপিং শিখছিলাম। ইতোমধ্যে আমি সহ কয়েকজন স্টুডেন্ট উপস্থিত ছিল তখন। বাইরে থেকে হঠাৎ বিকট সব দোকানে আসলো। আমরা যারা রুমের মধ্যে ছিলাম সবাই যেন চুমকে উঠলাম। অফিস থেকে বের হয়ে উত্তর দিকে অর্থাৎ গাংনীর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এর স্কুল গেটের দিকে লক্ষ্য করলাম। সেখানে স্কুলের স্টুডেন্টদের নিরাপত্তার জন্য রাস্তায় বিট দেওয়া ছিল। এছাড়াও সেখানে একটা বড় সাইনবোর্ড ছিল। ঘটনাটা সেখানেই ঘটেছে। একটি কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুরগামী লোকাল বাস মুখোমুখি সংঘর্ষ করেছে মোটরসাইকেলের।
মোটরসাইকেল আরোহী একজন গবাদি পশুর ডাক্তার ছিলেন। মোটরসাইকেলটা বাসের তলে পড়ে মানুষটাকে ছ্যাঁচড়াতে ছ্যাঁচড়াতে আনছে। এরপর বাসটা ধাক্কা লাগে রাস্তার পাশে থাকা স্কুলের সেই সাইনবোর্ডের সাথে। মূলত সেই সাইনবোর্ডের শব্দটা বিকট আকার ধারণ করেছিল। এরপর বিট ক্রস করে মোটরসাইকেল সহ মানুষটিকে ছ্যাঁচড়াতে ছেঁচড়াতে নিয়ে চলে আসছে। তবে ইতোমধ্যে আরো একটু সামনে দুই বোকা ব্যক্তি গল্প করছেন মোটরসাইকেলে বসে। সামনে সবজি বাজার, একজন আরেকজনের সাথে মোটরসাইকেলে দেখা হয়েছে তারা রাস্তার কোলে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন। বাসটা ততক্ষণ থামেনি, ব্রেক ফেল করে তলে চাপা পড়া মানুষটাকে নিয়ে চলে আসছে। রাস্তার পাশে গল্প করা ওই দুই মোটরসাইকেল আলা দ্রুত মোটরসাইকেল নিয়ে সরতে গিয়ে একজন বাসের সাথে বেধে যায়। তিনিও বেশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কেটে কুটে অজ্ঞান হয়ে যান। অতঃপর বাসটা এসে আমাদের কম্পিউটারের অফিসের সামনে থামে।
আমাদের সেই কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মালিক হাবিব বেশ ভয় পেয়ে গেলেন। ইতোমধ্যে আমার চোখের সামনে একজন ব্যক্তি ম্যাচ থেকে আগুন জ্বালিয়ে বাসের মধ্যে দিয়ে দিলেন আরো একজন ব্যক্তি সম্ভবত হোটেল থেকে একটা কাটে জ্বলন্ত আগুন নিয়ে বাসের মধ্যে ফেলে দিলেন। ততক্ষণের সকল যাত্রী বের হতে পারেনি অনেক যাত্রী বাসের মধ্যেই ছিল। একদিকে বের হতে যাচ্ছে মানুষজন আরেক দিকে পাবলিকের হইচই বেধে গেছে, তাই সকল যাত্রীরা বের হতে পারেনি। এদিকে অশিক্ষিত মূর্খ বরবর কিছু মানুষ আগুন দিয়ে দিল বাসের মধ্যে। কম্পিউটার অফিসটা হাবিব স্যারের নিজের বাসা বাড়ি এবং নিচে অফিস। সেখানে মোটরের পানির ব্যবস্থা থাকায় দ্রুত আশেপাশে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিলেন। যেন কোনখানে আগুন না লাগে। দ্রুত মানুষ জন সে সমস্ত যাত্রীদের বের করে দুরে হেটিয়ে দিলেন। গাড়ির নিচে চাপা পড়া মোটরসাইকেল এবং সেই ব্যক্তিকে লোকজন বের করে এনে এই হোটেলের কর্নারে রাখলেন। ততক্ষণে আমার তো হাত-পা এমন ভাবে কাঁপছিল আমি যেন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না। একদিকে এক্সিডেন্ট আরেকদিকে বাসে আগুন জ্বালিয়ে সেই আগুনের গতিবেগ আরো শত শত মানুষের চিৎকার চেঁচা মেচি। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে গিয়েও যেন কন্ট্রোল করতে পারছি না,কেন জানি অতিরিক্ত আমার হাতপা কাঁপছে। এদিকে পাশের দোকান থেকে কেউ পানি দেওয়ার জন্য পাইপ আনতে গেল। যেন বাসের আগুন দ্রুত নিভানোর যায়।
আমি শুধু এতোটুকুই দেখলাম ভাঙ্গা মোটরসাইকেল আর রক্তাক্ত কাটা ছেঁড়া লাশটা মানুষের টেনে বের করেছে এবং কয়েকজন ধরে সামাদ সোবান হোটেলের নিকটে রাখছেন। আর পরবর্তীতে যে মোটরসাইকেল এই বসে থাকা মানুষটা বেঁচে গেছিল তাকে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে। এরপর আমি আর সেদিকে তাকাতে পারলাম না গায়ের কাপুনিতে। নিজেকে কন্ট্রোল করার জন্য আবার এসে বসে পড়লাম অফিসের চেয়ারে। এরপর শান্ত সৃষ্ট হয়ে আমি আমার ভাইয়ের কাছে ফোন দিলাম। তারপর নিজেকে যখন একটু কন্ট্রোলে আনতে পারলাম, হাবিব স্যারকে বললাম স্যার আজকে আমি আর থাকবো না বাসায় চলে যাই। তিনিও বললেন আজকে দোকান বন্ধ রাখি, পরিস্থিতি ভালো নয়। রাস্তায় বের হয়ে দেখলাম এখনো বাসটা আগুনে পুড়ছে। অনেকেই বলাবলি করতে থাকলো বাসের আশপাশ থেকে সবাই সরে যাও বাস যে কোন সময় বাস্ট হতে পারে। আমিও দ্রুত রাস্তা পার হয়ে গলির মধ্য দিয়ে আমাদের গাংনী-হাটবোয়ালিয়া হাই রোডের দিকে চলে এসেছি। এরপর বাড়িতে পৌঁছে যায়। পরবর্তী দিন জানতে পারলাম আমার বন্ধু মারুফের কাছ থেকে। এই মর্মান্তিক এক্সিডেন্টে যিনি মারা গেলেন তিনি মারুফের সাথে মেহেরপুর টেকনিক্যাল কলেজে পড়ুয়া ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বড় ভাই। এই বিষয়টা জানার পর আমার আরো বেশি খারাপ লেগেছিল। তিনি ছিলেন একমাত্র উপার্জন ক্ষম ব্যক্তি তাদের ফ্যামিলিতে। তার উপর নির্ভর করে মারুফের সেই বন্ধুটা মেহেরপুর কলেজে লেখাপড়া করেন। আর এটাই ছিল আমার জীবনে প্রথম স্বচক্ষে দেখা মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফি | ঘটনাস্থল এরিয়া |
---|---|
বিষয় | অতীত ঘটনা |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s |
ঘটনার লোকেশন | গাংনী সবজি বাজার |
ব্লগার | Sumon |
ঠিকানা | গাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ |
Comments