আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজকে আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হলাম মোটরসাইকেল কেনার সেই অনুভূতি নিয়ে। অনুভূতিটা পড়ার মধ্য দিয়ে বেশ অনেক কিছু জানার সুযোগ পাবেন।
ফটোগ্রাফি সমূহ:
দেখতে দেখতে একটি বছর পার হয়ে গেল। আর এরই মধ্যে হয়ে গেল দেশের ব্যাপক পরিবর্তন। মোটরসাইকেল কিনবো, এমন অনুভূতি নিয়ে বাড়িতে বেশ আলাপ-আলোচনা চলতে ছিল। একটি পর্যায়ে গত বছর নভেম্বর মাসে সিদ্ধান্ত হল, একটি সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল কিনতে হবে আলমডাঙ্গা বাজার থেকে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা পুকুরে মাছ বিক্রয় করেই আলমডাঙ্গা বাজারে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে উপস্থিত হব। এভাবেই বেশ কিছুটা দিন চলতে থাকলো মাছ বিক্রয়ের আশায়। শীতের আগে মাছের বাজার বেশ পড়ে যায়। তাই জেলে ভাইরা আসতেও দেরি করে। একদিন মাছ ধরতে আসবে কথা দেয় আবার পাঁচ সাতদিন পিছিয়ে যায়। ঠিক এভাবে যায় হোক গত বছর নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখে জেলেরা এসে গেলেন মাছ ধরতে। হঠাৎ আব্বা বলে বলে বসলেন, পুরাতন মোটরসাইকেল নেব না নতুন মোটরসাইকেল নেব। তখন পুকুরে বেশ অনেক পাঙ্গাস মাছ ছিল। যখনই জেলেরা মাছ ধরতে আসলেন আব্বা সিদ্ধান্ত নিলেন বেশি মাছ বিক্রয় হোক বা না হোক আজকেই মোটরসাইকেল কিনতে যাব। আবার এমন হঠাৎ সিদ্ধান্ত এবং নতুন গাড়ি কেনার সিদ্ধান্তটা আমাদের দুই ভাইকে অবাক করে তুলল। আমি কখনো মোটরসাইকেল নেয়ার মতামত দেয়নি। কারণ বেশি দূরে তো চলাচল নেই। সামান্য বাজার, শ্বশুরবাড়ি, এটা সেটা কেনার জন্য এখানে সেখানে যাওয়া। তাই আমি মতামত দিয়েছিলাম একটি নতুন স্কুটার কেনার জন্য। এতে বাড়ির মেয়েরাও শিখতে পারবে এমনটা ভেবে।
কিন্তু আমার কথা কেউ রাখলেন না। সবাই হাসাহাসি করল। মেয়েরা ব্যবহার করে সেই জিনিস তোমাদের দুই ভাই মানাবে না। আমি বিভিন্ন দিকে ভেবেচিন্তে বলেছিলাম আর কি। প্রতিনিয়ত তেল কেনা, বাইরে কোথাও মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে গেলে পুলিশের ভয়, বিভিন্ন লাইসেন্স করে বেড়াও মেলা ঝামেলা। শেষমেষ সবাই আমাকে বলল অনেকদিন ধরে মোটরসাইকেল কিনব কিনব আসা পুরাতন গাড়ির চিন্তা মাথা থেকে আউট করে নতুন গাড়ি চিন্তা। এরমধ্যে স্কুটারের কথা বলে মন খারাপ করানো দরকার নাই। কি আর করার মাছ বিক্রয় হয়ে গেল। জেলে ভাইরা মোটরসাইকেল এর উপর মতামত দিলেন। দ্রুত মাছ বিক্রি হয় শেষ করে জেলেদের বিদায় করে আমরাও বামুন্দি বাজারের দিকে রওনা দিলাম।
মোটরসাইকেল কেনার বিষয়ে আমার বন্ধু মারুফ ও চাচাতো বোনের ছেলে মিঠু কে সাথে নিলাম। তারা মোটামুটি এ সম্পর্কে অনেকটা জানে এবং বুঝে। আর আমি তো শুধুমাত্র মোটরসাইকেল চালাতে শিখেছিলাম কিন্তু হাইরোডে নয়। এর জন্য বেশি একটা মাথা ঘামানোর প্রয়োজন মনে করছিলাম না। টিভিএস শোরুমে গিয়ে এই মোটরসাইকেলটা পছন্দ হলো সবার। এক লাখ ৩৩ হাজার টাকা দাম হল। কাছে ছিল এক লাখ চব্বিশ হাজার। বিভিন্ন অফারের মধ্য দিয়ে এক লাখ ২৬ হাজার টাকায় মিটমাট হয়। দুই হাজার টাকা বাকি রেখে মোটরসাইকেল দিতে রাজি হলেন। এদিকে আমার আব্বা এমন একজন ব্যক্তি, দুই পয়সা বাকি রাখতে পছন্দ করেন না। ততক্ষনে বেশ সন্ধ্যা রাত হয়ে গেছে। উনারা বললেন কালকে টাকা দিয়ে যাবেন এতেই হবে। তখনই আব্বা গাড়ির বাড়ি আনতে রাজি হলেন।
ওই মুহূর্তে আমার একাউন্টে বেশ চার হাজার, কি ছয় হাজার টাকা ছিল কিন্তু আমি সে টাকার কথা কিছুই বললাম না। কারণ পরবর্তী দিনে এমনিতে বাজার করতে আসতে হবে আমাদের। যাই হোক এ পর্যায়ে লক্ষ্য করে দেখলাম টাকার গুণে দেওয়া হল। আমাদের সেই টাকার মধ্য থেকে ৫০০ টাকার নোট নিয়ে দোকানের এক কর্মচারী দৌড়ে বাইরে চলে গেল। এরপর বিস্কুট নিয়ে আসলো। রুমের মধ্যে চা তৈরি করে আমাদের কিছুটা আপ্যায়ন করল। এরপর আমার ভাই আব্বা আরও যারা সাথে ছিল সবাই রিজার্ভ গাড়িতে বাড়ি চলে আসলো। এদিকে মোটরসাইকেলটা আমার বন্ধু মারুফকে পরীক্ষা করতে দেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে আমার বামুন্দি বাজারের নোয়া খালুটা উপস্থিত ছিলেন। তিনি সেখানে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। তখন দেখি শোরুমের লোকজন আমাদের দুজনকে ডেকে বললেন,তোমরা কালকে টাকা দিলে হবে দশ দিন পরে দিলেও হবে, টাকা নিয়ে টেনশন নাই। তখন আমরা বলে আসলাম, না আমরা কালকে টাকা দিয়ে যাব। আমার আব্বা কখনো বাকি রাখতে পছন্দ করেন না। আর এর পরে আমরা দুই বন্ধু নতুন গাড়ি নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। আর এভাবেই দেখতে দেখতে একটি বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখন শুধু আফসোস গাড়ির কাগজ পাতি করতে পারলাম না পিতা-মাতার অসুস্থতার জন্য। কারণ তাদের পিছে প্রচুর ঔষধ বাবদ ও ডাক্তার বাবদ খরচ হতেই আছে। আপনারা সবাই আমার আব্বা আম্মার জন্য দোয়া করবেন। আর দোয়া করবেন যেন ঠিকভাবে পথ চলতে পারি।