কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমি আপনাদের দোয়ায় মোটামুটি অনেক ভালো আছি। সকলকে শুভকামনা জানিয়ে শুরু করছি নাটক রিভিউ পোস্ট। নাটকের নাম 'উড়ে যায় বকপক্ষী', যা আমার অতি প্রিয় একটি নাটক। নাটকটির মূল পর্ব ২৬ টি। আজ আমি আপনাদের মাঝে ষষ্ঠ তম পর্ব রিভিউ আকারে শেয়ার করব। আশা করি রিভিউ করা এই পর্বটি, আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।
❤️স্ক্রিনশট: ইউটিউব❤️
নাটকের বিশেষ তথ্যঃ
নাম
উড়ে যায় বকপক্ষী
রচনা
হুমায়ূন আহমেদ
পরিচালক
হুমায়ূন আহমেদ
অভিনয়ে
মেহের আফরোজ শাওন,রিয়াজ,চ্যালেঞ্জার,মাসুম আজিজ,ফারুক আহমেদ,স্বাধীন খসরু,এজাজুল ইসলাম,ড. ইনামুল হক,সালেহ আহমেদ সহ আরো অনেকে।
হুমায়ূন আহমেদের বহুল আলোচিত নাটক উড়ে যায় বকপক্ষী। এ নাটকের ষষ্ঠ পর্বের শুরুতেই দেখা যায় ফজলু চাচার জীবনের ট্রাজেডি নেমে আসতে। কারণ তার মাথায় সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে। সে গানের দলের একজন দোতারা বাজক। মাথার সমস্যার কারণে ঠিকভাবে আর অংশগ্রহণ করতে পারে না। তার নিজের একটি মুদি দোকান আছে সে দোকানটাও ঠিকভাবে চালাতে পারছে না। আর এমন পরিস্থিতিতে তার পরিবারের ভাই এসেছে বোনকে তালাক দিয়ে নিয়ে যেতে। তার মনে বড়ই কষ্ট, বউ তালাক হয়ে চলে যাবে। তাই উনি বউয়ের উপর মায়া রেখে ৩০০ টাকা দিয়ে একটি বাজার থেকে শাড়ি কিনে বাড়ি ফিরছেন। পথের মধ্যে তার ওস্তাদের সাথে দেখা, উনার কাছে জানালেন। পরবর্তীতে গ্রামের ইলেকশনে দাঁড়ানো সোলাইমান মাতব্বরের সাথে দেখা, উনার কাছেও এ বিষয়টা কথায় কথায় জানিয়ে ফেললেন।
🌻স্ক্রিনশট: ইউটিউব🌻
ফজলু চাচার কুটুম এসে উপস্থিত তার বাড়িতে। সে প্রথমত চেয়েছিল গ্রামের মানুষ ডেকে তালাক নেবে। কিন্তু পাগলের মুখের অতিরিক্ত পাগলামি কথাই সে রেগে গেল। ফজলু চেয়েছিল নতুন কেনা শাড়িটা তার বউয়ের জন্য দি কিন্তু কিছুতেই কুটুম শাড়িটা না নিয়ে হাত থেকে ফেলে দিল মাটিতে। ফজলু এটা বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে ইলেকশনের পরে তালাক দিলে কেমন হয়, এতেই ক্ষিপ্ত হয়েছেন তার কুটুম। কারণ তার মাথা যদি ঠিক থাকতো কখনোই তালাক নিতে চাইতো না। হয়তো কুটুম এর কাছে অনুরোধ করতো বউকে যেন না নিয়ে যায়। তাই তার কুটুম সুনিশ্চিত হল সত্যি তার মাথা গেছে, তাই বোনকে আর কিছুতেই রাখলো না।
🌻স্ক্রিনশট: ইউটিউব🌻
এদিকে ওস্তাদ মজিদের গানের দলে নতুন যে মর্জিনা নামের মেয়েটা এসেছে, সে সবসময় তাদের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা। পুষ্প এবং তার বাবা যখন বসে গল্প করছে এই মুহূর্তে হঠাৎ সে উপস্থিত হয়ে বৈদেশি হাসান এর নামে দুর্নাম সৃষ্টি করে। এতে ওস্তাদ খুবই কষ্ট পায় এবং রাগান্বিত হয় মনে মনে চিন্তা করতে থাকে হাসানের হাত কেটে দেওয়া। কিন্তু মর্জিনা যে রঙ্গ করেছে এতে খুবই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল মজিদ মিয়া।
🌻স্ক্রিনশট: ইউটিউব🌻
এদিকে মাতব্বর সোলায়মান মিয়ার মন ভালো নেই। সে ইলেকশন করবে এতে তার বউ রাজি নয়। তাই তাদের মধ্যে মৌনদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। এতে সোলায়মান মিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে বউয়ের সাথে রাত্রে না ঘুমিয়ে, গাছ তলায় ঘুমাবে। তার বাড়ির কর্মচারী বিছানা ঠিক করে দিচ্ছে গাছ তলায়। এমন মুহূর্তে তার পরিবার মায়ার সুরে কথা বলে ঘরে নিয়ে গেল। বউয়ের এমন সুন্দর ভালবাসা পেয়েছে খুবই খুশি হয়ে ঘরে চলে গেলেন।
🌻স্ক্রিনশট: ইউটিউব🌻
বৈদেশিক হাসান, গানের ওস্তাদ মজিদ মিয়ার বাসায় আসার এক মাসের মধ্যে বাঁশি বাজানো শিখে গেছে, এমন একটি অবাক করা কাণ্ড শুনে মজিদ মিয়া অবাক হয়ে গেলেন। এতে গানের আসরের আয়োজন করা হবে। কিন্তু ওদিকে ফজলু চাচার স্ত্রীকে তার কুটুমে নিয়ে চলে গেছে তালাক দিবে বলে। তাই তার মন খারাপ। এজন্য সে গানের আসরে না গিয়ে বসে রয়েছে গাছ তলায়। হঠাৎ রাতে মর্জিনা বাড়ির আনাচে-কানাচে ঘুরতে লক্ষ্য করে দেখে ফজলু বসে রয়েছে তাই তাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে গানের আসরে পাঠিয়ে দিল, তার মতলব হয়তো খারাপ রয়েছে এই জন্য। পরবর্তীতে সবাই যখন গানের আসরে চলে গেল, তখন মর্জিনা বৈদেশীর ল্যাপটপ সহ যাবতীয় ইলেকট্রনিক জিনিস চুরি করে পালিয়ে গেল।
🌻স্ক্রিনশট: ইউটিউব🌻
রাতে গানের আসর শেষ করে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে, সকালবেলায় হাসান লক্ষ্য করে দেখে তার জিনিস চুরি হয়ে গেছে। এরপর সবাই সন্দেহ করে মর্জিনা এ কাজ করেছে। এরপর মর্জিনাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। পরবর্তীতে একটি দোকান থেকে মর্জিনাকে পুলিশে অ্যারেস্ট করে। এদিকে হাসান তার জিনিস হারিয়ে নিরুপায়। সাথে পুষ্পর কিছু জিনিস চুরি হয়েছে। তবে হাসান পুষ্পকে সান্ত্বনা দিয়েছে তার খুব শীঘ্রই ভালো একটি পাত্রের সাথে বিয়ে হলে,তার হারানো জিনিস এর মত জিনিস কিনে দিবে। নাটকের এই পর্বের শেষ দুঃখের লক্ষ্য করা যায় নতুন একটি মানুষের আবির্ভাব ঘটে পুষ্পদের গ্রামে যার নাম জালাল।
🌻স্ক্রিনশট: ইউটিউব🌻
ব্যক্তিগত মতামত:
আমি গ্রামের নাটক খুবই পছন্দ করি। ইট পাথরের মাঝে যতই হাস্যরসাত্মক অভিনয় হয়ে থাক না কেন সেগুলো যেন আমার কাছে তেমন আনন্দদায়ক লাগে না। এ নাটকটা গ্রামীণ পর্যায়ের। এখানে গ্রামীন অনেক সৌন্দর্য ফুটে ওঠে হাস্যরসাত্মক অভিনয়ের পাশাপাশি। এই পর্বে আমি বেশি লক্ষ্য করেছি বাইরের গানের দলের মেয়ে মর্জিনা মজিদ মিয়ার গানের দলে আসার পর থেকে অনেক সমস্যা সৃষ্টি করেছে। অবশেষে বৈদেশি হাসানের ল্যাপটপ ডলার ক্যামেরা সহ অনেক কিছু চুরি করে পালিয়ে যায়। আরেক দিকে ফজলু চাচার ব্রেনের সমস্যা হওয়ায় তার কুটুমরা ফজলু চাচা কে মান্য না করে তার পরিবারকে নিয়ে চলে যায়। হয়তো এমন জামাইয়ের সাথে বোনকে আর রাখবে না তালাক দিয়ে দিতে পারে। এখানে হাস্যকর ঘটনার চেয়ে দুঃখজনক দুইটা ঘটনা বেশি ফুটে উঠেছে। তবুও নাটকের সৌন্দর্য বিস্তার লাভ করেছে এই অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। আশা করি পরবর্তীতে আরো নতুন কিছু দেখার সুযোগ মিলবে এই থেকে। এদিকে গ্রামের মাতব্বর সুলাইমান সাহেব ইলেকশন করবে। হয়তো এই নিয়ে বিস্তারিত আরো অনেক সৌন্দর্য কিছু খুঁজে পাবো। তবে বেশি ভালো লেগেছে সুলাইমান মিয়ার পরিবার তাকে মন থেকে ভালোবাসে বলে, রাতে গাছ তলায় ঘুমাতে না দিয়ে ঘরে ডেকে নিয়ে যান। এই সকল বিষয় বিবেচনা করে আমার কাছে নাটকটা দশটা নাটকের মধ্যে একটি। যেখানে সর্ব শ্রেণীর মানুষের দেখার উপযোগী।
ব্যক্তিগত রেটিং:
৯/১০
নাটকের লিংক
Loading iframe
রিভিউটা ভিজিট করার জন্য ধন্যবাদ।
আমার পরিচয়
আমি মোছাঃ সিমরান জারা। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সদস্য সুমন জিরো নাইন এর পরিবার। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর। আমি একজন গৃহিণী। আমি ফটোগ্রাফি, রেসিপি পাশাপাশি ব্লগ করতে বেশি পছন্দ করে থাকি। এছাড় বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে ভালো লাগে। আমি এসএসসি পাশ করেছি। গাংনী ডিগ্রী কলেজে অধ্যায়ণরত রয়েছি।