শিক্ষাগুরু,আমাদের যত গুরুজন আছেন তাদের মাঝে বাবা মায়ের পরেই যার স্থান তিনিই শিক্ষাগুরু।যদিও আমাদের প্রথম শিক্ষক আমাদের মা।কিন্তু তারপরেও আমাদের শিক্ষজীবন শুরু হয় যাদের অধীনে তারাই আমাদের প্রকৃত শিক্ষাগুরু।
আপনাকে যদি কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ পেশা বেছে নিতে বলা হয় আপনি হয়ত বেছে নিবেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার,পুলিশ, সেনা কর্মকর্তা।একজন প্রাইমারি বা হাইস্কুল শিক্ষকের কথা কখনো আপনার মাথাতেই আসবে না।কিন্তু একটু যদি গভীরভাবে চিন্তা করে দেখেন তাইলে দেখবেন সেই প্রাইমারির শিক্ষক/শিক্ষিকাগণ ব্যতীত এই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার,সেনাকর্মকর্তা কেউ গড়ে উঠত না।
এজন্যই শিক্ষকদের বলা হয় জাতি গঠনের কারিগর। ভাল শিক্ষক ব্যতীত ভাল জাতি গড়ে তোলা কখনোই সম্ভব না।যদিও আশেপাশের পরিবেশ ও গুরুতপূর্ণ। তারপরেও ভাল শিক্ষক পারেন একটি শিশুকে একজন আদর্শমানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে।একজন শিক্ষক একজন মৃৎশিল্পীর মত।প্রতিটি শিশু নরম মাটির তালের মত। শিক্ষক যেভাবে আকার দেবেন সেভাবেই শিশুরা গড়ে উঠবে।
আমার সৌভাগ্য বলতে হবে, আমি ছোট থেকে যতজন শিক্ষক এর সংস্পর্শে এসেছি প্রত্যেকেই অসাধারণ প্রজ্ঞা ও ব্যক্তিত্বের মানুষ ছিলেন।তাদের আদর্শ ছিল আলাদা মাত্রার। আমি সর্বশেষ যার মেন্টরশিপের অধীনের ছিলাম তিনি আমাদের ভার্সিটির associate-proffesor. আমার বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খুব দূরে হবার কারনে ক্লাস সেভাবে করা সম্ভব হত না,কারন ক্লাস শুরু হত অনেক সকালে।
সেজন্য আমরা বেশ কয়েকজন ম্যাম এর কাছে প্রাইভেট ব্যাচে ভর্তি হই। তবে এটাকে প্রাইভেট টিউশন না বলে মেন্টরশিপ বলাই ভাল।কারন সেই প্রথম দিনই ম্যাম আমাদের বলে দিয়েছিলেন আমি তোমাদের দেখিয়ে দেব,যেটা বুঝবে না বুঝিয়ে দেব।তবে পড়াশোনা তোমাদের নিজেদের করতে হবে।আমি পরীক্ষা নেব আর যেটা পারবে না সেটা বুঝিয়ে দেব।
আমি ছিলাম একটু ফাকিবাজ,প্রথমে দুই এক দিন মিস দিয়েছিলাম।তৃতীয় দিন বাড়িতে ফোন।এরপর বাড়িতে আমার উপর বকার ট্রেন চলল।যাই হোক এরপর থেকে পড়াশোনায় সিরিয়াস হতে হল।পরীক্ষায় মার্ক কম আসলে বা একদিন মিস গেলেই বাসায় ফোন। তখন মনে হত এ কি অত্যাচার?এখনো কি ছোট বাচ্চা আছি নাকি? তবে এখন বুঝি কতটা উপকার হয়েছে।
গত পড়শু আমার অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফলাফলা প্রকাশ হয়েছে।খুব ভালভাবেই পার হয়েছি।আর পেছনে ম্যাডামের অবদান অনেকখানি।তাই সেদিন রাতেই ম্যামের প্রাইভেটে আমরা যতজন ছিলাম সবাই মিলে প্ল্যান করলাম ম্যাম এর সাথে দেখা করতে যাওয়া প্রয়োজন।এরপর ম্যাম এর সাথে কথা বলে আমরা পরেরদিন দুপুরে সময় নিলাম।
পরের দিন সবাই পৌরপার্কে একজায়গায় হলাম,আমি অবশ্য আমাদের এলাকার বিখ্যাত দই নিয়েছিলাম।তারপরেও সবাই একজায়গায় হবার পর সিদ্ধান্ত নিলাম মিষ্টি আর ম্যাম এর জন্য গিফট কেনা হবে।গিফট নিলাম একটি ঘড়ি,ডাইরি আর দুইটি সুন্দর কলম।
এরপর আমরা যথাসময়ে ম্যামের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম। অনেকদিন পর আবার সেই রুমে ঢুকে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লাম। তারপর প্রায় দুইঘন্টা ম্যামের সাথে কথা বললাম আমরা। ম্যাডাম ও আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে উপদেশ দিলেন,সেই সাথে আরো বেশ কিছু গাইড লাইন দিলেন। এরপর ম্যাডাম এর থেকে মাফ ও দোয়া নিয়ে আমরা চলে আসলাম।