রবিবারের আড্ডা - পর্ব ৫৭ | জীবনের গল্প - পর্ব ২

shuvo35 -

ব্যানার ক্রেডিট @hafizullah

সবাইকে স্বাগতম জানাচ্ছি আমার বাংলা ব্লগের নতুন আয়োজন জীবনের গল্পের শো-তে । মূলত আমরা যেহেতু প্রথম থেকেই বলেছিলাম, রবিবারের আড্ডার কিছুটা ভিন্নতা হবে, ঠিক সেই ভিন্নতার জায়গা থেকেই, এই সংযোজন। মানুষের জীবনে কত গল্পই তো থাকে, কত সুখস্মৃতি থাকে, থাকে পাওয়া না পাওয়ার অভিজ্ঞতা কিংবা হারিয়ে ফেলার তিক্ততা , কিংবা থাকে সফলতার হাজারো গল্প, যা হয়তো অনায়াসেই, অন্য কাউকে অনুপ্রাণিত করে ফেলে মুহূর্তেই। এই গল্পগুলো হয়তো অজানাই থেকে যায়, আমরা আসলে কান পেতে থাকি, এই গল্পগুলো শোনার জন্য। এইজন্য বাংলা ব্লগ আয়োজন করেছে, জীবনের গল্প। যেখানে অতিথি তার নিজের জীবনের গল্প অন্যদের সামনে অনায়াসেই বলে ফেলবে এবং অতিথি নিজের থেকেও বেশ হালকা হবে, সেটা হয়তো মনের দিক থেকে।

আজকের অতিথিঃ @tuhin002
ভেরিফাইড সদস্যঃ আমার বাংলা ব্লগ

বন্ধুরা তাহলে চলুন, অতিথির জীবনের ছোটবেলার দুরন্তপনার প্রেমের গল্প শুনি ।

তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি আর চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে আমার পরিচিত ছোট ভাই সুমেন। সুমী ছিল তার ছোট বোন। তার বোনকে আমার প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায়। যদিও আমি তখন ছোট ছিলাম, তারপরেও অন্যরকম একটা আকর্ষণ কাজ করতো সুমীর প্রতি। সুমী দেখতে প্রচন্ড সুন্দরী ছিল। সেই সময়ই আমাদের গ্রামের অনেকেই সুমীর পিছনে ঘুরতো, তবে সবাইকে অতিক্রম করে আমার সঙ্গেই সুমীর সুসম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। যদিও পরবর্তীতে সুমীর পরিবার অন্যত্র চলে যায়, আর এই কারণেই সেই সম্পর্কে দূরত্ব বেড়ে যায়।

তখনই মাধ্যমিকের শুরুতে আমার মীরার সঙ্গে পরিচয় হয় এবং ধীরে ধীরে সম্পর্কটা বেশ গভীর হতে থাকে। আমার ওর প্রতি এতটাই দুর্বলতা কাজ করতো, যদি কখনো একদিন স্কুল বন্ধ থাকতো, মনে হতো যেন বহুদিন ধরে ওকে দেখছি না। এভাবেই চলছিল আমাদের সময় গুলো, একবার স্কুল একমাস বন্ধ ছিল। সম্ভবত তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি, সেই সময় বর্ষাকাল চলছিল। যেহেতু ওদের বাড়ির রাস্তাটা মেঠো পথ ছিল আর প্রচুর বৃষ্টি হতো, তাই সেই রাস্তায় কাদা জমে যেত।

আমি সেই কাদা রাস্তা দিয়ে ওকে দেখতে যেতাম দিনের মধ্যে দুই-তিনবার, কখনো দেখা হতো আবার কখনো হত না। এমনও হয়েছে, এইভাবে যাতায়াত করতে গিয়ে আমার পায়ে ঘা হয়ে গিয়েছিল। একবার দীর্ঘ সময় দেখা না হওয়ার কারণে, ও আমার চাচাতো বোনের হাতে চিঠি দিয়েছিল, চিঠিটা রক্ত দিয়ে লিখেছিল। তবে আমি যখন চিঠির উত্তর দিতে গিয়েছিলাম, তখন নিজের হাত ফুটো করে রক্ত দিয়ে লিখতে প্রচুর ভয় পাচ্ছিলাম। আমার সঙ্গে এক মামা থাকতো, তাকে বলেছিলাম তোমার একটু রক্ত দাও আমি চিঠিটা লিখে দিই নতুবা আমার হাতটা একটু পিন দিয়ে ফুটা করে দাও, সেই রক্ত দিয়ে আমি চিঠিটা লিখি। আমার ভয় করছে অনেক নিজের হাত ফুটা করতে। অবশেষে,তখন যেহেতু গরমের সময় চলছিল এবং প্রচুর মশা ছিল, তাই আমার হাতের উপর কয়েকটা মশাকে বসতে দিয়েছিলাম, অতঃপর মশারা যে পরিমাণ রক্ত খেয়েছিল, সেই মশাগুলো ধরে, সেই রক্তগুলো দিয়েই লিখে ফেলেছিলাম চিঠির উত্তর। এরকম অনেক মজার স্মৃতি ছিল।

আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি, তখন আমার ক্লাসে আরো অনেকগুলো মেয়ে যুক্ত হয়ে যায়। যেহেতু ফার্স্টবয় ছিলাম, তাই সবার নজর আমার দিকেই। বিভিন্ন রকম কর্মকাণ্ডে আমি বেশ পারদর্শী ছিলাম, যেমন খেলাধুলা, উপস্থিত বক্তৃতা, অন্যান্য শিক্ষামূলক কাজে। আমাদের ক্লাসে যে মেয়েগুলো ছিল, সবাই আমার প্রতি দুর্বল ছিল। সোনিয়া, সাদিয়া, সুমাইয়া, রসিয়া, তানিয়া । তবে সবার মাঝেও আমার দুর্বলতা বেশি কাজ করতো মীরার প্রতি।

আমার এক বন্ধুর সঙ্গে আনিকা নামে এক মেয়ের সম্পর্ক হয়েছিল, তবে সাত দিন যেতে না যেতেই সেই মেয়ের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক হয়ে যায়। তখন আমার বন্ধু বলে এটা তুই কেমন কাজ করলি।আমি তখন আমার বন্ধুকে বলেছিলাম, তোদের কেমন ভালোবাসা, যে মেয়েটা আমার কাছে পটে যায়।

অতঃপর আমি যখন ক্লাস নাইনে উঠি, তখন আমার সব বান্ধবীদেরকে ডেকে বললাম তোরা কিছু মনে করিস না রে,আমার আসলে মীরার সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক, ওর প্রতি আমি জড়িয়ে গিয়েছি। তবে আনিকা আমাকে কোন ভাবেই ছাড়তে চাচ্ছিল না, অবশেষে আনিকা আমার জন্য স্কুল পর্যন্ত ত্যাগ করেছিল। বলেছিল বাশার কেই যেহেতু পেলাম না, তাই এই স্কুলে আমি থাকবো না।

মূলত আমার আর মীরার সম্পর্কটা যখন আরো গভীর হয়, তখন সেটা ক্লাস টেনে পড়ার সময়কালীন। ব্যাপারটা সবাই জানতো, স্কুল থেকে শুরু করে গ্রামবাসী সবাই। তবে মীরার পরিবারের লোকজন ব্যাপারটা কোনোভাবেই মেনে নেয়নি। তারা চাচ্ছিল মীরাকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার জন্য।মীরা আমার সঙ্গে পালিয়ে পর্যন্ত যেতে চেয়েছিল, আমরা গিয়েও ছিলাম,তবে ধরা পড়ি। অবশেষে যখন টেস্ট পরীক্ষা চলে আসে, তখন স্কুলে আসে মীরা এবং আমাকে কমন রুমের ভিতরে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে এবং বলে তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। অতঃপর মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে, তখন আমি মীরাকে একটা ডায়েরি দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, তুমি কোথায় ভবিষ্যতে ভর্তি হবা সবকিছু ঠিকঠাক মত এখানে লিখে রাখার জন্য। পরে আমি আমার চাচাতো বোনের মাধ্যমে ডায়েরিটা সংগ্রহ করে নেই।

মাধ্যমিকে দুইজনেরই ফলাফল ভালো আসে, আমি রাজশাহীতে ভর্তি হই এবং মীরা ঢাকাতে ভর্তি হয়। মূলত এখান থেকেই আমাদের দূরত্ব শুরু হয়। যখন ভালোবাসায় দূরত্ব বাড়ে, তখন আরকি ভালোবাসা হালকা হয়ে যায়। যদিও আমার কলেজে স্বর্ণা নামে একটা মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়, তবে মেয়েটার বাবা পুলিশের এসআই ছিল বিধায় আমি সম্পর্কে এগিয়ে যায়নি। তার সঙ্গে আমার বেশ ভালো সময় কাটে। আর এদিকে আমি মাঝে মাঝে রাজশাহী থেকে ঢাকায় যেতাম মীরার সঙ্গে দেখা করতে, গেলেই অনেকগুলো পয়সা খরচ হয়ে যেত। মীরা যেখানে থাকতো, সেখানকার এক বড় আপুর সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই আপু আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো আদর করত, আমাকে অনেক কিছুই রান্না করে খাওয়া তো। তার কাছ থেকেই মীরার আমি সবকিছু আপডেট নিতাম, সে আমাকে বলেছিল মীরার গতিবিধি পরিবর্তন হয়েছে দিন কে দিন।

এ কথাটা আমি খুব একটা বেশি কানে লাগাইনি, কেননা তখন আমার স্বর্ণার সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক চলছিল। এভাবেই যখন উচ্চমাধ্যমিক শেষ হয়ে যায়, তখন খুব একটা ভালো রেজাল্ট আমি করতে পারিনি। আমি ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাইনি। তবে মীরা চান্স পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে গিয়েছিল, সে আমার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা নিয়েছিল এবং এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথাবার্তা বলে সিট একত্রিত করে নিয়ে, ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল এবং অবশেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছিল।

মূলত মীরার পরিবর্তন শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর থেকে। সে আমাকে প্রতিনিয়ত এড়িয়ে চলতো। আমি বুঝতে পেরেছিলাম সে আমাকে আর চাচ্ছে না, একটা সময় তো বলেই দিল, তখন আমি তাকে বলেছিলাম বড্ড দেরি করে ফেললে। শুনেছিলাম, সে নাকি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছিল। ব্যাপারটা শুনে কষ্ট পেয়েছিলাম তবে সরে এসেছি। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেই বড় ভাইয়ের যখন বিসিএস হয়ে যায়, তখন সে মীরা কে বিয়ে করেনি বরং বিয়ে করে অন্য একটা বিসিএস পাত্রীকে। আর এদিকে তখন মীরাও বেশ কষ্ট পায় এবং বিয়ে করে অন্যত্র। আমাদের কিছুদিন আগেও দেখা হয়েছিল, তার চোখে আমার চোখ পড়েছিল, দেখলাম একটা বাচ্চা কোলে করে নিয়ে সে একজন মানুষের সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছে ।

অতিথি ও শ্রোতাদের জন্য শুভেচ্ছা পুরস্কার

পুরস্কার বিতরণের সম্পূর্ণ অবদান @rme দাদার

উপস্থিত দর্শক শ্রোতারা বেশ ভালই উপভোগ করেছিল অতিথির শৈশব জীবনের প্রেমের গল্প। তারা বেশ ভালই প্রশ্ন রেখেছিল এবং উত্তরগুলো খুঁজেও পেয়েছিল, অতিথির গল্পের মাঝে।

সব মিলিয়ে জীবনের গল্প চলছে, একদম দুর্বার গতিতে । পরবর্তীতে আমরা আসছি কিন্তু আপনার দরজায়, আপনি প্রস্তুত তো।

ধন্যবাদ সবাইকে

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht



JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

|| Join the Discord Server for more Details ||

VOTE @bangla.witness as witness



OR

SET @rme as your proxy