কারফিউ

shuvo35 -

সেদিন পড়ন্ত বেলায় ঘুম থেকে উঠে হঠাৎই জানতে পারলাম, দেশে কারফিউ জারি করা হয়েছে। আকস্মিকভাবে এমন খবর শুনে অনেকটাই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কেননা এ লক্ষণ খুব একটা ভালো ঠেকছিল না।

কোটা আন্দোলনের যৌক্তিক দাবির কারণে অনেকগুলো প্রাণ ইতি মধ্যেই চলে গিয়েছে, সেই ভিডিওগুলো যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাসছিল তখন পুরো দেশবাসী যেন মুহূর্তেই ফুঁসে উঠেছিল, চলমান আন্দোলন ক্রমে ক্রমে রূপ বদলাচ্ছিল। যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দ্রুত সংবাদ গুলো এদিক সেদিক ছড়িয়ে যাচ্ছিল, তাই পুরো দেশের আপামর ছাত্র সমাজ যেন একদম প্রতিবাদে নেমে পড়েছিল।

আমার নিজের শহরের অবস্থাও বেশ ভীতিকর ছিল। কেননা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে প্রশাসনের লোকজনের প্রচুর সংঘর্ষ হয়েছিল। আর আমি যে জায়গাটায় থাকতাম সেটা একদম মূল সড়কের পাশে। ক্রমাগত পুলিশের গাড়ির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। তাছাড়া ছোট শহরটার রাস্তা গুলো বারবার প্রদক্ষিণ করছিল ছাত্রসমাজের মিছিল।

ঘটনা যে খুব একটা ভালো দিকে গড়াচ্ছে না, তা আর বুঝতে বাকি নেই। গিন্নিকে বললাম যত দ্রুত পারো ব্যাগ-পত্র গুছিয়ে নাও, হাতে সময় খুবই কম দ্রুত গ্রামে যেতে হবে। দেখি আমি টাকার ব্যবস্থা করতে পারি কিনা। এমনিতেই মাসের শেষের দিক, তাই খুব একটা হাতে কাঁচা পয়সা নেই বললেই চলে। তাছাড়াও একটা বিষয় খেয়াল করে দেখবেন, যখন বিপদের লক্ষণ বোঝা যায়, তখন কোন কাজই যেন ঠিকমতো হতে চায়না।

বাসার পাশের ব্যাংকের এটিএম বুথে গিয়ে দেখি আমার মত আরো অনেকেই টাকা উত্তোলন করতে এসেছে, তবে ইন্টারনেটের অসুবিধার কারণে কোনভাবেই কেউ যেন বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারছিল না। এদিকে মোবাইল নেটওয়ার্কেও খুব চাপ যাচ্ছিল। হঠাৎই খেয়াল করলাম মোবাইলেও নেটওয়ার্ক নেই। ইন্টারনেট সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। বড় রাস্তার পাশের যে খাবারের দোকানগুলো ছিল, সেগুলোও বন্ধ হওয়ার মতো উপক্রম। ১৪৪ ধারা কারফিউ জারির খবর সবার কানেই ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে। যে যার মত ছুটে চলে যেতে পারলেই যেন বাঁচে।

মানিব্যাগের চিপা থেকে অবশেষে দুটো পাঁচশো টাকার নোট বের করে বারবার হাতে নাড়ছিলাম। এ দুটো নোটই আমার সম্বল। আমার বিগত জীবন থেকেই একটা বদ অভ্যাস আছে, মানিব্যাগের চিপা-চাপায় বিশেষ কায়দায় দুটো একটা পাঁচশো বা হাজার টাকার নোট রেখে দেওয়ার । কখন যে কোন কাজে লাগে তা তো আর বলা যায় না।

ইতিমধ্যেই বাসার সবাই প্রস্তুত, ছোট্ট একটা সিএনজি নিয়ে বাসার গলির ভিতরে ঢুকে গেলাম।তাড়াহুড়ো করে ব্যাগপত্র গুলো বের করে সিএনজি তে তুলে নিয়ে, অবশেষে সবাই মিলে রওনা দিলাম গ্রামের বাড়ি উদ্দেশ্যে।

মূল সড়কে উঠার পরেই, বারবার এদিক সেদিক তাকাচ্ছিলাম। রাস্তার দুপাশের মানুষজন সবাই যেন উত্তেজিত, কখন যে ঝামেলা লেগে যাবে তা যেন বোঝা যাচ্ছে না। মনে মনে নিজেকে স্থির করার চেষ্টা করছিলাম, বারবার ভাবছিলাম শহরের রাস্তাটুকু অতিক্রম করতে পারলেই নির্বিঘ্নে গ্রামে যাওয়া যাবে। পরে অবশ্য নিরাপদেই গ্রামে গিয়েছিলাম।

তবে সত্যি বলতে গেলে কি, ২০২৪ সালে এসে যে এভাবে আমাকে চোরের মত করে পালিয়ে বাঁচতে হবে তা কিন্তু কখনোই কল্পনা করিনি। এটাই কি আমার স্বাধীন রাষ্ট্র, এই কি আমার স্বাধীনতা। আমি সত্যিই লজ্জিত।

কারফিউ চলাকালীন সময়ে জীবন আমার একদম বিষিয়ে উঠেছিল, বড্ড ছটফট করছিলাম স্বাভাবিক জীবনের জন্য। ইন্টারনেট নেই, ব্যাংক বন্ধ, মোবাইল নেট নেই, পকেটে টাকা নেই, দোকানপাট বন্ধ, সবমিলিয়ে একদম যা-তা অবস্থা হয়েছিল।

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht



JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

|| Join the Discord Server for more Details ||

VOTE @bangla.witness as witness



OR

SET @rme as your proxy