এই কবিতাটি একজন মায়ের হৃদয় থেকে উঠে আসা অনুভূতির প্রতিফলন। মা তার সন্তানদের নিয়ে যতটা ভালোবাসা, যতটা উদ্বেগ, ততটাই এক ধরনের পরিতৃপ্তি অনুভব করেন যখন তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে শুরু করে। তবে, সেই সন্তানেরা যখন দূরে চলে যায়—কোনো কারণে, বিশেষ করে লেখাপড়ার জন্য—তখন মায়ের কষ্টটি কোনো ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। কবিতাটি সেই মায়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং অনুভূতিগুলোকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।
ছেলেদের নতুন ফ্ল্যাটে চলে যাওয়া, মা তাদের জন্য নতুন পরিবেশে কিছু দিন রেখে আসা, রান্না-বান্না করে তাদের খাওয়ানো, এই সবই একটি সাধারণ হলেও গভীর প্রক্রিয়া যেখানে মা সন্তানের প্রতি ভালোবাসা, যত্ন ও ভালো-মন্দের প্রতি সচেতনতা প্রকাশ করেন। এরপর, মা যখন তাদের ছেড়ে চলে আসে, তখন তার মনের ভিতর যে শূন্যতা, বিচ্ছেদ এবং উদ্বেগ সৃষ্টি হয়—এটা একমাত্র মা-ই অনুভব করতে পারেন। এই অনুভূতিটি কখনও একদম স্বাভাবিক, কখনও কষ্টদায়ক, আবার কখনও গর্বের, কারণ সন্তানেরা তার নিজের অঙ্গুলি দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে।
কবিতার প্রতিটি স্তবক মায়ের সেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং অনুভূতি থেকে এসেছে। প্রথমে তিনি খুঁজে পান সন্তানের হাসি আর সঙ্গের প্রশান্তি, কিন্তু পরে বুঝতে পারেন, বিদায়ের সময় এই একান্ত ভালোবাসা এবং মায়া যে কখনো শেষ হবে না, বরং আরও শক্তিশালী হবে। বিদায়ের কষ্ট যতই তীব্র হোক, মায়ের অটুট বিশ্বাস থাকে—তাদের সন্তানরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছাবে, একদিন আবার ফিরবে।
এভাবেই কবিতাটি মায়ের ভালোবাসা, কষ্ট, গর্ব ও আশা—সব মিলিয়ে একটি একক অনুভূতির ভাষ্য।
এই যে চলে যাচ্ছি, মা,
দুটো চোখের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন,
তোমাদের ছেড়ে যাবার কষ্টে হৃদয়টাও যেন
বিকেল বেলায় ঝরা পাতা।
ঢাকার নতুন ফ্লাটে
তোমাদের হাসি, শুদ্ধ ভালোবাসা
এখনো স্পষ্ট,
তবে আমার বুকের মাঝে যেন
এক টুকরো শূন্যতা জমে।
গুছানো বাসা, রান্না করা খাবার,
সব কিছুই পূর্ণ, তবে কি পূর্ণতা,
যে ছেলেরা আমার চোখে রোদ,
তারা আজ যেন পরের পৃথিবীতে,
তবে বাবা-মা'র ভালোবাসা
আজও তাদের মাঝে,
তাদের হৃদয়ে অমলিন এক স্মৃতি হয়ে থাকবে।
এই ভালোবাসা, মায়া—
আজ অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ে,
ছেড়ে আসা এক টুকরো জীবন।
তবে জানি,
তোমাদের জীবনের পথচলা
নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছাবে একদিন।
এখন যতই মাটি হয়ে বাঁচি,
তবে জানি—
তোমরা গাছ হয়ে উঠবে।
মা হিসেবে, আমি গর্বিত।
তবে এই বিদায়ের কষ্টে,
তবে এক প্রশ্ন—
এত ভালোবাসা কি কখনো পূর্ণ হবে?
পথে চলতে থাকবো, আবার দেখা হবে।
আমি সেলিনা সাথী। ছন্দের রাজ্যে, ছন্দরাণী কাব্যময়ী-কাব্যকন্যা বর্তমান প্রজন্মের নান্দনিক ও দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি সেলিনা সাথী। একধারে লেখক, কবি, বাচিক শিল্পী, সংগঠক, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার, মোটিভেটর ও সফল নারী উদ্যোক্তা তার পুরো নাম সেলিনা আক্তার সাথী। আর কাব্যিক নাম সেলিনা সাথী। আমি নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আমার বাবা পিতা মরহুম শহিদুল ইসলাম ও মাতা রওশনারা বেগম। ছড়া কবিতা, ছোট গল্প, গান, প্রবন্ধ, ব্লগ ও উপন্যাস ইত্যাদি আমার লেখার মূল উপজীব্য। আমার লেখনীর সমৃদ্ধ একক এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫ টি। আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই অশ্রু ভেজা রাত, উপন্যাস মিষ্টি প্রেম, যৌথ কাব্যগ্রন্থ একুশের বুকে প্রেম। জীবন যখন যেমন। সম্পাদিত বই 'ত্রিধারার মাঝি' 'নারীকণ্ঠ' 'কাব্যকলি'সহ আরো বেশ কয়েকটি বই পাঠকহমলে বেশ সমাদৃত। আমি তৃণমূল নারী নেতৃত্ব সংঘ বাংলাদেশ-এর নির্বাচিত সভাপতি। সাথী পাঠাগার, নারী সংসদ, সাথী প্রকাশন ও নীলফামারী সাহিত্য ও সংস্কৃতি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়াও আমি জেলা শাখার সভাপতি উত্তোরন পাবনা ও বাংলাদেশ বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিষদ নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। তিনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৪ সালে নীলফামারী জেলা ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ জয়িতা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। এছাড়াও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রাখায় আমি বহু সম্মামনা পদক অর্জন করেছি। যেমন সাহিত্যে খান মইনুদ্দিন পদক ২০১২। কবি আব্দুল হাকিম পদক ২০১৩। শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র কর্তৃক সম্ভাবনা স্মারক ২০১৩। সিনসা কাব্য সম্ভাবনা ২০১৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্মামনা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ১১৫ তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৪। দৈনিক মানববার্তার সম্মামনার স্মারক ২০২৩। চাতক পুরস্কার চাতক অনন্যা নারী সম্মাননা ২০২৩ ওপার বাংলা মুর্শিদাবাদ থেকে মনোনীত হয়েছি।
বিষয়: ক্রিয়েটিভ রাইটিং
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......