Mystery behind the double murder-Conclusion! যুগ্ম হত্যার রহস্যের সমাধান!

sduttaskitchen -

সূচনা:-

যেকোনো কার্যের পিছনে যেমন কারণ থাকে;
তেমনি যেকোনো ঘটনার পিছনে লুকিয়ে থাকে তার ইতিহাস।

আকাশগঙ্গা দেশের রাজা ত্রীলোকেশ্বরের
বয়স যখন আট বছর, তখন তার মায়ের মৃত্যুর পরে তাঁর পিতা পুনরায় বিবাহ করেন।

সেই রানীর কোনো সন্তান হয়নি, তবে তার এক্ ভাইয়ের পরামর্শে দ্বিতীয় রানী কখনই ছোট্ট ত্রীলোকেশ্বর কে নিজের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন নি!

যদিও ছোট্ট বালকের পিতা সামনে থাকলে রানীর মমতায় ঘাটতি থাকতো না, কাজেই বালকের পিতা কখনোই দ্বিতীয় রানীর আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারে নি।

খানিক মায়ের অভাবের তাড়নায়, ছোট্ট ত্রিলোকেশ্বর অধিক সময় শিকারে যেতেই পছন্দ করতেন পিতার সাথে।

যখন রাজা রাজ্যে উপস্থিতি থাকতেন না, সেই সময় দ্বিতীয় রানী তার ভালবাসার মানুষকে অন্দরমহলে ডেকে নিতেন, অনেক প্রহরী বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকলেও, রানীর ভাইয়ের কারণে রাজার কান পর্যন্ত বিষয়টি কখনোই পৌঁছোয় নি।

তবে, সত্য তার নিজের ক্ষমতায় একদিন সামনে এসে দাড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে যদি যদি নির্দোষ ব্যাক্তি প্রতারিত হয়।

দেশ ও দেশবাসীর মঙ্গল কামনা করা আকাশগঙ্গা, যেখানে স্বয়ং মহাদেব বিরাজ করেন বলে সকলের বিশ্বাস ছিল, তারাও জানতেন একদিন রানীর এই সত্যতা তিনি সকলের সামনে এনে হাজির করবেন।

তাই তারাও রাজপুত্রকে আগলে রাখার সর্বোচ্চ প্রয়াস করতেন, কোনো খাবার রাজপুত্র খাবার আগে, রান্নার দায়িত্বে থাকা রাজার বিশ্বস্ত মানুষ খেয়ে দেখতেন, খাবার ঠিক আছে কি না!

দেখতে দেখতে রাজপুত্রের বয়স যখন একুশ এবং রাজ তিলকের সময় আগত, রাজা এক্
শ্রাবণ মাসে রাজ্যে ধুমধাম করে মহাদেবের আরাধনার আয়োজন করলেন।

রাজ্যের প্রায় সকল মানুষের উদ্দেশ্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো রাজদ্বার,
খুশি মনে নব্যাগত রাজাকে সেখানে আশীর্বাদ করতে উপস্থিত হয়েছিল প্রায় গোটা রাজ্য।

এছাড়াও আসে পাশের দেশের রাজার তো আমন্ত্রিত ছিলেনই! আকাশগঙ্গা এমন একটি রাজ্য ছিল, যার কোনো শত্রু ছিল না, কারণ আসে পাশের দেশের রাজারা বিশ্বাস করতেন ওই দেশে মহাদেবের উপস্থিতি।

তবে, শত্রু দুপ্রকরের হয়, এক্ যারা সামনা সামনি নিজেদের শত্রু বলে দাবী করার সাহস রাখেন, আরেক ধরনের শত্রু যারা মিত্র বেশে ক্ষতির প্রয়াস করে পিছন থেকে।

এই রাজ্যভীষেকে অনেক মানুষের ভীড়ে
ছদ্মবেশে উপস্থিত ছিল দ্বিতীয় রানীর ভালোবাসার মানুষটিও!

রাজ তিলক হবার কিছু মুহূর্ত পূর্বেই রাজা অসুস্থ্য বোধ করছিলেন, তাই কিছু মুহূর্তের জন্য নিজের অন্দরমহলে যাবেন মনস্থ্য করলেন, তিনদিনের অনুষ্ঠানের ঐটি ছিল দ্বিতীয় দিন।

শেষ দিনে রাজ তিলক হবার শুভ লগ্ন নির্ধারিত করেন রাজ পুরোহিত।
রাজার শ্যালক রাজার ছায়াসঙ্গী হিসেবে সবসময় সঙ্গেই থাকতেন বটে, তবে যে মুহূর্তে রাজা অসুস্থ্য বোধ করছিলেন, সেই মুহূর্তে দ্বিতীয় রানীর ভাই তার পাশে ছিল না।

রাজা তার রানীর সাথে যে অন্দর মহলে বসবাস করতেন, সেখান থেকে বেশ খানিক দূরে রাজা চলে এসেছিলেন, রাজ্যের মানুষকে অভ্যর্থনা করতে।

শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করতেই তিনি ঠিক করলেন, পাশেই তার যে অস্ত্রাগার আছে সেখানে থাকা তার পরামর্শ গৃহে তিনি খানিক বিশ্রাম নেবেন।

যেমনি ভাবা, তেমনি কাজ, ছেলের হাত ধরে তিনি অস্ত্রাগারের পথে হাঁটলেন, ওই অস্ত্রাগারে একটি গোপন দরজা ছিল, যেটির খবর কেবলমাত্র রাজার জানা ছিল, কিন্তু এই প্রথম রাজপুত্র ত্রিলোকেশ্বর জানতে পারলেন।

এটি কম সময় রাজার অস্ত্রাগারে পৌঁছনোর রাস্তা ছিল, শত্রু না থাকলেও অনেক সময় রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা মাথায় রেখেই এই গোপন পথ এবং দ্বার নির্মিত করা হয়েছিল।

রাজা যেই মুহুর্তে দ্বারে পৌঁছলেন, ঘুলঘুলির ফাঁক দিয়ে তিনটি মানুষের সেখানে উপস্থিতি তাকে বিচলিত করে তুললো, একজন দ্বিতীয় রানী, একজন তার শ্যালক এবং আরেকজন অপরিচিত ব্যাক্তি!

এই রকম একটি অনুষ্ঠানের সময় গুরুত্বপুর্ণ দুই ব্যাক্তি এখানে কি করছে?

রাজ্য পরিচালনার অভিজ্ঞতা থেকে সন্দেহ দানা বাঁধে, সন্তান আগেই দ্বিতীয় রানীর দ্বিচারিতা স্বভাব সম্পর্কে অবগত ছিলেন! কিন্তু, পিতা মনে আঘাত পাবেন, তাই কখনোই নিজ মুখে কিছু বলেন নি।

এরপর, রাজা তাদের সমস্ত আলোচনা শুনে হতভম্ব! কিন্তু, রাজ্যের মানুষ যাতে বিচলিত না হয়, তাই তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসলেন।

প্রহরীদের আদেশ করলেন রথ ডাকতে, এবং তিনি নিজের অন্দর মহলে বিশ্রামের জন্য চলে গেলেন।

সেই রাত্রে রাজা ঘুমোতে পারলেন না, এবং রাণীকে জানালেন সেই রাতটি সে রাজপুত্রের সাথেই কাটাতে চান।

রানী খানিক অবাক হলেও মনে মনে খুশি হলেন, কারণ রাজা না থাকলে রাত তিনি কাটাতে পারবেন তার প্রিয় মানুষের সঙ্গে।

অন্যদিকে রাজা সেই রাতে সন্তানকে বলে গেলেন, কি কি তার আগামীতে করণীয়।
পরের দিন রাজ্যভীষেকের পরেই, রাজা সর্ব সমক্ষে দ্বিতীয় রাণীকে রাজ্য থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিলেন, এবং বিশ্বস্ত সৈনিক দিয়ে হত্যা করলেন শ্যালক এবং রানীর প্রিয় মানুষকে।

ওইদিন রাতেই রাজারও মৃত্যু হলো, কারণ দীর্ঘ্য বছর ধরে দ্বিতীয় রানী রাজাকে রাতের দুধে বিষ প্রয়োগ করে চলছিলেন, শৈশব অবস্থায় রাজপুত্রকে পিতৃহারা করতে পারলে সবটা দখল নিজের আয়ত্বে আনতে সুবিধা।

তবে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি না চাইলে বোধহয় মৃত্যুও কাউকে ছুঁতে পারে না!

এদিকে, রাজ্যে তখন রাজপুত্র পিতৃহারা হয়ে একাকীত্বে দিন যাপন করছিলেন, তাই পিতার মতই তিনি শিকারে যেতে পছন্দ করতেন মন ভালো রাখতে।

এর মাঝে কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি, দ্বিতীয় রানী আরেক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, এই খবরের সাক্ষী ছিল তার নিজের ভাই, আর তার ভালবাসার মানুষ।

তবে, গোপন আলোচনা শুনে খবরটি রাজপুত্র এবং রাজাও শেষ পর্যায়ে শুনে ফেলেছিলেন।
আর সেই বেইমানি মেনে নিতে না পেরেই, রাণীকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছিলেন।

কালের চক্রে শত্রু বেড়ে উঠছিল, যাকে দ্বিতীয় রানী ছাড়া আর কারোর চেনার উপায় ছিল না, এমনকি রাজপুত্র স্বয়ং জানতেন না কে তার দ্বিতীয় মায়ের সন্তান!

বর্তমান সময়:-

রাজকন্যা অলকানন্দা এবং আভিরুপা রাজ্য ফিরলেন গভীর রাতে।
এদিকে মা দুঃশ্চিন্তায় সৈনিক পাঠিয়েছিলেন মেয়েদের খবর নিতে।

মেয়েদের রথের পরিবর্তে দুই ঘোড়ায় ফিরে আসতে দেখে একটু বিস্মিত হলেন, সাথে নিশ্চিন্ত।

ঘোড়া থেকে নেমে মায়ের সাথে এক্ পলক দেখা করে, তাকে নির্দেশ দিলেন তারা না ফেরা পর্যন্ত তিনি নিজেকে যেনো গৃহবন্দি করে রাখেন!

বাকি সব ফিরে জানাবেন, দু'জনেই রাতের আঁধার এই অস্ত্রাগারের গোপন পথে গিয়ে নিজেদের তৈরি করে নিলেন যুদ্ধবেশে।

প্রথমে, তারা প্রবেশ করলেন যেখানে থাকতো পাকশালায় কর্মরত কর্মীরা, সেখানে গিয়ে হত্যা করলেন তিনজনকে, যাদের মধ্যে একজন মহিলা, এবং দুজন পুরুষ।

এরপর ঘোড়ায় চড়ে রাজা যেখানে শিকার করতে গিয়েছেন, তার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলেন।
উপস্থিত স্থানে পৌঁছে কোথাও রাজার দেখা পেলেন না, কিন্তু যার দেখা পেলেন তিনি আর কেউ নয়, সেই রথের চালক যার সাথে দুই রাজকন্যা রাজ্য পরিদর্শনে বেরিয়েছিলেন!

দুই রাজকন্যার উপস্থিতি রথ চালককে বেশ অবাক করে! কারণ, সে বুঝতে পারে তার করা সুদীর্ঘ বছরের পরিকল্পনা ব্যার্থ হতে চলেছে!

তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার প্রয়াস করে, তবে এবার অভিনয়ের খেলা শেষ করে দুই রাজকন্যা!

তারা প্রথমে তার থেকে তাদের পিতার ঠিকানা জানতে চায়, উত্তরে চালক বলেন, আমাকে বাজারে পাঠিয়েছিলেন আপনারা, মাঝ পথে এক্ সৈনিক বলেন মহারাজের বিপদ তাই এখানে তার ঘোড়ায় চড়ে উপস্থিত হয়ে দেখছি উনি নেই!

অলকানন্দা এবং অভিরূপা পরস্পরের দিকে দৃষ্টি বিনিময় করে পলকের জন্য, তারপর অলকানন্দা কাছে গিয়ে বলেন, তোমার খেলা শেষ, এমনকি তোমার মায়ের ভবলীলা সাঙ্গ করে এখানে উপস্থিত হয়েছি, ভালো চাও তো মহারাজের ঠিকানা জানাও নইলে, তোমাকেও তার কাছে পাঠিয়ে দেবো।

কি ভেবেছিলেন? মা, ছেলে মিলে হারিয়ে দেবেন?
মহারাজ এতটাই মহান হৃদয়ের যে, শৈশবে তার সাথে তোমার মায়ের ব্যবহার পর্যন্ত ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, আর তোমরা মহারাজকে ঠিক তার পিতার মতো করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবার পরিকল্পনা বয়ে বেড়াচ্ছিলে বেঈমান?

কি ভেবেছো? পরিকল্পনার আড়ালে সিংহাসন দখল করবে?
এবার চালকের চেহারায় পরিবর্তন সুস্পষ্ট!

সে চিৎকার করে বললো, একজন রাণীর গর্ভে জন্মে কি পেয়েছি?
সর্ব সমক্ষে অপমান করে তাকে দেশ থেকে বের করে দিয়ে তার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছিল একদিন, আর রানীর জীবনের পরিবর্তে প্রতিদিন কষ্টের জীবন যাপনের মধ্যে দিয়ে গেছে আমার শৈশব!
আমার পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল!

কি ভেবেছিলে? ছেড়ে দেবো! মায়ের দিক থেকে আমিও এই রাজ্যের অংশীদারিত্বের উত্তরাধিকার রাখি, কিন্তু দেখ বছরের পর বছর তোমাদের দাস হয়ে আছি!

রাজকন্যা অভিরুপা বললো আজকে যে শৈশব আর যে ভবিষ্যত তুমি পেয়েছো তারজন্য দায়ী তোমার মা, তোমার মাসীর বাড়িতে পরিকল্পিত ভাবে আমাদের তুলে কি ভেবেছিলে তোমার মাসি আর তার ছেলে আমাদের হত্যা করে ফেলবে এত সহজে?

এরপর, হাত তালি দিতেই মহারাজা কে নিয়ে কিছু মানুষ বাইরে বেরিয়ে আসতেই, অলকানন্দা এবং অভিরূপা বেশ কিছু পরিচিত মুখের দেখা পেলো, তবে দুই রাজকন্যার সাথে পেরে ওঠা সম্ভব নয়, এটাও তারা বুঝলো অল্প সময়ের মধ্যেই।

এরপর, চালককে হত্যা করে, পিতাকে নিয়ে দুই রাজকন্যা নিজেদের রাজ্যে ফিরে মায়ের কাছে সমস্ত ঘটনা জানালো, এবং রাজবৈদ্য দিয়ে রাজার চিকিৎসা শুরু করলো।
এইভাবেই, ইতিহাসের হাত ধরে আসা অসাধু উদ্দেশ্যের সমাপ্তি ঘটলো, দুই রাজকন্যার পারদর্শিতায়।

আবারো প্রমাণিত হলো, সময়ের হাত ধরে সৃষ্টিকর্তা সঙ্গ দেন তাদের যারা তার পথ অনুসরণ করে চলেন।

এই ছিল গল্প, আমি বেশ সন্দিহান কেউ আদপেও লেখাটি শুরু থেকে শেষ মনোযোগ দিয়ে পড়বেন কি না!

গল্পের পুরোটাই আমার নিজের কল্পনায় রচিত, এখানে কোনো কিছুই, কোথাও থেকে নেওয়া, অথবা অনুকরণ এবং অনুপ্রেরণা নিয়ে লেখা নয়।