জীবনের পথে চলতে গিয়ে আমাদের প্রত্যেক কেই কিছু লড়াইয়ের সম্মুখীন হতে হয়, আর সেটা অনস্বীকার্য।
যে বা যারা সেই সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে যায়, কেবলমাত্র তারাই উপলব্ধি করতে সক্ষম, কোন সংঘর্ষের ক্ষেত্রে মানসিক শক্তির প্রয়োজন অধিক।
বাইরে থেকে অনেকেই যেটাকে স্বাভাবিক এবং সামান্য ভেবে উপহাস করেন, হতে পারে যে মানুষটি বিষয়বস্তুর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তার কাছে সেই সংঘর্ষ বাহ্যিক অনেক লড়াইয়ের চাইতে বেশি কঠিন।
একটা দুটো বেলা না খেয়ে যদিও দিন অতিবাহিত সম্ভব কিন্তু একটি দুটি মানুষের অনুপস্থিতি বেশিরভাগ সময় জীবনকে অসহনীয় করে তোলে!
এটা একমাত্র তারাই বুঝতে সক্ষম যারা অতি কাছের সম্পর্ক হারিয়েছেন।
গতকাল অনেক চেষ্টা করেও লিখতে পারিনি! কারণ, সবসময় অন্যের জন্য লড়তে যাওয়া মানুষগুলো, উচ্চস্বরে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা মানুষগুলোর অভ্যন্তরেও একটা যুদ্ধ চলে, যেটার অংশীদারত্ব কেউ নেয় না, সেটা সংগোপনে নিজেকেই বয়ে বেড়াতে হয়।
গতকালের দিনটি ছিল সেরকম একটি দিন, অনেক চেষ্টা করে, ঘরের কাজে নিজেকে সকাল থেকে ব্যস্ত রেখে, বিভিন্ন লেখা পড়ে মন্তব্য করে সময় অতিবাহিত করার পরেও রাতের দিকে মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম।
এই পরাজয় আমার ব্যক্তিগত পরাজয়, আর আমি এটা ভালো ভাবেই জানি, আমি যতদিন বেঁচে থাকবো, এই সংঘর্ষের সম্মুখীন আমাকে একাই করে যেতে হবে।
আমি মানুষের উর্ধ্বে নই, কাজেই কিছু বন্ধ পাতার আড়ালে লুকানো থাকে কিছু অতীত যেটা দমকা হওয়ায় পাতাগুলোকে উল্টে দিয়ে খানিক সময়ের জন্য নিয়ে যায় সেই অতীতে, সেই মানুষদের কাছে যারা শারীরিকভাবে আজ আর পাশে নেই।
শুধু রয়ে গেছে তাদের সাথে অতিবাহিত মুহূর্তগুলো! কাজের ব্যস্ততা দিয়ে নিজেকে খানিক সময়ের জন্য হয়তো ভুলিয়ে রাখা যায়, কিন্তু একটা সময় আসে যখন কিছু অপ্রিয় এবং অনভিপ্রেত অন্তর্ভেদী অতীত মানসিক শক্তিকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়।
(প্রতিটি জ্বলন্ত মোমবাতি আমার যন্ত্রণার সাক্ষী) |
---|
কেনো হলো এমনটা আমার সাথে এ প্রশ্ন এখন আর সৃষ্টিকর্তাকে করি না!
অনেকেই বলেন সময় এক্ দিকে যেমন বড়ো শিক্ষক, তেমনি অপরদিকে বড় চিকিৎসক।
কালের হাত ধরে অনেক ক্ষত মিলিয়ে যায়, শুধু এই একটি জায়গা আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
সময় পারেনি আমার ক্ষত সারাতে!
কখনো কখনো মনে হয়, আমি স্বপ্নের জগতে আছি, চোখ খুললেই সব প্রিয়জনদের চাক্ষুষ করতে পারবো পুনরায়।
আবার অনেক সময় এই ভাবনায় দিন কাটে, আমি অনেক বড় কোনো দুর্ঘটনায় কোমায় চলে গিয়ে এই দিনগুলো দেখছি, একবার সুস্থ্য হলেই সবাইকে আবার দেখতে পাবো!
আমার এই উদ্ভট খেয়ালগুলো আমার দৈনন্দিন একাকীত্বের, সংঘর্ষের সঙ্গী।
বেশিরভাগ মানুষ কষ্টের সময় পৃথিবী ত্যাগের কথা ভাবেন, অনেকেই সেই পদক্ষেপ নিয়েও ফেলেন, কেউ সফল হয়, আবার কেউ হয়না।
তবে, প্রতিদিন তিল তিল করে যে মৃত্যু আমাদের ভিতরটাকে ঝাঁঝরা করে, সেটাকে নেবার ক্ষমতা মুষ্টিমেয় মানুষের আছে।
জীবনের সাদা কালো দিকটা দেখার পর হামেশাই আমার প্রয়াস থাকে, সেই মানুষগুলোকে আগলে রাখার, যারা হয়তো মনের দিক থেকে খানিক আমারই মতন।
তারা শুধু নিঃস্বার্থ ভাবে দিয়ে যায়, আর বিনিময় পায় কেবলমাত্র আঘাত, প্রতারণা, মানসিক যন্ত্রণা এবং অভ্যন্তরীণ ক্ষত।
প্রতিদিন আমাদের হয়তো কিছু মানুষকে নিয়ে চলতে হয় এটা বুঝেই যে তারা কেবলমাত্র আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করতেই আমাদের সাথে আছে।
যেদিন স্বার্থের ঝুলি ভরে যাবে, কিছু না জানিয়েই অপরিচিত মানুষের মত পাশ কাটিয়ে চলে যাবে!
(কত ফুল অসময় ঝরে যায়, কিছুদিন বাদে কেউ আর তাদের মনে রাখে না! শারীরিক উপস্থিতি থাকলে গতকাল হয়তো এই ফুল হাতে দিতে পারতাম, কিন্তু সময়ের বিড়ম্বনা, তাই ছবিতেই সীমাবদ্ধ) |
---|
সেই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে আমিও গেছি! বিনা অপরাধে, মিথ্যে অপবাদে আমাকে আরোপিত করা হয়েছে একাধিক বার, ব্যবহৃত হয়েছে আমার আবেগ, আমার স্নেহ, ভালোবাসা। যেখানে ছিলনা বিন্দুমাত্র স্বার্থ!
সময়ের হাত ধরে প্রতিদিন সংঘর্ষ করে যাচ্ছি শুধু এটাই দেখার জন্য অথবা বলা যায় শেখার জন্য সৃষ্টিকর্তার বিচার সকলের ক্ষেত্রেই সমান।
আজকে যে অন্যায় অন্যের সাথে করে নিজেকে বিজয়ী মনে করছেন অনেকেই, কালকে তাদের সাথে একইরকম ঘটনা ঘটলে তাদের অভিব্যক্তি এবং অনুভূতি একইরকম থাকে কি না, সেটাই দেখার জন্য বেঁচে আছি।
মায়া যদি মানুষের প্রতি না হয়ে ক্ষমতা, ঐশ্বর্য্য এবং আত্ম-স্বার্থের প্রতি হয়, সেটার পরিণতি কি সেটাও দেখার আছে বৈকি!
মানুষকে যারা চাকর এবং পণ্য মনে করেন, তাদের জন্য বিধির কি বিধান তোলা রয়েছে, সেটা দেখতেই প্রতিদিনের সংঘর্ষ চালিয়ে যাওয়া।
নিউটনের তৃতীয় সূত্রকে চাক্ষুষ করাই আমার জীবনের শেষ ইচ্ছে।