সহযোগিতা এবং সহমর্মিতা আমাদের পৃথক করে!Collaboration and empathy separate us!

sduttaskitchen -

গতকাল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে গিয়ে শিক্ষার কথা তুলে ধরেছিলাম।
এখন এই শিক্ষার বিভিন্ন দিকগুলো আমাদের শেখা এবং শেখানোর প্রয়োজনীতা আছে।

অনেক মানুষের ভীড়ে একটা মানুষ কখন পৃথক হয় জানেন?

যখন সবাই মুখ ঘুরিয়ে নিলেও একজন এগিয়ে এসে হাত ধরে!
ধরুন প্রচণ্ড ভিড় বসে অথবা ট্রেনে কোনো বয়স্ক মানুষকে দেখে, কোনো গর্ভবতী মহিলা অথবা ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে কোনো মহিলাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে তাদেরকে বসার সুযোগ করে দেওয়া।

এটাকে সহযোগিতা এবং সহমর্মিতা বলে।
যেটা ব্যাক্তিগত এবং কর্ম জীবনে আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি!

অসংখ্য উদাহরণ আমার দৃষ্টি আকর্ষন করেছে যেগুলো আমি কখনও মন থেকে মেনে নিতে পারিনি, কখনো প্রতিবাদ করেছি, কখনো সরে এসেছি পরিস্থিতির কারণে কিন্তু ক্ষমা করতে পারিনি আর পারবো না তাদের সারা জীবনে।

(প্রতি মুহুর্ত শিক্ষনীয় যদি শেখার সদিচ্ছা থাকে)

একটি কর্মস্থলেও কিন্তু এই সহযোগিতা এবং সহমর্মিতার প্রয়োজন আছে। এই প্ল্যাটফর্মে
কাজ করবার সুবাদে, চার বছরে আমি এমন অনেকের সংস্পর্শে এসেছি;
যারা সামনে নিজেদের ভীষণ দক্ষ বলে নিজেদের দাবি করলেও আড়ালে তাদের কাজে ফাঁকি, অজ্ঞতা আমাকে ভীষণভাবে অবাক করেছে!

কারণ, আমি নিজে যেটা জানিনা সেটা অকপটে স্বীকার করতে আমার একটুও দ্বিধা বোধ হয় না, তবে যেটা জানিনা সেক্ষেত্রে নিজেকে কখনোই পারদর্শী বলে দাবি করিনি কখনো।

একটা কথা যেমন সত্যি, মায়ের পেট থেকে কেউ কিছু শিখে আসে না, তেমনি এটাও সঠিক কিছু মানুষ ফাঁকিবাজি শিখেই বড় হয় এবং সর্বত্রই সেটার প্রয়োগের প্রয়াস করে চলে!

আমি অতি নগন্য একজন মানুষ, কিন্তু এইটুকু খুব জোর গলায় বলতে পারি;
এই প্ল্যাটফর্মে চার বছর কাজ করে, কোনোদিন কাউকে ভুল তথ্য দিয়ে, অথবা কাজে ফাঁকির প্রবণতা নিয়ে, এই যাত্রা আমি শুরু থেকে আজ পর্জন্ত করিনি।

আমার খারাপ লাগে যখন মুখোশধারী কিছু মানুষকে এগিয়ে যেতে দেখি!
আরো দেখি সামনে আর পিছনে স্বভাবগত পার্থক্য।

বিস্মিত করে, যখন জেনেশুনে কাউকে ভুল পরামর্শ এবং ভুল পথ দেখানো হয়। ভাবি আসলে এরা কোন শিক্ষায় শিক্ষিত করে নিজেদের গড়ে তুলেছে!

শুধুমাত্র নিজের সুবিধার জন্য যখন দেখি কিছু মানুষ কাজ করে, কাজকে ভালোবেসে নয়! সেটাকেও আমার দ্বিচারিতা মনে হয়।

এরা ব্যাক্তি জীবনে যেসব দান ধ্যানের লেখা ভাগ করে নেয়, সেটাও অনেকাংশে আমার মেকি মনে হয়! কারণ, যদি সত্যি অন্যের জন্য কিছু করতে হয় সেটা সকলের চোখের অলক্ষে করাকে ব্যতিক্রমী কাজ হিসেবে গণ্য করা যায়, যদি সেই কাজের উদ্দেশ্য নিজের উপার্জন বৃদ্ধি হয় সেটাকে সহযোগিতা অথবা সহমর্মিতা কোনোটাই বলা যায় না!

আচ্ছা, কেউ যদি বারংবার আপনার অসুবিধায় পাশে দাঁড়ায় কাজের জায়গায়, তাহলে আপনি কি একবারও এই আশা করবেন না যে, কখনো সেই ব্যাক্তি আপনার অসুবিধায় পাশে থাকবে?

এখানে, সহযোগিতা এবং সহমর্মিতার পরিবর্তে সুবিধাবাদীর সংখ্যার আধিক্য বেশি চোখে পড়ে, আর সময়ের সাথে মানবজাতির মানসিকতার পরিবর্তন স্পষ্ট লক্ষণীয়!

(পথ যদি সঠিক হয়, আর কাজকে যদি সম্মান আর ভালবাসা দিয়ে করা যায়, তাহলে সফলতা যেকোনো কাজের হাত ধরে আসতে পারে)

আজকের এই লেখাটা তাদের জন্যও যারা মনে করেন, তাদের এই বিচক্ষণ বুদ্ধির পিছনের অসাধু আচরণ কেউ জানতে অথবা বুঝতে পারছে না!

আমি আগেও বহুবার বলেছি, সকলের অলক্ষে একজন সবার সব আচরণ পর্যবেক্ষণ করে চলেছেন, সব হিসেব সময় মতো যার যার কাছে পৌঁছে যাবে, শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা।

নিষ্ঠা শুধু পরিবারের প্রতি নয়, কাজের প্রতি সমান রাখতে সক্ষম ব্যাক্তিরা শুধু সফলতা অর্জন করতে পারেন তাই নয়, বেঁচে থাকেন যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে।

এখানে, আমি একজন সঙ্গীত শিল্পীর উদাহরণ দিতে চাই, যিনি মাত্র তেরো বছর বয়েসে সংসারের হাল ধরতে কাজে নেমেছিলেন পিতৃবিয়োগের কারণে, তারপর একাধিক সংঘর্ষ করে যখন এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন তার আগে থেকেই তার খ্যাতি সমগ্র বিশ্বজুড়ে!

এই জায়গায় পৌঁছনোর জন্য তিনি তার কাজকে কাজের চাইতে সাধনা মনে করে গেছেন যতদিন বেঁচে ছিলেন, এবং পৃথিবী ত্যাগের আগে উপার্জিত অর্থ দিয়ে গড়ে রেখে গেছেন হাসপাতাল।

(ছবিটি যেদিন তিনি ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেছিলেন, টেলিভিশন থেকে নিয়েছিলাম, এবং পূর্বেও ব্যবহৃত)

ভাবছেন হয়তো কার কথা বলছি, তিনি আর কেউ নন পৃথিবী বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর!
যার জীবন কাহিনী পড়লে বহু শিক্ষনীয় বিষয় জানতে পারা যায়।

কাজেই, যারা কাজকে সম্মান করে না, যাদের সহযোগিতার চাইতে নিজেদের সুযোগ সুবিধার দিকে নজর বেশি, তাদের ক্ষেত্রে একটা সময়ের পর সৃষ্টিকর্তা সহমর্মিতা প্রকাশ ত্যাগ করে দেন, কারণ এটা তাদের কর্মফল।