অদৃশ্য ভালোবাসা!

sduttaskitchen -

প্রকৃত ভালোবাসা বোধহয় সেটাই ,যেটাকে অনুভব করতে হয় হৃদয় দিয়ে! মুখে ভালোবাসি বললে ভালোবাসা প্রমাণিত হয় না, আবার সবসময় কাছের মানুষের জন্য কিছু করা মানেই তার প্রতি অগাধ ভালবাসা আছে এটা ভেবে নেওয়ার পিছনেও কোনো যুক্তি নেই!

ভালোবাসা
শব্দটির সাথে আমার সকলেই পরিচিতি, এবং এই অদৃশ্য শক্তি অথবা অনুভূতি আমাদেরকে একটি পারস্পারিক বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে!

ভালোবাসাকে অনেকেই অনেক ভাবে বিভক্ত করেছে বিভিন্ন শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে বিশেষ করে বাংলা শব্দকোষ এর দিকে যদি তাকানো যায়।

ছোটদের ক্ষেত্রে ভালোবাসা হয়ে যায় স্নেহ, বড়দের ক্ষেত্রে পরিবর্তিত হয়ে শব্দটি হয়ে যায় শ্রদ্ধা আর যেসব সম্পর্ক সাংসারিক তকমা পায়, এমনকি বন্ধু মহলেও ভালোবাসা শব্দটির ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

তবে আমাদের জাতীয় ভাষায় ভালোবাসার এইধরনের বিভক্তিকরণ নেই, সেখানে ইংরিজি ভাষার লাভ (love) এর মতই প্যায়ার (प्यार) এর প্রয়োগ করা হয় সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রে।

যদিও হিন্দির শব্দকোষ এও বাংলার মত আরো দুটি শব্দের উপস্থিতি আছে কিন্তু প্রয়োগ হয় কেবল শুদ্ধ হিন্দি প্রয়োগের ক্ষেত্রেই, চলতি ভাষায় একটি শব্দেরই ব্যবহার মূলত হয়ে থাকে।

এই যে, ভালোবাসা নিয়ে উপরে এতগুলো কথা লিখলাম, এবং আজকে বিশেষ করে এই শব্দটিকে নির্বাচন করলাম,

এর কারণ কি?

কারণ, এখন ভালোবাসার পরিভাষা বেশ বদলে গিয়ে প্রিয়জন তারাই যারা না যাদেরকে প্রয়োজন এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে!

কি অবাক হচ্ছেন তো?
এটা তো আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারব না যে, ভালোবাসা একটা অনুভূতি, যেটা অনুভব করা হয় হৃদয় দিয়ে।
যেমন :- কথাটি হৃদয় বিদারক!
কথাগুলো হৃদয় স্পর্শ করে গেলো!
হৃদয়ভেদি শব্দ ইত্যাদি।

(জীব তথা উদ্ভিদ সৃষ্টিকর্তার সবচাইতে কাছের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা)
>

তারমানে হলো, আমাদের অন্যের প্রতি আচরণ, ব্যবহার এক প্রকার ভালোবাসার ইঙ্গিত বহন করে, কিন্তু তাকে স্পর্শ করতে অনুভূতির প্রয়োজন।

এবার আসব মুল কথায়, কেনো উল্লেখ করলাম এখন ভালোবাসা নামক অনুভূতি বেশ খানেক নির্ভরশীল প্রয়োজনের উপরে।

দৈনন্দিন জীবনে অনেক মানুষের সাথে মিশতে মিশতে একটা আন্তরিকতা তৈরি হয়ে যায় সময়ের সাথে সাথে;
এবার সেই আন্তরিকতা কখনো একটা সম্পর্কের নাম পায় আবার কখনও পায় না, কিন্তু তার মানেই সেখানে ভালোবাসা নেই বা ছিল না এমনটা কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না।

এমন অনেক সম্পর্ক আমি দেখেছি, যেখানে আর্থিক ক্ষমতার উপরে দাড়িয়ে আছে ভালোবাসা।

এমন অনেক মানুষ সম্পর্কে জানি যারা নিজেদের প্রয়োজনে মানুষকে প্রিয়জন বানিয়ে নেন নিমেষেই, আবার প্রয়োজন শেষে মুখ ঘুরিয়ে তাকান না।

এক্ সময় তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতেই পারবো না বলা সম্পর্ক কোনো কারণে ভেঙে গেলে;
অবলীলায় সময়ের হাত ধরে নতুন সম্পর্ক নিয়ে বেহাল তবিয়তে বেঁচে থাকছে কিছু মানুষ।

(নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কিছু উৎকৃষ্ট উদাহরণ)

সত্যি বলতে যদি ভালোবাসার সংজ্ঞা শিখতে হয় তাহলে প্রকৃতি এবং শিশুদের থেকে আমাদের শেখা উচিত।

আমি কথায় কথায় একটা কথা বলে থাকি, আর সেটা হলো, যে মানুষটি যেমন, সামনের মানুষকেও তারা তেমনি ভাবেন।

যেমন, কেউ যদি অন্যের ক্ষতি সাধনে সিদ্ধহস্ত হয়ে থাকেন, এবং সময় সময় কাজটি সমাধা করে থাকেন;
সেই ব্যাক্তি সকলকেই সন্দেহের চোখে দেখবেন, এবং ভাবেন সামনের মানুষটিও ক্ষতিসাধনের হেতু সম্পর্ক গড়ার প্রয়াস করে চলেছে।

আবার, যারা কথায় কথায় মিথ্যে বলতে অভ্যস্থ,
তারা কখনোই সামনের মানুষগুলো সৎ হতে পারেন এবং সত্যি বলছেন ভাবতে কষ্ট হয়।

বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে কথিত আছে যে, টাকা না থাকলে ভালোবাসা নাকি জানলা দিয়ে পালায়!

অনেকেই আছেন যারা ভাবেন ঝোলা ভর্তি অর্থ দিয়ে বোধহয় এই পৃথিবীতে সবকিছুই কেনা সম্ভব!

তাহলে একটি শব্দ ব্যতিক্রমী শব্দকোষ এ থাকতই না!
যদি মুখে বলে, অথবা উদ্দেশ্য প্রণোদিত মনোবাসনা নিয়ে কোনো মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়া হয়, তাহলে সেটাকে আর যাই বলা হোক ভালোবাসা আখ্যা দেওয়া যায় কি?

এই সকল মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যেও এটাই আছে, এরা নিজেরা বিনা স্বার্থে কারোর দিকে ফিরে তাকায় না;
আর কেউ যদি বিনা স্বার্থে এদের পানে উঁকি ও দেয় সেখানেও এরা তাদের সন্দেহের চোখে দেখে!

একটি বিষয় আমি এখানে পরিষ্কার বোঝাতে চাইছি আর সেটা হলো, সৃষ্টিকর্তার সামনে দাড়িয়ে সর্বক্ষণ শুধু নিজের প্রয়োজন জানানো যেমন ভক্তি হতে পারে না, তেমনি মনে কোনো অভিসন্ধি নিয়ে আর যাইহোক তাকে ভালোবাসা বলা যায় না।

অর্থ দিয়ে আজও বোধহয় সবাইকে কেনা যায় না, তাই সেই ব্যতিক্রমী মানুষগুলো অসৎ সঙ্গের চাইতে একলা চলতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করে, কারণ তারা বস্তু ব্যবহার করলেও অনুভূতি আর মানুষ ব্যবহার করতে শেখেন নি।

তাদের কাছে ভালবাসা একটি অদৃশ্য শক্তি ঠিক সৃষ্টিকর্তার মতন, তাই দেখবেন কারোর মনে অযথা আঘাত হানলে তার ফলাফল ভোগ করতে হয়, অপেক্ষা শুধু সঠিক সময়ের।