গোটা শহর যেন এক হয়ে গিয়েছিলো 'সবার আগে বাংলাদেশ ' কনসার্টে এসে।
2 comments
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া |
---|
গতকাল ১৬ ই ডিসেম্বর ছিল এমন একটা দিন যেদিনটাকে নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ গর্ববোধ করে থাকে । এই দিনটা আমাদের বিজয়ের দিন। এই দিন পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে নতুন একটা দেশ আত্মপ্রকাশ করে।
গতকাল আমার হাসবেন্ডে আমাকে বলে যে ,চলো আজকে কাপাসিয়া বেড়াতে যাই। তার কথায় মোটামোটি রাজিও হয়ে যাই যাই আমি। ছেলেরা উঠার পরে ওদেরকেও জিজ্ঞেস করি যাবে কিনা। শুরুতে রাজি হলেও আমার বড় ছেলে আমাকে বলে যে দেখতো আজকে জেমসের কনসার্ট আছে কিনা।মানিকমিয়া এভিনিউতে জেমস আর হাসানের ওপেন কনসার্ট হওয়ার কথা। যদি আজকে হয় তাহলে আজকে হলে যাওয়া যাবে না। কারণ ওই রাস্তাতেই আমাদেরকে বাসায় ফেরত আসতে হবে।
ওর মুখে এই কথা শুনে আমি খানিকটা থমকে যাই। কারণ আজকে ছাড়া এমন কনসার্ট অন্যদিন হবে বলে মনে হয় না আমার কাছে। সত্যি বলতে এমন কোনো কনসার্ট যে আমার বাড়ির এতো কাছেই অনুষ্ঠিত হবে ,এই সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্রও জানা ছিল না। ওর মুখেই প্রথমবার শুনি। ওর কাছে শুনে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখি যে আমার ধারণা ঠিকই হয়েছে আজকেই হবে এই কনসার্ট। তাই আমরা কাপাসিয়া যাওয়ার প্রোগ্রাম বাতিল করি।
Edited by Canva |
---|
মানিকমিয়া এভিনিউতেই আমাদের দেশের পার্লামেন্ট ভবন যা সংসদ ভবন নামে পরিচিত সেখানেই এই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবার কথা। একটু ভালো করে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম যে এই কনসার্টের আয়োজন করেছে বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি।
আমার ছেলে একে শুধুমাত্র জেমস আর হাসানের কনসার্ট বলে জানালেও এটা মূলত দেশের খ্যাতিমান সব শিল্পীদের নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে ‘সার্বজনীন কনসার্ট’। এই কনসার্টের নামকরণ করা হয় 'সবার আগে বাংলাদেশ ।
জেমস ও হাসানের সাথে সাথে এই কনসার্টে এককভাবে গাইবেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, খুরশিদ আলম, কনকচাঁপা, বেবী নাজনীন, মনির খান, কণা, ইমরান, প্রীতম, মৌসুমী ও জেফার ,এছাড়াও অ্যাভয়েড রাফা,সোলস, শিরোনামহীন, আর্টসেন সোনার বাংলা সার্কাস ইত্যাদি সংগীত পরিবেশন করবে।
আমি সোশ্যাল মিডিয়ার কোনো এক নিউজ পোর্টালে দেখলাম যে ,এর সংগঠকেরা জানিয়েছেন যে ,বিজয় দিবসের এই কনসার্টে দেশের বাইরে থেকে কোনো শিল্পী আনা হবে না ,দেশের খাতিমান সংগীতশিল্পীদের নিয়েই উদ্যাপন হবে।
আমার হাবি তো শোনার পর থেকেই লাফানো শুরু করে দিলো যাওয়ার জন্য। সাথে আমাকেও বললো সাথে যেতে। আমার ছোটছেলে আমাকে ভয় দেখিয়ে বললো যে ,আম্মু ঐখানে এত্তো মানুষ হবে যে ভিড়ের চাপে তুমি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারো। ওর কথা খুব একটা অবিশ্বাসও করি নাই। কারণ মানিকমিয়া এভিনিউ অনেক চওড়া একটা রাস্তা। এই রাস্তা বানানোর সময় এখানে যাতে জরুরি প্রয়োজনে প্লেন নামতে পারে সেটাকে মাথায় রেখেই বানানো হয়েছিল।
যদিও আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পরবর্তীতে রাস্তার মাঝখান দিয়ে ডিভাইডার দিয়ে দেন। কিন্তু তারপর যদি পুরো রাস্তা মানুষে ভরে যায় তাহলে আমার ছেলে খুব একটা কথা ভুল বলে নাই।।
যার কারণে হাবির প্রস্তাবে চুপচাপ রইলাম। সাড়ে এগারোটার দিকে আমরা একটু বাইরে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে আমরা ওই রাস্তার উপর দিয়েই আসলাম। তখনও তিনটা বাজে নাই। তাতেই যে পরিমান মানুষ দেখলাম তাতে বুঝলাম যে আর মিনিট দশেক পরে আসলে এদিক দিয়ে আমাদের পক্ষে যাওয়া সম্ভব হতো না।
দলে দলে মানুষ স্রোতের মতো ঢুকতেছে। একপাশের রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আগেই। কিছুক্ষনের মাঝেই এ পাশের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা ভিড় ঠেলে ঠেলে কোনোমতে বের হয়ে বাসায় আসলাম।
সন্ধ্যার দিকে আমার হাবি বের হয়ে গেলো এই কনসার্ট দেখতে। ছেলেদর মাঝে অবশ্য তেমন কোনো আগ্রহ দেখলাম না যাওয়ার জন্য। রাতে ওরা বের হয়ে গেলো দেখতে। আর ওদের পাশে পাশে আমিও খানিকটা এগিয়ে খানিক্ষন পরে ফেরত আসলাম এতো মানুষ দেখে।
বিজয় দিবসের এই কনসার্টকে বলা হচ্ছে স্মরণকালের মাঝে অন্যতম বড় এক কনসার্ট। শহরের মাঝামাঝি খোলা রাস্তায় আয়োজিত এই কনসার্ট এক করে ফেলেছিলো সব বয়সের মানুষকে। নানা প্রান্তের মানুষ এসেছিলেন কনসার্ট দেখতে।
মধ্যরাতের আগে কনসার্ট যখন শেষ হয় । কনসার্ট যখন শেষ হয় তখন রাস্তায় গণপরিবহনও খুব বেশি একটা ছিল না। কিন্তু মানুষ দলে দলে হেঁটেই বাড়ির পথ ধরেছিলেন। কে জানে হয়তো তাদের অনেকেই অনেক দিন আগে প্রায় ভুলে যাওয়া কোনো প্রিয় গান গুনগুন করে গাচ্ছিলেন।
হোয়াটস্যাপ এ পাঠানো ভিডিও থেকে নেয়া স্ক্রিনশট |
---|
Comments