New to Nutbox?

স্মৃতিতে ছোটবেলার শীতকাল - ধান, পিঠা আর শিন্নি।

4 comments

sabbirakib
64
9 days agoSteemit3 min read

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে শীতের আনাগোনা দেখা দিয়েছে। আজ মনে হলো শীত নিয়ে আমার ছোটবেলার স্মৃতি আপনাদের মাঝে তুলে ধরি।


pexels-8moments-3462588.jpg

Photo by Simon Berger

আমি গ্রামে বড় হয়েছি। একটা গ্রামের যেসব গুন থাকা দরকার সবই ছিল আমার গ্রামের। মেঠো পথ আছে, কাঁচা ঘর আছে, নদী আছে, খাল আছে, চাষাবাদের জন্য জমি আছে। অর্থাৎ একটা গ্রামের যা যা দরকার সবই আছে। শীতের এই সময়টা ছিল ফসল তোলার সময়। বর্ষায় চাষাবাদ করা আমন ধান এ সময় পাঁকে। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই যেহেতু ছিল কৃষিজীবি, কম বেশি সবাই আমন ধান চাষ করত। ভ্যানে করে সে ধান নিয়ে আসা হতো। বাড়ির উঠোন ভরে যত ধানের বস্তায়। একসাথে অনেকগুলো ঘর ছিল আর সবারই অনেক বস্তায় বস্তায় ধান আসতো।

ধানের বস্তা গুলো একটার উপর আরেকটি রেখে দেওয়া হতো। আমাদের চাচা-মামা এবং বড় ভাইরা সেগুলোকে গোল করে ঘরের মতো বানাতে। উপরে প্লাস্টিকের চট বিছিয়ে দিত যাতে কুয়াশা না পড়ে। তখন চোরের উপদ্রব ছিল। ওনারা ওই ঘরের মধ্যে থেকে ধানের বস্তা পাহারা দিত। আমাদের বাড়ির বেশ বড় উঠান ছিল। কিন্তু সেখানে একসাথে সবার ধান শুকানোর মত জায়গা ছিল না। এজন্য আগে থেকেই সবাই আলোচনা করো রাখতো কে কবে কোথায় ধান শুকাবে। দুদিন ধান শুকানোর পর সেগুলোকে আবার সিদ্ধ করা হতো। তারপর আরো কয়েকদিন চলতো ধান শুকানো। যখন ধান পুরোপুরি শুকিয়ে চাল বের করার উপযোগী হত তখন ধান ভেঙ্গে চাল বের করা হতো।

এতো গেল ধানের গল্প। শীতকালের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল ভাপা পিঠা। সব ধান যে সিদ্ধ করা হতো এমন না। কিছু ধান রেখে দেওয়া হতো সিদ্ধ ছাড়াই। এসব ধানের চালকে আমরা বলতাম আল্পা চাল। এই চালগুলো রাখা হতো পিঠা বানানোর গুড়ি তৈরির জন্য। ঠিক আটা না ময়দা তা আমি জানিনা। এসব চাল ঢেঁকিতে গুড়ো করে এরপর সেগুলো রোদে শুকিয়ে পিঠা বানানোর উপযোগী করা হতো। যেদিন পিঠা বানানো হতো খুব উৎসব লেগে যেত। কারণ একেকজন গৃহিণী একসাথে ৫০০-৭০০ পিঠা বানাতো। কিছু পিঠা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠানো হতো, কিছু পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে বিলি করা হতো, আর কিছু নিজেরা রাখতো খাওয়ার জন্য। গুড়ো করা আটার সাথে খেজুরের গুড় মিশিয়ে ভাপা পিঠা বানানো হতো। কখনো কখনো আখের গুড়ও ব্যবহার করা হতো।

আমাদের ওই অঞ্চলের শীতকালের অন্যতম আকর্ষণ ছিল খেজুরের রস। শীতকাল আসলে খেজুর গাছ কাটা হতো। এখান থেকে রস বের হতো সারারাত। সেই রস সকাল বেলা খুব ভোরেই বিক্রি হয়ে যেত। সেই রস দিয়ে ক্ষীর বানানো হতো। আমরা ডাকতাম শিন্নি। আমার অন্যতম প্রিয় খাবার এই শিন্নি। খেজুরের রস, চাল এবং নারিকেল দিয়ে এই শিন্নি বানানো হতো। খেতে খুব মজা! খুব বেশিই মজা! আজ এ পর্যন্তই থাক।


20241115_191656_0000.png

নিজের সম্পর্কে
আমি মুহাম্মদ সাব্বির আকিব। জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি। জেলাঃ চাঁদপুর, থানাঃ ফরিদগঞ্জ। থাকি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানাধীন দক্ষিণ গাজীরচট নামক স্থানে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রসায়নে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে একটি ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট হিসাবে কর্মরত রয়েছি। বিবাহিত এবং আল্লাহ একটি পুত্র সন্তানের জনক করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।

Comments

Sort byBest