রমজান মাস নিয়ে আমার কিছু কথা।
11 comments
আজ পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিন পার করলাম। প্রতিবছর সারা পৃথিবীর ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা এই মাসের জন্য অপেক্ষা করে। ধর্মীয় দিক থেকে এই মাসটি তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার জন্যও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রতিবছর এই রমজান মাসকে ঘিরে আমার নানা রকম পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা পুরোপুরি আর বাস্তবায়ন করা হয় না। রমজান মাস পেলেই ছোটবেলার কথাগুলো মনে পড়ে যায়। একটা সময় ছিলো যখন পরিবারের সকলে মিলে এই রমজান মাসে ইফতার করতে বসতাম। আর আজ বাড়িতে আছি শুধু আমি, আমার স্ত্রী আর আমাদের ছোট্ট মেয়ে। ছোটবেলার সেই ইফতারের মজাটা এখন আর পাওয়া যায় না।
কালের পরিক্রমায় অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। ছোটবেলায় রমজান মাস আসা মানেই ছিল ঈদের আগমনী ধ্বনি। কিন্তু এখন রমজান মাস মানেই সিয়াম সাধনার মাস। অবশ্য রমজানের শেষে যখন ঈদ আসে তখন মনের ভেতর অত্যন্ত ভালোলাগা কাজ করে। তবে একটা সময় যখন পরিবারের সকলে মিলে ঈদ পালন করতাম। সেই মজাটা আর এখন পাওয়া যায় না। জীবনের চলার পথে অনেকে হারিয়ে যায়। অনেকে জীবন ও জীবিকার তাগিদে দূরে সরে যায়। যার ফলে এখন আর সকলে মিলে ঈদ উদযাপন করা হয় না। তাই ঈদের সময়টাতে বারবার সকলের কথা মনে পড়ে।
পুরনো কথা মনে পড়ায় কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি। অন্যান্য বারের মতো এবারও রমজান মাস আসার আগে থেকেই কিছু কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। প্রতিবার রমজানের আগেই মনে মনে কিছু পরিকল্পনা করি। এবারও মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি। রমজান মাসে যে সমস্ত কাজ নিষিদ্ধ সেগুলো পুরোপুরি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করব। যদিও এই পরিকল্পনা আর সহজে বাস্তবায়ন হয় না। রমজানের প্রথম কয়েকদিন বেশ ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য বজায় থাকে। কিন্তু দিন যতই আগাতে থাকে ততই সেই ভাব গাম্ভীর্যতা কমতে থাকে।
এটা যে শুধু আমার বেলায় হয় তা নয়। মসজিদে গেলেও ব্যাপারটা টের পাওয়া যায়। রমজানের শুরুর দিকে তারাবির নামাজে অনেক মানুষ দেখা যায়। কিন্তু দিন গড়ানোর সাথে সাথে মানুষজনের সংখ্যা কমতে থাকে। এই সময়ে এলাকার অল্পবয়সী ছেলেদেরকে দেখা যায় নিয়মিত মসজিদে আসতে এবং রোজা রাখতে। কিন্তু প্রথম কয়েকটা রোজা যাওয়ার পরই তাদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমতে থাকে। রোজার শেষের দিনগুলো তো মসজিদের অবস্থা হয়ে যায় সম্পূর্ণ অন্যরকম। মনে হয় যে রোজার মাস ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে।
একসময় আমিও তাদের মতো করতাম। অবশ্য এবারকার রোজার মাস আমার জীবনে কিছুটা ভিন্নভাবে এসেছে। কারণ এইবারই প্রথম আমার মেয়ে রোজা রেখেছে। ছোট মানুষ রোজা রাখতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তবে দিনশেষে দেখলাম তেমন কোন সমস্যা ছাড়াই সে তার রোজা সম্পন্ন করেছে। প্রতিবছর প্রথম রোজায় দু একজন আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের বাড়িতে ইফতার দেয়া হয়। এবারও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আমার চাচা বাড়ি এবং এক প্রতিবেশীর বাড়িতে ইফতার দেয়া হয়েছে। যদিও এবার ইফতার তৈরি করতে আমার স্ত্রীর বেশ কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে শেষের দিকে রীতিমতো তরিঘরি করে তাদের কাছে গিয়ে ইফতার পৌঁছে দিতে হয়েছে।
সবকিছুর পরেও মাঝে মাঝে চিন্তা করি রমজানের যে তাৎপর্য। সেটা কি আমরা আসলেই বুঝতে পেরেছি? রমজান হচ্ছে সংযমের মাস আত্মশুদ্ধির মাস। কিন্তু এই সময়ে আমরা কতটুকু সংযম দেখাতে পারি। কতটুকু আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে পারি? এই দুটো জিনিস ছাড়া রমজান আসলেই অর্থহীন। রোজার মাস আসলে আমরা আরো বেশি ভোগে মত্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু আমাদের উচিত ভোগ বিলাস থেকে বিরত হয়ে আত্মিক শুদ্ধতা অর্জন করা। কিন্তু ভোগ বিলাসের সাথে জীবনে কখনো আত্মিক শুদ্ধতা আসতে পারে না। তাই সকল মুসলমান ভাই বোনের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে। আসুন ভোগে মত্ত না হয়ে ভোগবিলাস বিহীন জীবন যাপনের মাধ্যমে আমরা আত্মিক শুদ্ধতা অর্জনের চেষ্টা করি।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | ফরিদপুর |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Comments