হঠাৎ বিদায় (ছোট গল্প)। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।
8 comments
হাসিব বাসার দরজা দিয়ে যখন বের হচ্ছিল তখন ছেলে সাদমান পিছন থেকে ডাক দিল। বলল বাবা একটু দাঁড়াও। হাসিব ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলো ছেলে তার দিকে এগিয়ে আসছে। হাসিব বলল কি হয়েছে বাবা? ছোট্ট সাদমান বলল বাবা আসার সময় আমার জন্য চকলেট আর চিপস নিয়ে আসবে। হাসিব হাসিমুখে ছেলের আবদার মেনে নিল। তারপর মুখ টিপে একটু আদর করে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল।
ছবির সোর্স- লিংক
হাসিব সবসময় চেষ্টা করে সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে। দেরি করে গেলে বসের ঝাড়ি শুনতে হয়। এটা সে কখনোই চায় না। তাছাড়া সময়মতো অফিসে পৌঁছানোর জন্য হাসিবের অফিসে বেশ সুনাম। এজন্য তার বসরা ও তার প্রশংসা করে। আসিফ কাজে-কর্মে বেশ চৌকস। কখনো সে অফিসের কাজ পরেরদিনের জন্য ফেলে রাখে না। যত রাতই হোক সে কাজ করে তারপর অফিস থেকে বের হয়। অনেকদিন হয়ে গেল তার কোন প্রমোশন হয় না।
এবার অবশ্য কানাঘুষা চলছে যে তার প্রমোশন হবে। হাসিবের বস হাসিবকে কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছে। আরো ভালোভাবে কাজ করতে বলেছে। হাসিব এই প্রমোশনের জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করে আছে। এজন্য গত কিছুদিন হাসিব জান প্রাণ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য বর্তমান ইনকামে তার পক্ষে সংসার চালানো খুবই মুশকিল হয়ে গিয়েছে। একটা প্রমোশন পেলে বেতন অনেকটা বাড়বে। তখন তারা একটু স্বাচ্ছন্দে চলতে পারবে।
দীর্ঘদিন হলো হাসিব তার পরিবারকে নিয়ে কোথাও তেমন ঘুরতে যায় না। কারণ যে টাকা বেতন পায় তা দিয়ে মাস চলার পর বাড়তি তেমন কোনো টাকা থাকে না। তারপর বেতন থেকে কিছু টাকা আবার তার বাড়ি পাঠাতে হয়। সামান্য কিছু সঞ্চয় ও আছে। যার ফলে সব খরচ মেটানোর পর বাড়তি আর কোন টাকা অবশিষ্ট থাকে না।
হাসিব ঘুরতে খুবই পছন্দ করে।ছাত্রজীবনে হাসিব দেশের অনেক জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছে। সেই গল্প সে তার স্ত্রীর কাছে করেছে। এই গল্প শুনে তার স্ত্রী তাকে উল্টো কথা শুনিয়ে দিয়েছে। পরিবার নিয়ে ঘুরতে না পারার জন্য হাসিবকে স্ত্রীর কাছ থেকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে। তাই হাসিব ঠিক করে রেখেছে এবার প্রমোশন হলে সে তার পরিবার নিয়ে ইন্ডিয়া থেকে ঘুরে আসবে। হাসিবের দার্জিলিং যাওয়ার অনেক শখ। প্রমোশনের কথাটা তার কানে আসার পর থেকেই সে দার্জিলিং ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছে। কিভাবে যাওয়া যায়, কত টাকা খরচ তার সবকিছু একটা প্ল্যান করে ফেলেছে। কিন্তু তার স্ত্রীকে সে কিছুই জানায়নি সারপ্রাইজ দেবে এই জন্য।
এসমস্ত কথা চিন্তা করতে করতে হাসিব অফিসে পৌঁছায়। অফিসে পৌঁছে দেখে তখনও অফিসে কেউ আসেনি একমাত্র পিয়ন ছাড়া। হাসিব নিজের টেবিলে বসে পিয়নকে এক কাপ চা দিতে বলে। কিছুক্ষণ পর পিয়ন চা নিয়ে এসে বলে স্যার আর কেউ তো আসে নাই। আপনি শুধু শুধু এত আগে আসেন কেন? হাসিব হেসে বলে আমি সময় অনুযায়ী চলতে পছন্দ করি। তারপর হাসিব পিয়নকে জিজ্ঞেস করে তোমার পরিবারের কি অবস্থা? পিয়ন বলে আল্লাহর রহমতে সবাই ভালই আছে।
তারপর হাসিব তার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সারাদিন কাজ করার পর সন্ধ্যার পর হাসির অফিস থেকে বের হয়। সন্ধ্যার এই সময়টাতে ঢাকা শহরে প্রচন্ড জ্যাম থাকে। অফিস থেকে বাসার দূরত্ব অনেক। তারপরেও হাসিব মাঝে মাঝেই অনেকটা পথ হেঁটে চলে যায়। কিন্তু আজ শরীর ক্লান্ত লাগছিল তাই সে একটা বাসে উঠে বসে। বাসে উঠে ক্লান্তিতে হাসিব ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ করে প্রচন্ড হৈচৈ শব্দে হাসিবের ঘুম ভেঙে যায়। তাকিয়ে দেখে বাসে আগুন লেগেছে। এর ভেতর অনেকে জানালা দিয়ে লাফিয়ে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে। হাসিব ওযর ছিট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চিন্তা করছিল কোন জানলা দিয়ে বের হবে। এর ভেতর হঠাৎ প্রচন্ড শব্দে বাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। মুহূর্তেই পুরো বাসটা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে হাসিব শুধু একটা জিনিসই দেখেছে সেটা হচ্ছে আগুনের শিখা তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরছে। এভাবেই একটি সম্ভাবনাময় জীবন অকালে ঝরে গেল। এভাবেই একটি পরিবারের স্বপ্ন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। এভাবেই একটি সন্তান তার বাবাকে হারালো। এভাবে একজন মমতাময়ী স্ত্রী তার স্বামীকে হারালো। এভাবে আর কতো জীবন অকালে ঝরে যাবে?(সমাপ্ত)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩
আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।
Comments