হঠাৎ থমকে যাওয়া(গল্প)। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।

rupok -

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


রকিব কলেজে যাওয়ার জন্য ব্যাগে বই খাতা ভোরছিলো। এর ভীতর তার মা ডাক দিল নাস্তা করার জন্য। আসছি মা বলে রকিব ব্যাগ গোছাতে লাগলো। ব্যাগ গোছানো হলে রকিব নাস্তা করতে গেল। নাস্তা বলতে ভাত, আলু ভর্তা আর ডাল। এটাই রোজকার নাস্তা। রকিব সকালে একটু বেশি করে খেয়ে যায়। যাতে দুপুরে বাড়ি ফিরতে দেরি হলেও ক্ষুধা না লাগে। কারণ ক্ষুধা লাগলে ও তার করার কিছু থাকেনা। দুপুরে বাইরে খাওয়ার মত বাড়তি টাকা তার কাছে থাকে না। যারফলে বাড়ি এসে তারপর ভাত খেতে হয়।

ছবির সোর্স- লিংক

নিম্নবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তান রকিব। এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে উত্তীর্ণ হয়েছে। সে তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা খুব ভালোভাবে জানে। যার ফলে সে কখনোই তার মা-বাবাকে টাকা পয়সার জন্য চাপ দেয় না। বরং সবসময় চেষ্টা করে কিভাবে টাকা পয়সা বাঁচানো যায়। তার বাবা একটি দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। আর মা গৃহিনী। রকিবের বাবার স্বল্প আয়েই তাদের চলতে হয়।

রকিব ছাত্র হিসেবে যেমন ভালো। তেমনি তাঁর আচার-ব্যবহার ও অত্যন্ত ভালো। যার ফলে এলাকার সবাই তাকে খুবই পছন্দ করে। রকিবকে নিয়ে বাবা-মার অনেক স্বপ্ন। ছেলে লেখাপড়া শেষ করে ভালো কোন চাকরি করবে। তারপর তাদের দুঃখের দিন শেষ হবে। এই স্বপ্ন নিয়েই তাদের দিন কাটছে। এজন্যই রকিবের বাবা-মা যত কষ্টই হোক ছেলের পড়ালেখাটা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও রকিবের বাবার স্বল্প আয়ের তাদের চলতে খুবই কষ্ট হয়। এর ভেতরেও তারা রকিবের পড়ালেখাটা চালিয়ে যাচ্ছে। রকিবের মা বাড়িতে হাঁস মুরগি পালন করে। যাতে সেও সংসারের কিছুটা খরচ যোগান দিতে পারে। রকিব তার বাবা-মার কষ্ট ভালই বোঝে। তাই সেও মনে মনে চিন্তা করে রেখেছে যেভাবেই হোক তাকে ভালো ফলাফল করে একটি ভালো চাকরি জোগাড় করতে হবে। তারপর সে তার বাবা-মাকে অনেক ভালোভাবে রাখবে। তাদের আর কষ্ট করতে দেবেনা। এই লক্ষ্য নিয়েই সে এগিয়ে যাচ্ছে।

রকিব কলেজে হেঁটে যাওয়া আসা করে। বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব প্রায় চার মাইল। এতোপথ হাঁটতে খুবই কষ্ট হয় তার। তারপরেও কিছুই করার নেই রকিবের। কলেজে পৌঁছাতেই বন্ধু শাকিবের সাথে দেখা। দেখা হতেই শাকিব বরাবরের মত প্রশ্ন করল। আজকেও লেট করলি। রকিব উত্তর দেয় কি করব বল? এত খানিক পথ হেঁটে আসতে একটু সময় তো লাগবেই। তাছাড়া খেতে খেতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল বের হতে। তারপর তারা দুজন ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ক্লাসে ঢুকে গিয়ে দেখে ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। তারপরও স্যারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ক্লাসে গিয়ে বসে। কলেজের শিক্ষকরা ও রকিবকে খুব পছন্দ করে। তারা রকিবের অর্থনৈতিক সমস্যার কথা জানে। যার ফলে তারা রকিবকে দেরি করে আসার জন্য কিছু বলেনা।

ক্লাসে স্যার ছাত্রদের কাছে কিছু প্রশ্ন করল। রকিব ছাড়া আর কেউই সে প্রশ্নটার উত্তর দিতে পারল না। প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে। প্রথম ক্লাস শেষ হওয়ার পর বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে ক্লাস থেকে চলে গেল। অল্প কিছু ছেলেমেয়ে রইল ক্লাস করার জন্য। এই কলেজে এমনই হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা খুব একটা ক্লাস করে না। সবাই স্যারদের কাছে প্রাইভেট পড়ে। রকিব তার সমস্ত পড়া ক্লাস থেকেই শিখে নেওয়ার চেষ্টা করে। কারণ স্যারের কাছে পড়ার মতো বাড়তি টাকার ব্যবস্থা তাদের নেই। টানা তিনটি ক্লাস করার পর দুপুরে লাঞ্চের বিরতি দিল। শাকিব রকিবকে বলল চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি। রকিব বললো তুই যা আমি ক্লাস এ থাকি। পরের ক্লাসের পড়াটা একটু দেখি।

সাকিব বুঝতে পারল রকিব কি কারণে যেতে চাচ্ছেনা। তাই সে জোর করে রকিবকে নিয়ে বের হল। আসলে প্রতিদিন দুপুরে শাকিব হোটেল থেকে হাল্কা কিছু কিনে খায়। কিন্তু রকিবের কাছে টাকা না থাকায় রকিব খেতে যায় না। শাকিব এটা বোঝার পর থেকে প্রতিদিন রকিবকে নিয়ে খেতে যায়। কিন্তু রোজ রোজ অন্যের কাছ থেকে খেতে রকিবের ভালো লাগেনা। কিন্তু সাকিব নাছোড়বান্দা সে বন্ধুকে ছাড়া খেতে যায় না। রকিব দরিদ্র হলেও তার আত্মসম্মানবোধ প্রবল। তাই সে শাকিবকে লাঞ্চের সময় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। কিন্তু সে চেষ্টায় সে বরাবরই ব্যর্থ।

ওরা দুই বন্ধু যখন কলেজ গেট দিয়ে বাইরে যাচ্ছিল তখন খেয়াল করে দেখল কলেজের পরিবেশ থমথমে। গেটের ভেতরে ক্ষমতাসীন দলের একটি গ্রুপকে দেখল অস্ত্রপাতি নিয়ে বসে আছে। যখন রকিব আর শাকিব হোটেলে গিয়ে ঢুকলো হালকা কিছু খাওয়ার জন্য। তখন দেখল হোটেলের ওপাশে অন্য গ্রুপ প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওরা বুঝতে পারলো অল্পক্ষণের ভেতর হয়তো ঝামেলা শুরু হয়ে যেতে পারে। এ জন্য তাড়াহুড়া করে ওরা খেয়ে কলেজের পথ ধরল।

ওরা যখন কলেজের গেটের কাছে পৌঁছে গিয়েছে হঠাৎ করে দুই গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলো। মুহূর্তেই পুরো কলেজ ক্যাম্পাস নরকে পরিণত হল। কয়েকটা বোমার বিস্ফোরণ হলো। কয়েক রাউন্ড গুলি চলার শব্দ পাওয়া গেল। রকিব আর শাকিব ঘটনার আকস্মিকতায় পুরোপুরি হকচকিয়ে গেল। চারপাশের হুড়োহুড়িতে দুই বন্ধু বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। রকিব যখন একটি দেয়ালের পাশে পৌঁছানোর জন্য দৌড়াচ্ছিল। তখন হঠাৎ করে একটি গুলি এসে তার বুকে লাগে। সে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কিছুক্ষন এমন চলার পর যখন পরিবেশ শান্ত হলো তখন দেখা গেল কয়েকজন আহত অবস্থায় পড়ে আছে।

কলেজের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা তাদেরকে ধরে নিয়ে হাসপাতালে গেলো।আহত কয়েকজনের ভেতরে একজন মারা গেলো। তার বুকে গুলি লেগেছিল। এই ছেলেটি আর কেউ নয় সবার প্রিয় রকিব। রকিবের বন্ধু শাকিব সামান্য আহত হয়েছে। শাকিব জ্ঞান ফিরে যখন দেখে রকিব ওর পাশে নেই। তখন সে খুঁজতে শুরু করে। খুঁজতে খুঁজতে যখন রকিবের লাশ দেখতে পায় তখন সে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

এদিকে রকিবের মার কাছেও কলেজের ঝামেলার খবর পৌঁছে গিয়েছে। রকিবের মা দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে অপেক্ষা করছে রকিবের ফেরার। সন্ধ্যা হয়ে যায় তখন ও রকিব ফেরেনি। রকিবের মা বাড়ির সামনে বসে আছে দুপুর থেকে রকিবের জন্য। হঠাৎ সে খেয়াল করে দেখে অনেকগুলি ছেলে মেয়ে তার বাড়ির দিকে আসছে। সে বুঝতে পারে না আসলে কি হয়েছে। তারা কাছে আসার পর দেখে তাদের কাঁধে একটি খাটিয়ায় রকিবের লাশ। রকিবের মা ছেলের লাশ দেখে অজ্ঞান হয়ে যায়। জ্ঞান ফিরে সে রকিবের লাশ দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। এভাবেই অকালে ঝরে গেল একটি সম্ভাবনাময় জীবন এবং একটি পরিবারের স্বপ্ন।( সমাপ্ত)

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

|| Join the Discord Server for more Details ||

🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok


আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।