কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।
কয়েকদিন আগে আমার আম্মা দেশে ফিরেছে। তাকে যখন এয়ারপোর্ট থেকে আনতে যাচ্ছিলাম তখনও তার প্লেন ল্যান্ড করতে এক ঘন্টা মতো সময় বাকি আছে। যার ফলে আমরা চিন্তা করছিলাম এই এক ঘণ্টা সময় আমরা কিভাবে কাটাবো? এয়ারপোর্টে গেলে সেখানে পার্কিং লটে বিরক্তিকর সময় কাটাতে হবে। হঠাৎ করে আমাদের গাড়ির ড্রাইভার আমাদেরকে পরামর্শ দিলো কাছেই দিয়াবাড়ি নামক একটি জায়গা আছে। যেখানে অনেক লোকজন ঘুরতে আসে। আপনারাও চাইলে সেখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
তার এই প্রস্তাবটি আমাদের পছন্দ হলো। আমরাও চিন্তা করছিলাম যে আম্মা আসার আগের এই সময়টা আমরা কিভাবে কাটাবো? ড্রাইভার সাহেব পরে আরও জানান সেখান থেকে প্লেন ল্যান্ড করার সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। তার এই কথা শুনে সেখানে যাওয়ার আগ্রহ আমাদের আরো বেড়ে গেলো। আমরা তখন তাকে বললাম তাহলে চলুন সেখান থেকে ঘুরে আসি। যদিও এয়ারপোর্ট পার হওয়ার পরে কিছুটা রাস্তা আমরা বেশ খারাপ পেয়েছি। সেখানে এখনো বিভিন্ন রকম নির্মাণকাজ চলছে। যার ফলে চারদিক ধূলিধূসরিত হয়ে গিয়েছে।
যাই হোক আমরা মিনিট বিশেকের ভিতরে সেখানে পৌঁছে গেলাম। সেখানে পৌঁছে দেখি একটি সরু রাস্তা তার একপাশে লাইন ধরে বেশকিছু ফুচকার দোকান। আর কিছু লোকজনকে দেখলাম সেই রাস্তার অপর পাশে কাঁটাতারের বেড়া ধরে দাঁড়িয়ে কি যেন দেখার চেষ্টা করছে। পরে পরে বুঝতে পারলাম তারা এয়ারপোর্টের ভিতরে দৃশ্য দেখার চেষ্টা করছে। কারণ সেখান থেকে প্লেনগুলো খুব কাছ থেকেই দেখা যায়। এই ব্যাপারটা আমার কাছে খুব একটা ভালো লাগেনি। কারণ এটা যে কোন সময় একটা নিরাপত্তা ইস্যু তৈরি করতে পারে।
আমরা সেখানে পৌঁছাতেই আপু ফুচকা খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করল। আমরা তিনজন ছিলাম সেখানে। তার ভিতরে আমি আর আপু ফুচকার অর্ডার দিলাম। দুলাভাই জানালো সে কিছু খাবে না। বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আমাদের সামনে ফুচকা পরিবেশন করলো। কিন্তু ফুচকা মুখে দিয়েই প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হলো। এমন বাজে ফুচকা কখনো খেয়েছি কিনা মনে পড়ছিলো না। ফুচকাওয়ালাকে ডেকে দু কথা শুনিয়ে দিলাম এমন জঘন্য ফুচকা বানানোর জন্য।
ফুচকা খাওয়া শেষ হলে আমরা দিয়াবাড়ির ভিতরে ঢুকলাম। সেখানে দেখি ঢোকার রাস্তাটা বন্ধ করা আছে। কারণ সেই রাস্তায় নির্মাণ কাজ চলছিলো। সেখানে গিয়ে খেয়াল করে দেখি লোকজন অনেকেই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কি যেন দেখার চেষ্টা করছে। প্রথমে ব্যাপারটি আমি বুঝতে পারিনি। কিছুক্ষণ পর বিষয়টি বুঝতে পারলাম। দেখলাম দূর থেকে প্লেন আসছে লোকজন সেদিকেই তাকিয়ে আছে। আমি চিন্তা করছিলাম এত দূর থেকে প্লেন দেখে কি লাভ? কিন্তু কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ব্যাপারটি পরিষ্কার হলাম। হঠাৎ করে দেখি বেশ দ্রুত বিমান আমাদের মাথার উপর দিয়ে উড়ে চলে গেল এবং বেশ কাছ থেকেই দেখতে পেলাম সেটা।
জীবনে এই প্রথম এত কাছ থেকে প্লেন ল্যান্ড করা দেখতে পেলাম। আমরা সবাই বেশ মজা পেয়ে গেলাম। এরপর থেকে অন্যদের দেখা দেখি আমরাও দূরে তাকিয়ে থাকছিলাম প্লেনের অবতরণ দেখার জন্য। পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে অনেক মজা লেগেছে। এখান থেকে প্লেন ল্যান্ড করার বিষয়ে বেশ কিছু জিনিস জানতে পারলাম। আমরা একের পর এক বিমান নামতে দেখছিলাম সেখান থেকে। আর এদিকে একটি অ্যাপস এর মাধ্যমে দেখছিলাম যে আমার আম্মা যে ফ্লাইটে আছে সেই প্লেনটা এখন কতদূর আছে? কিছু অ্যাপস এর মাধ্যমে আপনি প্লেনের লোকেশন দেখতে পারবেন।
এভাবে অপেক্ষা করতে করতে অ্যাপসের মাধ্যমে একসময় দেখলাম প্লেনটা বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করেছে। তার অল্প কিছুক্ষণ পর দেখি প্লেনের অবস্থান দেখাচ্ছে এয়ারপোর্টের আশেপাশে। তখন আমরা খুঁজতে শুরু করলাম যে সেই প্লেন কোনটা। প্রথমে একটি প্লেন ল্যান্ড করার দিকে আমরা তাকিয়ে ছিলাম। আমরা ধারণা করেছিলাম সম্ভবত এই প্লেনে আম্মা আসছে। কিন্তু সেটি যখন মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেলো তখন দেখলাম এটা অন্য একটি এয়ারলাইন্সের প্লেন।
আমার আম্মা ফিরছিলো কাতার এয়ারলাইন্স এ করে। যার ফলে আমরা প্লেনটা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছিলাম। শেষ পর্যন্ত অ্যাপসে একটি প্লেনের লোকেশনের সাথে আমরা মিল পেলাম। তখন আমরা সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম আর আমি ভিডিও করছিলাম। সেই প্লেনটা যখন মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেলো। তখন আমরা সেখানে কাতার এয়ারলাইন্সের লোগো দেখতে পেলাম। তখন আমি নিশ্চিত হলাম যে এই প্লেনে করেই আমার আম্মা এসেছে। এবং তাকে বহনকারী প্লেনটা এইমাত্র ল্যান্ড করলো। এটা একটা মজার অভিজ্ঞতা। এতদিন আমরা বাইরে অপেক্ষা করতাম কিন্তু বুঝতে পারতাম না যে প্লেন ল্যান্ড করেছে কিনা। কিন্তু আজ আমরা প্লেন ল্যান্ড করা দেখতে পেলাম এবং আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে তিনি বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন।
Loading iframe
যেহেতু ল্যান্ড করা দেখতে পেয়েছি তাই ল্যান্ড করার মিনিট দশেক পরেই আমি আমার আম্মার মোবাইলে ফোন দিলাম। প্রথমবার বন্ধ পেলেও দ্বিতীয়বারে আম্মা ফোন রিসিভ করল। এই ব্যাপারটিও সম্ভব হয়েছে এখানে থাকার কারণে। কারণ আমরা যদি এয়ারপোর্টের পার্কিং লটে অপেক্ষা করতাম তাহলে বুঝতে পারতাম না যে তার ফ্লাইট কখন এসে পৌঁছেছে। কিন্তু এখানে থাকার ফলে আমরা তৎক্ষণাৎ দেখতে পেয়েছি এজন্য সাথে সাথে যোগাযোগ করতে পারলাম। প্রযুক্তির কল্যাণে আজকে মানুষের জীবন কত সহজ হয়ে গিয়েছে। আমরা প্লেনটা ল্যান্ড করার পরেই সেখান থেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।