শুভ নববর্ষ ১৪৩১

rme -

ব্যানার ডিজাইন : @hafizullah


"আমার বাংলা ব্লগ"-এর সকল সদস্যকে জানাই শুভ নববর্ষের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা

আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা ১৪৩১ সালের প্রথম দিন । বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে আজ বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হচ্ছে । সপ্তদশ শতাব্দীতে বঙ্গাধিপতি মহারাজ শশাঙ্ক বাংলা বর্ষ চালু করেন । তাঁরই আমলে সর্বপ্রথম বাংলা বর্ষপঞ্জী তৈরী করা হয় । শশাঙ্কের এই বাংলা বর্ষপঞ্জী ছিল মূলতঃ হিন্দু ধর্মের নানান পূজা ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সঠিক দিন মাস ও সময় নির্ধারণের জন্য । তাই এই বর্ষপঞ্জীর ব্যবহার ছিল প্রধানত হিন্দু পুরোহিত শ্রেণীর হাতে । বাংলার সর্বসাধারণের জন্য নয় ।

এর বহু পরে মুঘল সম্রাট বাংলা দখলের পর শশাঙ্কের বর্ষপঞ্জীকে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে পরিবর্তন ও পরিমার্জন করে বাংলার জনসাধারণের জন্য প্রচলন করেন । সেই থেকে প্রত্যেক বছর বৈশাখ মাসের প্রথম দিনটিকে বাংলা নববর্ষের সূচনা বলে অভিহিত করা হয় ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারির আমলে পহেলা বৈশাখে হালখাতার পাশাপাশি পুণ্যাহ অনুষ্ঠানের কথা শোনা যায় । এই পুণ্যাহ কিন্তু, মুঘল বাদশা আকবরের আমলের রাজস্ব আদায়ের সেই বর্ষপঞ্জীর কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় । পুণ্যাহ মূলত ছিল বাংলা নতুন বছরের সূচনায় প্রজা কর্তৃক একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিগত বৎসরের সকল খাজনা শোধ করা । খাজনা শোধ করার পরে মিষ্টি বিতরণ ও ভোজ সভার আয়োজন করা হতো । এটিই পুণ্যাহ ।

আর হালখাতা তো আমরা জানিই । এই অনুষ্ঠানটিও হয় বাংলা নববর্ষের দিনে । ব্যবসায়ীরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন । আর তাঁদের সকল খদ্দের শ্রেণীর মানুষ এই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত হয়ে এসে তাঁদের যত বাকীর খাতা থাকে সেগুলো থেকে সমুদয় বাকী পরিশোধ করে নতুন বাকীর খাতা শুরু করেন । এটিই হালখাতা ।

আবার পহেলা বৈশাখের এই দিনটিকে হিন্দু ধর্মের অত্যন্ত মঙ্গলময় একটি দিন হিসেবে দেখা হয় । তাই এই দিনে প্রায় প্রতিটা বাড়িতে পূজা সহ নানান মাঙ্গলিক শুভ আচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে । ছোটবেলায় দেখেছি পয়লা বৈশাখের দিনে আমাদের গ্রামের প্রতি বাড়িতে ভগবতী পুজো হতো ।

এখন প্রত্যেক বছর পয়লা বৈশাখ কাটে আমার ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে বিশাল এক ভোজ আর বিকেলে হালকা ঘোরাঘুরির মাধ্যমে । এ বছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না । প্রত্যেক পয়লা বৈশাখের মতো এ বছরও ঘুম থেকে উঠেই রবীন্দ্র সংগীত চালিয়ে দিলাম ফুল ভলিউমে ।

"এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।
তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক॥

যাক পুরাতন স্মৃতি,
যাক ভুলে-যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক॥
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।"

গানটি না শুনলে আমার পয়লা বৈশাখ অপূর্ন থেকে যায় । গান শুনতে শুনতে কিছুক্ষণ পায়চারি করি । এরপরে ল্যাপটপ অন করে কিছুক্ষন কাজ করতে করতেই খাওয়ার সময় হয়ে যায় । সকালে আজকের পয়লা বৈশাখের স্পেশ্যাল মেন্যু ছিল -

০১. পান্তা ভাত
০২. গরম ধোঁয়া ওঠা আতপ চালের ভাত
০৩. আলু ভর্তা
০৪. বেগুন পোড়া ভর্তা
০৫. মিষ্টি কুমড়ো ভর্তা
০৬. ঢ্যাঁড়শ ভর্তা
০৭. সোনামুগ ডাল ভর্তা
০৮. বরবটি শিম ভর্তা
০৯. কালোজিরা ভর্তা
১০. টমেটো ভর্তা
১১. চিংড়ি শুঁটকি ভর্তা
১২. কাঁচকলা ভর্তা
১৩. কচু ভর্তা
১৪. পেঁপে ভর্তা
১৫. ইলিশ মাছ ভাজা
১৬. পুঁটি মাছ ভাজা
১৭. কাঁচা আমের চচ্চড়ি

খেয়েদেয়ে এখন পোস্ট লিখে এখন স্নান করে বাইরে ঘুরতে বেরোবো একটু । সবাই ভালো থাকবেন, আনন্দে থাকবেন এই কামনায় আরো একবার সবাইকে জানাই শুভ নববর্ষ



Creative Common License Under Fair Usage Policy- Source : Wikimedia


------- ধন্যবাদ -------


পরিশিষ্ট


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code



VOTE @bangla.witness as witness

OR

SET @rme as your proxy





»»——⍟——««