এবার বারাসাতের কালীপুজো দেখা যেন শেষই হচ্ছে না। একটা প্যান্ডেল দেখে বেরোতে না বেরোতেই দেখি সামনে আরেকটা প্যান্ডেল আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আর এবার ছোট বড় সব প্যান্ডেলগুলোই এত সুন্দর হয়েছে যে, না দেখে বাড়ি চলে আসব এটা ভাবতেই পারছি না। আর বছরে একবার এই কালী মায়ের এত বড় করে পূজো হয়, তাও যদি সবকটি প্যান্ডেল না দেখি বা ভালো করে না ঘুরতে পারি তাহলে সারা বছর মন খারাপ হয়ে থাকবে যে এ বছর ভালো করে কালীপুজোয় ঘুরতে পারলাম না আর প্যান্ডেলগুলো ঠিক করে দেখতেই পারলাম না। তাই মনের মধ্যে কষ্ট যেন না থাকে সেই জন্য আমরা একটার পর একটা দেখেই চলেছি এবং আরো যে কটা বাকি আছে সে কটাও দেখে তারপর বাড়ি যাবো সেটাই ভেবেছি। আর এখনো যেহেতু আমাদের প্যান্ডেল দেখার উদ্যম হাই লেভেলে রয়েছে তাই আমরা হেটে চলেছি আরেকটি প্যান্ডেল দেখার উদ্দেশ্যে। হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছি সুন্দর একটি প্যান্ডেলের সামনে।
প্যান্ডেলের সামনে দাঁড়াতেই দেখতে পেলাম ওপরে লেখা 'ফিরে দেখা শৈশব'। আর তার পাশেই রয়েছে ঠাকুরমার ঝুলি, বাটুল দি গ্রেট, নন্টে ফন্টে ও হাদাভোদা কার্টুনের ছবি যে কার্টুনগুলো আমরা শৈশবে দেখতাম। আর এই বাঁ দিক জুড়ে দেখা যাচ্ছে একটি সাদা রংয়ের অর্ধেক মুখমন্ডল। মুখমণ্ডলটি দেখতে বেশ ভালই লাগছে কারণ সাদার উপরে সুন্দর কলকা করা। এই মুখমন্ডলের চোখের অংশটা ফাঁকা রয়েছে কিন্তু অপরদিকে দেখা যাচ্ছে অনেকগুলি চোখ রয়েছে। ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে নিষ্পাপ আমি শৈশবের মতো চুপচাপ ভেতরে প্রবেশ করলাম। ভিতরে ঢুকতেই একদম সোজাসুজি চোখ পরল একটি মুখমণ্ডলের দিকে। এই মুখমণ্ডলটি চোখ সুন্দর কোমল ভাবে একটু খোলা এবং অর্ধেক বন্ধ করা রয়েছে। মুখে একটি মৃদু হাসি। মুখমন্ডলের ঠিক ওপরে রয়েছে একটি ঘড়ি। এই ঘড়িটি বড়ই অদ্ভুত কারণ এই ঘড়ির একদম ডানদিকে রয়েছে ১৯৬০ সাল, নিচের দিকে ১৯৮০ সাল, বাঁদিকে ২০০০ সাল এবং একদম উপরে ২০২৪ সাল। ঘড়ির কাটার জায়গায় একটি মানুষ রয়েছে যিনি ঘুরে চলেছে। তবে এখন ২০০০ সালে রয়েছে।
আমরাও এমন এক একটি সাল পেরিয়ে এগিয়ে চলেছি সামনের দিকে আর প্রতিনিয়ত ছেড়ে যাচ্ছি অনেক সুন্দর সুন্দর স্মৃতি। যা আবার ভবিষ্যতে কোন এক সময় মনে পড়বে। যেমন এখন শৈশবের সেই সুন্দর দিনের কথা মনে পড়ে। আরেকটু এগিয়ে চারিপাশটা দেখতে লাগলাম। একদিকে দেখতে পেলাম ছোটবেলায় পড়া সেই কবিতার মধ্যে কিছু কিছু কবিতার লাইন এখানে লেখা আছে। কিছুটা সামনে আবার বড় একটি দাবা খেলার কোট সাজানো আছে। আমি আর আমার দিদি ছোটবেলায় খুব দাবা খেলতাম। এই দাবার কোট দেখে সেই ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেল। দাবার কোটের পাশেই একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে বড় একটি বাক্স নিয়ে, এই বাক্সে কয়েকটি ফাঁকা আছে যা দিয়ে তাকালে অনেক সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। এই বাক্স সম্পর্কে জানলেও আমি এই বাক্সটিকে কখনো সামনাসামনি দেখিনি। এই বাক্সটি দেখেছি পুরনো দিনের সিনেমাতে। একটি দেওয়ালে লুডুর কোট করা রয়েছে। আগে সবাই মিলে সন্ধ্যা বেলায় একসাথে বসে লুডু খেলত এবং হারজিতের মাধ্যমে কতইনা মজা হত।
অপরদিকে দেওয়ালে দেখা যাচ্ছে ঠাকুরমার ঝুলির ঠাকুমা বসে আছেন এবং তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে বাটুল দি গ্রেট। তার পাশে একটি বাড়ির মধ্যে থেকে উঁকি মারছে হাদাভোদা। আরেক দিকে দেখা যাচ্ছে নন্টে ফন্টের ঘাড়ের ওপরে উঠে পালাচ্ছে। শৈশবের বিভিন্ন মজাদার কার্টুন ক্যারেক্টার এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও অনেক কবিতা এবং পুরনো অনেক স্মৃতি আবার স্মরণ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এই প্যান্ডেলে এসে শৈশবের সুন্দর স্মৃতিচারণ হয়ে গেল। সবকিছু দেখে এতটাই ভালো লাগলো যে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আমরা এবার মা কালীর প্রতিমা দর্শনের জন্য এগিয়ে গেলাম। মায়ের সামনে গিয়েই সবার আগে চোখ পরল মায়ের পেছনে রাখা কাগজের ফুল গুলোর দিকে। ছোটবেলায় কাগজ দিয়ে বিভিন্ন রকমের ফুল তৈরি করতাম, সেটাও যেন হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল। তবে মায়ের প্রতিমা দেখে খুব সুন্দর লাগছিল মনে হচ্ছিল মায়ের যেন গায়ে হলুদ। সুন্দর একটি হলুদ রঙের শাড়ি এবং লাল পাড় পড়ে আছেন। তার মধ্যে আবার সবুজ রঙের ছোঁয়া। মায়ের প্রতিমাটি এবং মায়ের মিষ্টি মুখ দেখে অনেক ভালো লাগছিল। মাকে প্রণাম জানিয়ে এবার আমরা বেরিয়ে এলাম।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।