সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
প্রায় বছর দুই আড়াই আগে কবি আমার হাতে বইটা তুলে দিয়ে স্বয়ং কবিই বলেছিল, দিদি পড়ো। এতো সুন্দর সব লেখা৷ তাই ভাবলাম একটা রিভিউ করি৷ এখানে অনেকেই কবিতা লেখেন। তাই মনে হল কবিতার বইয়ের রিভিউওটা আপনাদের বেশ ভালোই লাগবে৷ তাছাড়া আমি নিজেও কবিতা পড়তে ভালোবাসি৷ ফলে কবিতার বই রিভিউ করতে বেশ ভালই লাগে।
বর্তমানে বাংলা কবিতা কতখানি এগিয়ে গেছে, কত সুন্দর লেখা হয় তারই নিদর্শন এই বইটি। তাই চলুন দেরী না করে দু চার কথা লিখি।
প্রচন্ড শীতের দুপুরে যখন বাংলায় সবাই রোদের দিকে পিঠ রেখে শুয়ে থাকে তখন আমাকে ফ্যান চালিয়ে গরম তাড়াতে হত। এরকমই এক দুপুর পেরিয়ে বিকেলে ঢুকতে যাচ্ছি কুরিয়ার বয় এসে দিয়েছিল 'বনতুলসীর লিপি'। সুন্দর করে কাঁচি দিয়ে কেটেছিলাম মাথার দিক। সাদা খামের ভেতর খবরের কাগজে মোড়া প্রবীরের সৃষ্টি৷ প্রচ্ছদ দেখলেই বোঝা যায় সুকান্ত(প্রকাশকের নাম) কতখানি যত্নশীল বই নিয়ে৷
তারপর বই বের করে হন্যে হয়ে খুঁজছি ভাইয়ের চিঠি৷ সে চিঠি নেই৷ তিন লাইনে ছ'টা শব্দে ভালোবাসা লিখে দিয়েছে৷ ভাইয়ের ওপরে অভিমানের যায়গা নেই৷ তাই পাতা ওল্টাতে শুরু করলাম।
"তোমাদের কারোর সাথেই আমার তেমন
কোন পরিচয় নেই"
নাইবা হলো পরিচয়। মুখোমুখি বসলেই কি চেনা? স্বপ্নে তরল স্রোত বয়ে যাওয়ার মতো নরম কবিতা দিয়ে শুরু করলাম মহাকাশ ভ্রমণ। তারপরের কবিতায় প্রবীর হ্যাজাক জ্বালিয়েছে৷ লতাগুল্ম থেকে আলো তুলে ভাগ করে দিচ্ছে অরন্যের অন্ধকার। মাটির কথা। যেখানে কাটাকুটি খেলতে খেলতে তাঁবুওয়ালাদের শরীর থেকে খুলে পড়ছে খোলস আর রঙ। বুকের ভেতর প্রাচীন তক্ষক পুষে স্বপ্ন দেখতে দেখতে কেউ কঁকিয়ে ওঠে৷ কেউ কেঁপে ওঠে তিরতির করে৷
তারপর চলে আসি লেবু গাছের গন্ধ নিতে৷ গ্রামবাংলার লেবুতলায় বসে বিষাদ পান করার মতো কেউ কেউ ফিরে এসে মাথা এগিয়ে দেয় গাছের দিকে।
লবঙ্গ, হরিতকী৷ আমাদের দেশ পাড়া গাঁয়ে হরিতকী গাছেও কোকিল বসে ডাক দেয়৷ ঘর হারা দু একটা টিয়াপাখি জানালায় বসে মন দিয়ে শুনে নেয় দাশরথি রায়ের ছড়া৷ এদিকে কেউ তার নিজের ভেতর থেকে পাতকুয়া টেনে তুলে আনে৷ কান পেতে শুনে নেয় কলঙ্কিত দাগ আর গভীর আর্তনাদ৷
একে একে বর্ষায় ঢুকে পড়ি। শীতকালে গরমের মধ্যে বর্ষা সিরিজ পড়তে পড়তে বার বার মনে হয়েছে একটা আস্ত বছর বারোটা মাস আমার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। গ্রামগুলোতে যেমন গাছের শুকনো পাতা পড়ে থাকে অবহেলায় তেমনি পড়ে থাকে অন্ধকার, স্বপ্ন, ফাঁকা মাঠ, জোনাকী৷ কানে কানে বিরহের গান গাইতে গিয়ে শামুকরা ডুবে যায় বর্ষার জলে। সেখানেই দেখছি একটি নদী দু'হাত বাড়িয়ে শুষে নিচ্ছে আরোগ্যের চাবিকাঠি৷
কোথাও কোথাও গান হয়। গতজন্মের কবিয়াল। মাউথ অর্গ্যানের সুর, শেয়ালের ডাক একে একে সাদা কাগজের বুক ভরে যায় সুক্ষ্ম আনন্দে৷ হিসেব করে করে স্বপ্ন দেখা দিনগুলোতে নবদ্বীপ গড়ে ওঠে৷ যুবাপুরুষেরা অপেক্ষা করে আলোকিত করবে দুপুরের গান আর হেমন্তের রোদ্দুর৷ এবং একটি সিনেমাওয়ালা এসে স্বপ্নভঙ্গের কাজে নিজেকে সঁপে দিয়ে তৈরি করে নিচ্ছেন অদ্ভুত সব দৃশ্য। যেখানে ভাটফুলের জঙ্গল হিজলফুল মিলে প্রাকৃতিক বাগানে ছড়িয়ে দিচ্ছে রিনরিনে চুড়ির আওয়াজ।
যেভাবে স্বপ্নে ডুবে যাওয়া সহজ সেভাবেই ডুবে থেকেছি বনতুলসীর প্রতিটা অক্ষরে৷ এই অক্ষর আমাদের নির্জন পাড়াগাঁয়ের কিংবা মফঃস্বলের৷ শান্ত দুপুরে একাকী রাস্তা শুয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়ার গল্পের মতো অ্যান্টিসেপ্টিক।
প্রবীর বলে আমার গদ্যের হাত খুব ঝরঝরে। জানিনা এই লেখা কত খানি গোবিন্দভোগ চালের মতো সুগন্ধি সম্পন্ন। আমি শুধু চেষ্টা করেছি মাত্র। বাকিটা আপনাদের হাতে। কেমন লাগল পড়ে অবশ্যই জানাবেন।
আজ তবে এই পর্যন্তই...
টা টা
পোস্টের ধরণ | বই রিভিউ |
---|---|
বইয়ের নাম | বনতুলসীর লিপি |
কবি'র নাম | প্রবীর মজুমদার |
প্রকাশক | শাঙ্খিক প্রকাশনী |
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি, ইনশট |
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।