New to Nutbox?

হুমায়ূন আহমেদের বৃষ্টি বিলাস বই নিয়ে কিছু কথা

1 comment

mrsokal
66
6 days agoSteemit4 min read

Green and White Nature Thank You Facebook cover_20241217_151111_0000.png

Image edited in canva

"বৃষ্টি বিলাস" বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছিল এটি শুধু একটি উপন্যাস নয়, বরং এক ধরনের জীবনের উপলব্ধি। হুমায়ূন আহমেদের লেখনী কখনোই শুধু গল্প বলা নয়; তিনি মানুষের গভীর আবেগ এবং জীবনচিত্রকে মেধার সাথে তুলে ধরেন। "বৃষ্টি বিলাস" তারই এক অমূল্য উদাহরণ, যেখানে তিনি বৃষ্টির নিকটতম অনুভূতির মাধ্যমে মানুষের এক একক জীবনযাত্রার বর্ণনা দিয়েছেন। এই উপন্যাসে বৃষ্টি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, বরং এক তিক্ত অনুভূতির প্রতীক হয়ে উঠেছে। বৃষ্টির সময় যে আনন্দ বা উচ্ছ্বাস মানুষের মনে জাগে, তা এখানে পুরোপুরি উল্টো। বৃষ্টির মধ্যে এমন কিছু স্মৃতি বয়ে চলে, যা জীবনকে অনেক গভীরে ঠেলে দেয়। শামা, এশা, আতাউর, মুত্তালিব চাচা – প্রত্যেকটি চরিত্র যেন তাদের নিজেদের অতীতের ভাঁজে হারিয়ে যাওয়া এক একটি বৃষ্টির গল্প।

হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘বৃষ্টি বিলাস’ প্রতিটি চরিত্রের মাধ্যমে যেন একেকটি জীবন্ত কাহিনী তুলে ধরেছে। এই উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রের ভেতর লুকিয়ে রয়েছে একাধিক দিক, যা তাদের আচার-ব্যবহার এবং মনস্তত্ত্বে প্রকাশ পায়। যেমন, শামা- সে এক দুরন্ত, মেধাবী এবং প্রখর মনোভাবের প্রতিচ্ছবি। তার চিন্তা-ভাবনা, তার জীবনের প্রতি আকাঙ্ক্ষা, সবকিছুই যেন তাকে একটি আলাদা রূপ দেয়। এশা, শামার ছোট বোন, যে মনে করে সে অনেক বুদ্ধিমতী। তার জীবনযাত্রা এবং চিন্তা-ধারণা একদম পরিকল্পিত ও সঠিক বলে মনে হয়। কিন্তু নিজের বুদ্ধির প্রতি তার সন্দেহও আছে। সে জানে, অতিরিক্ত চালাক মানুষ প্রায়ই বিপদে পড়ে, যেমন সে বলেছিল, “অতি চালাকের গলায় দড়ি।” এশার চরিত্রের মধ্যে যেমন আত্মবিশ্বাস, তেমনি এক ধরনের অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্বও রয়েছে।অন্যদিকে, মুত্তালিব চাচা, শামার বাড়িওয়ালা, একজন অতীতের অভিজ্ঞতাভিত্তিক ব্যক্তি। সে শামার জন্য কিছু করতে চায়, কিন্তু জীবনের অতীত হারের ভয় তাকে পেছনে টেনে রাখে। তার অক্ষমতা এবং দ্বিধা চরিত্রের একটি গভীর অনুভূতি সৃষ্টি করে।

pexels-thgusstavo-16321793.jpg

Source

আতাউর, উপন্যাসের আরেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, যাকে শামা মজা করে “খাতাউর” বলে ডাকে। এক সময়, শামা মনে করত যে আতাউরই তার জীবনের গল্পের অংশ। শামার বাবা তার বিয়ে ঠিক করে, কিন্তু কিছু দিন পর জানা যায় আতাউরের একটি বিরল অসুখ রয়েছে, যা তার জীবনে এক অদ্ভুত বাধা সৃষ্টি করে। আতাউরের অসুখটি এমন, যা তার ছোটবেলার এক তিক্ত স্মৃতি থেকে উদ্ভূত। বৃষ্টির সঙ্গে তার অসুখের সম্পর্কের কারণে বর্ষাকালে বৃষ্টির সময় তার মধ্যে এই অসুখ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। আতাউরের অসুখটি এমন এক যন্ত্রণা, যা তাকে একঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে। তবে, চিকিৎসায় তার অবস্থার উন্নতি হয় না, বরং বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। আতাউরের অসুখের রহস্য এবং তার সঙ্গে শামার সম্পর্কের জটিলতা, উপন্যাসের গতিপথকে এক গভীরতর মাত্রায় নিয়ে যায়।

উপন্যাসের শেষ দিকে, শামা এক কঠিন সিদ্ধান্তের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, আর সে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে চলে। তবে, এখানেই বইয়ের শেষের দিকটি অনিশ্চিত। শামার দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার ভবিষ্যতের দিকে চলার পথ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। আতাউরের অসুখ এবং বৃষ্টির মতো আবেগ, শামাকে এক অদ্ভুত দ্বিধায় ফেলে দেয়। শেষে, যখন শামা তার বিয়ের জন্য চলে যায়, তখন তার মানসিক অবস্থা এবং মনোভাবের পরিবর্তন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। উপন্যাসের শেষাংশে কোনো নির্দিষ্ট সমাধান বা সিদ্ধান্তের ছাপ নেই। বরং শামার অন্তর্দ্বন্দ্ব, আতাউরের প্রতি তার আকর্ষণ এবং তার নিজস্ব জীবনের দিকে ছুটে চলার অনুভূতি উপন্যাসটির সমাপ্তি হয়ে ওঠে। এটি পাঠকদের জন্য একটি অমীমাংসিত কিন্তু গভীর মানসিক উত্তেজনা সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘসময় মনে থেকে যায়।

“বৃষ্টি বিলাস” আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে জীবনে কখনো কিছু সম্পর্ক আমাদের হাতের নাগালে থাকে না, কিন্তু তবুও সেই সম্পর্কগুলো আমাদের জীবনে এক অদ্ভুত ছাপ রেখে যায়। এই উপন্যাসে মানবিক সম্পর্কের জটিলতা, প্রেম, অপ্রাপ্তি, এবং জীবন থেকে এক অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তের নেয়ার বিষয়গুলো অত্যন্ত বাস্তবধর্মীভাবে তুলে ধরা হয়েছে।প্রতিটি চরিত্রের ভেতরের আঘাত, প্রেম, তিক্ততা, এবং জীবনবোধ এক অনন্য শক্তি তৈরি করেছে। সত্যি বলতে, বইটি শেষ করার পরও দীর্ঘ সময় ধরে তার প্রভাব মনের মধ্যে থেকে গেছে। “বৃষ্টি বিলাস” হুমায়ূন আহমেদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজগুলোর মধ্যে একটি। এটি কেবল একটি রোমান্টিক উপন্যাস নয়, বরং জীবনের অদ্ভুত সিদ্ধান্ত এবং সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে এক অনবদ্য পাঠ। যারা বাস্তবিক জীবন এবং সম্পর্কের গভীরতা বোঝেন, তাদের জন্য এটি এক অসাধারণ বই।

Comments

Sort byBest