ট্রেন জার্নি।
10 comments
আজ - ৯ই অগ্রহায়ণ |১৪২৯ , বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল |
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
যাইহোক আজ আমি প্রথমবারের মতো আপনাদের সাথে একটি ট্রাভেল ব্লগ শেয়ার করতে চলে এলাম। আজ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার সময় পুরো জার্নিটা কেমন কেটেছে সেটিই শেয়ার করব আপনাদের সাথে।
যাইহোক আগের দিন রাতে লাগেজ গুছিয়ে রাখা হয়েছিল। কেননা খুব ভোরে বেরিয়ে পড়তে হবে। আমাদের ট্রেন ছাড়ার সময় হচ্ছে সকাল সাতটা। তাই সকালে উঠে তাড়াহুড়া করে আসলে এতকিছু গুছিয়ে নাওয়া সম্ভব নয়। তাই রাতেই সবকিছু গুছিয়ে নেয়া হয়েছে। সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘুম থেকে উঠি। চোখে প্রচন্ড ঘুম বিছানা ছেড়ে একদমই উঠতে মন চাইছে না। ইচ্ছে করছিলো আরো কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে। তবে সেটির আর উপায় নেই। ইতিমধ্যেই সকলেই ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে তাড়াতাড়ি উঠার জন্য। তাই কিছুক্ষণ বিছানায় গড়িয়ে দ্রুত উঠে পড়ি। কেননা হাতে বেশি সময় নেই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিতে হবে। এত সকাল লাস্ট কখন যে ঘুম থেকে উঠেছি সত্যিই আমার মনে পড়ছে না। এই সময়টা সাধারণত ঘুমের ঘোরেই কাটিয়ে দিই আমি।
যেহেতু আত এত সকালে ঘুম থেকে উঠেছি তাই একদমই খেতে ইচ্ছা করছিল না। তাই কোনো নাস্তা না করেই শুধুমাত্র এক কাপ রঙ চা খেয়ে বেরিয়ে পড়ি সকাল ছয়টা বাজার ১৫ মিনিট আগে। আমাদের বাসা থেকে স্টেশন মোটামুটি অনেকটাই দূরে। সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ মিনিটের মত সময় লাগে যেতে।
বাসা থেকে বেরিয়ে বেশকিছুক্ষণ রাস্তায় হাঁটতে হয়েছে কেননা একদমই গাড়ি পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে কিছুক্ষণ হাঁটার পর মেইন রোড থেকে আমরা গাড়ি পেয়ে যাই । আজ রোড গুলো একদম ফাঁকা ফাঁকা হয়ে আছে। রাস্তাঘাটের এমন স্বচ্ছ পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে এই যেন অন্য এক শহরে চলে এসেছি। চেনা জানা সে যানজট ও কোলাহল যুক্ত সেই শহর টা যেন এক নিস্থব্দ , শান্ত, নিরিবিলি শহরে পরিণত হয়েছে। সত্যি সকালটা অসম্ভব সুন্দর যা আমি আরো একবার উপলব্ধি করতে পেরেছি।
গাড়িগুলো ছুটছে যেন এক রকেটের গতিতে। রাস্তাগুলো একদম পরিষ্কার, গাড়ি-ঘোড়া খুব একটা বেশি নেই। মাঝেমধ্যে দুই একটা গাড়ি চলছে রাস্তার মধ্যে। তাই ৩০থেকে ৩৫ মিনিটে রাস্তাটা আমরা ২০ মিনিটে পার করে ফেলেছি।
যাই হোক, আমরা সাড়ে ছয়টার মধ্যে স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছি। এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে সিটগুলো খুঁজে নিয়েছি। আমাদের বগিটা অনেকটাই সামনের দিকে ছিল যার কারণে খুব বেশি হাঁটতে হয়নি । যাইহোক সিটগুলো খুঁজে নেওয়ার পর পাশের ফেরিওয়ালা থেকে কিছু স্নাক্স আইটেম কিনে নিয়েছিলাম যাতে ট্রেনে যেতে যেতে খেতে পারি। ট্রেন ছাড়তে আরো কিছু সময় বাকি আছে। তাই বসে বসে এই ব্লগের শুরুর দিকটা লিখছি। ইতিমধ্যে আমাদের সামনে যে সকল সিট গুলো খালি ছিল তার মধ্যে যাত্রী আসতে শুরু করেছে। যাইহোক যথাসময়ে অর্থাৎ ঠিক ৭ টা ৫ মিনিটে ট্রেনটি ছেড়ে দেয়। এরপর ঝিকঝিক শব্দ ট্রেনটি চলতে শুরু করে।
তখন সকাল সাতটা তাই আকাশে ঠিকমত রোদ উঠেনি। হালকা হালকা কুয়াশা তখনো পর্যন্ত ছিল। দূরের জিনিস গুলো খুব একটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। তবে সময়ে পেরোতে কুয়াশা কাটিয়ে পূর্ব দিকে সূর্য উঁকি মারছেন। আর আমার সিটটি ছিল পূর্বদিকে ঠিক জানালার পাশে তাই সূর্য ওঠা মাত্রই রোদ টুকু আমার গায়ে এসে পড়ছিল। শুরুর দিকে রোদটা ভালো লাগলেও পরবর্তীতে বেশ গরম লাগা শুরু করছিল ওই রোদের কারণে। যদিও বাতাস ছিল প্রচণ্ড বেগে তারপরও ওই রোদ টুকু আর সহ্য হচ্ছিলো না। এছাড়া গায়ে ছিল গরম জামা। শরীরটা যেহেতু একটু অসুস্থ এবং সকালে যেহেতু ঠান্ডা লাগছিল তাই ফুলহাতা একটি মোটা গেঞ্জি পড়ে ছিলাম। রোদ থেকে বাঁচতে জানালার পর্দা মেলে দিয়েছি কিন্তু প্রচন্ড বাতাসের কারণে বারবার পর্দাটা সরে যাচ্ছিল আর রোদটা আবার গায়ে পড়ছিলো। এরপর একপ্রকার বিরক্ত হয়ে হয়ে জানালাটা বন্ধ করে দিয়েছি।
যাইহোক ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে ঘণ্টাখানেকের বেশি হতে চলল। ইতিমধ্যেই শহরের গণ্ডি পেরিয়ে গ্রামের মধ্যে দিয়ে ছুটে চলছে ট্রেনটি। সারি সারি কলাগাছ, সবজির ক্ষেত, ট্রেনে বসে জানলা দিয়ে উঁকি মারে দেখছিলাম এই সকল দৃশ্যগুলো। আর আমি মনে করি ট্রেন জার্নি সবথেকে ভালো লাগার কারণ হচ্ছে এই সকল সুন্দর দৃশ্য গুলো দেখতে পাওয়া। যাইহোক ট্রেন চলার পথে মাঝে কয়েকবার কয়েক মিনিটের জন্য থেমেছে এরপর আবার চলতে শুরু করেছে।
এভাবে পর হয়ে যায় ৫ ঘন্টা। এবং দুপুর ১২:৩০ টাই এসে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন থামে। তাড়াহুড়া না করে বেশিরভাগ যাত্রী নামার পরে আমরা ট্রেন থেকে নেমে পরি। মামা নিতে এসেছে আমাদেরকে তাই ট্রেন থামার সাথে সাথে মামা এসে হাজির আমাদের বগির সামনে। ছোট ছোট বাচ্চাগুলো একদম ঘিরে ধরেছে মালপত্র গুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য। তবে তাদেরকে খুব একটা পাত্তা না দিয়ে আমরা হেঁটে চললাম সামনের দিকে।
সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Comments