পরিবারকে নিয়ে কয়কদিনের জন্য নিজ শহর থেকে দূরে কোথাও - পর্ব: ১||১০% বেনিফিশিয়ারি shy-fox এর জন্য

mayedul -

হ্যালো আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।

গতরাতে ঘুমাতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি ঠিক তখনি মোবাইল ফোনের রিংটোনটা বিকট আওয়াজ করে বেজে উঠলো। মনেমনে একটু বিরক্তই হলাম ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি আমার শশুর আব্বা। সালাম দিয়ে বললাম কেমন আছেন, ভালো আছি কুশল বিনিময়ের পর উনি বললেন আগামীকাল রংপুর যাওয়া লাগবে তোমার শাশুরির অপারেশন। ব্যাস এখন আগামীকালের সমস্ত পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হবে।
আমাকে অন্যদের তুলনায় একটু বেশি দায়িত্বপালন করতে হয় কারন আমার মিসেসের কোন ভাই নাই। যদিও মেজর কোন অপারেশন না, চোখের ছানি অপারেশন আর লেন্স পড়ানো। আমারও একটু একঘয়েমী লাগছিলো অনেকদিন বাইরে যাওয়া হয়না, সবাইকে নিয়ে একটু ঘুরে আসি মনস্থির করলাম। ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে মনে মনে সবাই খুশি, অনেক রাত তাই কোন হইহুল্লোড় করা যাবেনা সবাই যার যার মত ঘুমিয়ে পড়লাম এটাই উত্তম।

খুব সকালেই বাসার সামনে গাড়ি চলে আসল আমরা সবাই গাড়িতে উঠে বসলাম। তারপর ড্রাইভার সাহেব গাড়ি চালানো শুরু করলেন, আমরা চেনা শহরকে পেছনে ফেলে হাইওয়ের পথ ধরে এগিয়ে চললাম। আজকের পরিবেশটা আমার কাছে অন্যরকম ভালো লাগলো, কুয়াশার চাদরে ঢাকা কি শান্ত পরিবেশ, চারিদিকে নিস্তব্দ। আমরা শহরের প্রবেশপথ পেরিয়ে সমনের দিকে এগুতে থাকলাম।

রাস্তার পাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে আমার খুব ভালই লাগছিল। কিছুদূর যাওয়ার পর ঠাটমারি বধ্যভূমি চোখে পড়লো, এর পেছনের ইতিহাসটা আমাদের জতটানা কষ্টের তার চেয়ে বেশি গৌরবের। এই ইতিহাস এখানে বর্ননা না করাই ভালো তারচেয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাই। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি ইট ভাটাগুলো আমাদের পরিবেশের কি নিদারুণ ক্ষতি করছে সেটিও নিরবে দেখতে হচ্ছে।

প্রকৃতির নিজস্ব একটা সৌন্দর্য আছে, আমাদের দেশ কৃষির উপর নির্ভরশীল কৃষি কাজ করেই গ্রামের অধিকাংশ লোক তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। আমাদের দেশের অর্থনীতি মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল যদিও ক্রমশ পরিবর্তনশীল। বছরের এই সময়টাতে প্রকৃতি নতুন করে সেজে ওঠে শহর থেকে একটু বাইরে গেলেই সেই দৃশ্য চোখে পড়ে। মাঠের দিকে চোখ পড়লেই দেখা যায় মানুষের কর্মচাঞ্চল্য কেউ জমিতে লাঙল দিচ্ছে, কেউ চারা রোপন করছে, আবার কেউবা জমিতে পানি নিচ্ছে। প্রকৃতির এই নিজস্ব সৌন্দর্য দেখে আমি সত্যিই অনেক অনেক আনন্দে উদ্বেলিত।

তিস্তা ব্রিজের নদী শাসনের বাঁধের পাশেই চমৎকার একটি পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। পার্কটিতে ছোটদের বিনোদনের জন্য যেমন পর্যাপ্ত সুযোগ রাখা হয়েছে, ঠিক তেমনি বয়স্কদের জন্যও খারাপ না নদীর তীর ঘেঁষে বসার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে। নদীর তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা বাঁধ সেখানে আপনি মন খুলে হাঁটতে পারবেন। নদীকে ঘিরে এমন বিনোদনের ব্যবস্থা আমার অনেক ভালো লেগেছে। আমার বিশ্বাস আপনাদের প্রত্যেকের ভালো লাগবে, আমার মত আপনাদেরও বার বার যেতে ইচ্ছা করবে।

ঘুরতে বেশ ভালই লাগছিল কিন্তু নদীর দিকে চোখ পড়তেই মনটা আচমকা কেমন যেন মলিন হয়ে গেলো। নদীর ভরা যৌবন, দুই কুল উপচে পড়া পানি, মৃদু বাতাস এসে নদীতে ঢেউ খেলবে এমনটা দেখতেই ভালো লাগে। কিন্তু বাস্তব চিত্র একদম ভিন্ন মনে হচ্ছে চারিদিকে বিদীর্ণ মরুভূমি।

আর এইসব চিন্তা না করে গাড়ি নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চললাম। চলতে চলতে রংপুর শহরের প্রবেশমুখে চলে এলাম, মাহিগঞ্জ সাতমাথার ঠিক গোলচত্বররে আমাদের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে একটি ভাস্কর্য করা হয়েছে । আগেও অনেকবার দেখেছি কিন্তু কখনো কিছু মনে হয় নাই আজ যখন আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ফোনটা হাতে নিলাম তখন বুকটা গর্বে ভরে উঠলো।

আজ আর লিখছিনা বাকিটা নিয়ে আরেকদিন আপনাদের মাঝে চলে আসবো। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ।আল্লাহ হাফেজ।।