নমস্কার বন্ধুরা,
বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রথম পিকনিক হয়ে গেলো। আদপে শীত আসা মাত্র মনটা কেমন যেন পিকনিকের জন্য উশখুশ করতে থাকে। শীতের ঠান্ডা আবাওয়া বলে এরকম হয় কিনা জানিনা। আসলে আজকের পিকনিক টা হুট করেই হলো। সত্যি কথা বলতে গেলে বিকেল সোয়া চারটার আগেও জানতাম না যে পিকনিক হচ্ছে। বিকেলে হাঁটতে বেরিয়েছি এক দাদা বললো রাতে পিকনিক হচ্ছে তোকে থাকতে হবে। আমি আবার খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে খুব একটা না করিনা। আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম যে কিসের মাংস দিয়ে পিকনিক হচ্ছে। উল্টোপাশ থেকে উত্তর পেলাম হাঁস দিয়ে। আমাকে আর পায় কে? হাঁস দিয়ে পিকনিক হচ্ছে শুনে আমিও এককথায় রাজি হয়ে গেলাম।
সন্ধ্যা ছয়টা বাজতেই ডাক পড়লো। বেরিয়ে দেখি সবে উনুন খোঁড়া খুঁড়ি প্রস্তুতি হচ্ছে। আমার দায়িত্ব পড়লো মুদির জিনিস পত্র কেনার। ন'জন ও আড়াই কিলো মাংসের মাপে মুদি কিনতে চলে গেলাম। মুদি কিনে যখন ফিরলাম তখন হাঁসের লোম ছাড়ানো চলছে আর ঠিক পাশে উনুনে গরম জল হচ্ছে।
আসলে হাঁসের মাংসের এটাই হয়তো সবচেয়ে কঠিন কাজ। প্রথমে হাঁসের লোম গুলো তুলতে হবে। ফের গরম জলে পরিষ্কার করে হাঁসের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম লোম গুলো খুঁটিয়ে তুলে ফেলে দিতে হবে। তারপর আবার হাঁস গুলোকে আগুনে পোড়াতে হবে। যারা হাঁস খায়না বা খায়নি তারা হয়তো বলবে এত ঝামেলার কি প্রয়োজন, হাঁসের চামড়াটা তুলে ফেললেই তো হয়। কিন্তু তাদের বোঝানো যাবে না যে হাঁসের চামড়া না থাকলে হাঁস খেতে মোটেই ভালো লাগবে না।
সন্ধ্যে ছটা থেকে রাত্রি সাড়ে আটটা বাজলো শুধু হাঁস গুলোকে ছাড়িয়ে পরিষ্কার করতে। আরেকটু সময় কম লাগতো কিন্তু ছাড়াতে বসেছিলো মাত্র দুজন। কাজের জন্য পিকনিকে অংশগ্রহণকারীরা অনেকেই ততক্ষণে এসে পৌঁছায়নি তাই দুজন উপরেই চাপটা বেশি ছিলো। কাজ জোর কদমে এগোচ্ছে না দেখে আমিও শেষ মুহূর্তে হাত লাগিয়ে দিলাম। বাইরে থেকে ছোটো ছোট লোমগুলো টেনে বের করতেই লোম বড় মাপের হয়ে যাচ্ছিলো। পেটে গেলে যে কি হবে সেটা ভেবেই আমি আরো খুঁটিয়ে তুলছিলাম। হাঁস ছাড়াতে ছাড়াতে বাকিরা আসতে শুরু করলো। বাকিরা পৌঁছতেই বাড়তি দুজনকে হাঁসের দায়িত্বে লাগিয়ে ভাতের জন্য তোড়জোড় করে দেওয়া হলো।
ভাত উনুনে চড়তে না চড়তেই মাংস পরিষ্কার হয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি সিদ্ধ করার তাগিদে মাংস ছোটো ছোটো পিস করে কেটে প্রস্তুত করে নেওয়া হলো।
ভাত নামলো যখন তখন ঘড়িতে প্রায় সাড়ে নটা বাজে, হাতে সময় বেশি নেই তাই ঝটপট করে মাংস তুলে দেওয়া হলো। পেঁয়াজ, রসুন, মসলা ও মাংস সবকিছু একসাথে দিয়ে রান্না চালু হলো।
মাটির উনুনে রান্না বেশ তাড়াতাড়ি হয় তবুও মাংস রাঁধতে ঘন্টা দেড়েক লেগে গেল। ঘড়িতে তখন পৌনে এগারোটা। আর অপেক্ষা করার সময় নেই তাই সবাই হুরমুরিয়ে খেতে বসে পড়লো।
মেনুতে বিশেষ কিছুই ছিল না। হাঁসের মাংস, মাথাপিছু দুখানা গোটা রসুন সাথে কিছু ব্যাট পাপড় আর লেবু। আহা ঠাণ্ডার রাতে এ যেন অমৃত।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |