কয়েকদিন আগে ঘুরে এলাম বাগবাজারে মায়ের ঘাটে। এই জায়গায় যেতে আমার সব সময় ভালো লাগে। আসলে সময় সুযোগ পেলেই আমিও গিয়ে দুদণ্ড বসি মায়ের কোলে। মা অর্থাৎ জগৎ জননী মা সারদা। শ্রীরামকৃষ্ণদেবের স্ত্রী মা সারদা জয়রামবাটির মেয়ে। তিনি বাল্যকালেই বিবাহসূত্রে বাঁধা পড়েছিলেন কামারপুকুরের ব্রাহ্মণ সন্তান গদাধর চট্টোপাধ্যায়ের সাথে। এই গদাধরই পরবর্তী সময়ে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। সময় সুযোগ পেলেই আমি তাঁর স্মৃতিধন্য অঞ্চলগুলিতে ঘুরে আসার চেষ্টা করি। সে বেলুড় মঠেই হোক বা বাগবাজার মায়ের ঘাটে অথবা তাঁর জন্মস্থান জয়রামবাটি বা কামারপুকুর। সেই মতোই কিছুদিন আগে গিয়ে বসেছিলাম মায়ের ঘাটে। শ্রীরামকৃষ্ণ দেব দেহ রাখবার পর মায়ের দেখভালের জন্য একটি ঘর তৈরি করা হয় বাগবাজারে। স্বামী বিবেকানন্দ স্বয়ং আমেরিকা থেকে চিঠি লেখেন গুরুভাইদের উদ্দেশ্য করে। তিনিও মায়ের দেখভাল করবার জন্য সকলকে বিশেষ অনুরোধ করেন। তাঁদের ইচ্ছা অনুসারেই মা সারদা দেবী এসে হাজির হন বাগবাজারে। তারপর থেকে নিয়মিত তিনি বাগবাজারের ঘাটে স্নান করতে আসতেন। তখন সেই ঘাটের নাম ছিল বিচালি ঘাট। যা আজ মায়ের ঘাট বলে পরিচিত। আসলে মায়ের স্মৃতিধন্য এই ঘাটে যেন সর্বত্র লেগে আছে মায়ের গন্ধ। আমিও তাই এখানে গিয়ে একটু বসবার সুযোগ পেলে সেই সুযোগকে হাতছাড়া করি না।
সেদিন তাই মায়ের ঘাটে বসে কয়েকটি ছবি ক্যামেরা বন্দি করলাম। ইচ্ছে হলো আপনাদের সামনে তুলে আনি এই মায়ের ঘাটের ছবি এবং তার সাথে যুক্ত গল্পগুলি। এখানকার পরিবেশ আমাকে মুগ্ধ করে বরাবর। কোলাহলমুখর কলকাতায় এ যেন এক টুকরো শান্তির জায়গা। এখানে নেই মানুষের কোলাহল, এখানে নেই কারো কোন তাড়াহুড়ো। সকলে যেন দু'দণ্ড বসে একটু জিরিয়ে নিতে আসেন এই জায়গায়। আমার তোলা ছবিগুলো দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন এই অঞ্চলের সৌন্দর্যের বিষয়টা। পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে গঙ্গা। প্রতিনিয়ত ঘাটের সিঁড়িতে এসে লাগছে তার জল। আর সেখানে অজস্র মানুষ প্রতিদিন স্নান করছেন নিয়মিত। ঘাটের ঠিক উপরে রয়েছে মা সারদা দেবীর মূর্তি। তার পাশেই মায়ের থাকবার ঘর, যা আজও অপরিবর্তিত।
আশপাশে প্রচুর ছেলেমেয়েরা বসে থাকেন অনবরত। তাদের আড্ডায় মুখরিত হয় পরিবেশ। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বৃদ্ধ বৃদ্ধারাও সেখানে এসে জিরিয়ে নেন কয়েক মুহূর্ত। আমি সেখানে বসে জলের ঢেউ দেখি। আর ভাবি না জানি কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই ঘাটের সঙ্গে।
আশা করি মায়ের ঘাটে আমার বসে থাকবার সেই মুহূর্তটি আপনাদের সামনে তুলে আনতে পারলাম। হয়ত আপনাদেরও ভালো লাগলো। মন্তব্য করে আপনাদের মতামত নিশ্চয় জানাবেন।
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।