মানুষের জীবনটা খুবই ছোট। ছোট এই জীবনের সময়গুলোতে নানান ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। জীবনের উত্থান পত্তন ঘটে। অনেক সময় হাসি আনন্দের দিন পার হয়। আবার অনেক সময় কষ্টে দিন পার হয়। একসময় আপনজনরা হাসতে হাসতে কাছে আসবে। একসময় আপনজনরা মনে কষ্ট দিয়ে দূরে চলে যাবে। তবে এই সমস্ত মুহূর্তের মধ্যে আমরা যদি একটু ভাবি। তাহলে অনেক কিছু বোঝার রয়েছে। জীবনের প্রত্যেকটা মুহূর্তে আমরা কোন না কোন বিষয়ের সম্মুখীন হয়। সেই সমস্ত বিষয়গুলো আমাদের শিক্ষা দিয়ে যায়। এমন কিছু শিক্ষা রয়েছে যেগুলো সারা জীবনে কাজে আসে। আবার এমন কিছু শিক্ষা রয়েছে যেগুলো অল্প সময়ের মধ্যে আমরা ভুলে যায়। তবে জীবন চলার পথে কঠিন মুহূর্তে আমরা যে শিক্ষা অর্জন করে থাকি, সেই শিক্ষা আমাদের জন্য অনেক কিছু শিখিয়ে যায়।
আমরা একটা কথা জানি "সুসময় বন্ধু ফোটে,অসময়ে হায় হায়" আবার অনেক সময় আমরা শুনেছি ও জানি 'সুখের সময় অনেক বন্ধু জোটে, কিন্তু দুঃখের সময় বন্ধুরা সব পালায়।'আমি এই কথাগুলো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। যখন জীবনে কঠিন মুহূর্ত বা কষ্টের মুহূর্ত আসে তখন সুবিধা ভুগি আপনজনগুলো চোঁখে সামনে আসবে না। আবার বিশেষ প্রয়োজন হলেও তারা বিভিন্ন অজুহাতে দূরে সরে থাকবে। আর এটাই বাস্তবতা। আপনি যত খরচ করবেন তত আপনার আপন জনের অভাব থাকবে না। যখন আপনি অন্যের পিছে খরচ করতে পারবেন না তখন আপনার আপনজন থাকবে না। ঠিক তেমনি জীবনে কঠিন মুহূর্ত আসে, হয় টাকা পয়সার অভাব অথবা অসুস্থতা অথবা বিপদ হওয়ার সময়। সেই মুহূর্তে যে সমস্ত মানুষগুলো আপনি প্রত্যাশা করবেন তার মধ্য থেকে সামান্য কয়েকজন আপনার সহায়তা করবে। বাকিরা সব পালিয়ে যাবে, বিভিন্ন অজুহাতে দূরে সরে থাকবে। আর সেই মুহূর্তে মনোভাবটা এমন পর্যায় সৃষ্টি করবে যেন বেঁচে থেকেও মনে হবে মরে যেতে। কারণ মন চাবে না যে, আমার আপনজনরা আমার সাথে এমন আচরণ করুক। তবে তার মধ্যে শিক্ষা রয়েছে অনেক। সুবিধাভোগী মানুষদের জন্য তো জীবন থেমে যাবে না। শুধু সময় চিনিয়ে দেবে সেই সমস্ত মানুষদের।
উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি এমনই এক বড় ভাইয়ের জীবন কাহিনী। বাবা মায়ের বড় সন্তান। ছোট তিনটা ভাইকে কঠোর পরিশ্রম করে মানুষ করেছিল। ছোট ভাইদের লেখাপড়া শিখাতে মানুষের মত মানুষ করতে নিজে লেখাপড়া করে নাই। লেখাপড়া বাদ দিয়ে কৃষিকাজ এরপর বিদেশে পাড়ি জমায়। অধিক পরিশ্রম করে যখন ভাই তিনটাকে লেখাপড়া শিখিয়েছে মানুষ করেছে বিদেশে পাঠিয়েছে কোটিপতি বানিয়েছে। এই মুহূর্তে বড় ভাইটা বৃদ্ধ হয়ে এসেছে। নিজের জীবনের অর্থ উপার্জন সব ছোটদের পিছনে বিলিয়ে দিয়ে নিজের কাছে কিছুই নাই। নিজের সন্তান মানুষ করার মত সাধ্য নেই তার এখন, যখন ভাইদের পানে সহায়তা পাওয়ার আশা করেছিল। তখন ছোট ভাইয়েরা বউদের কথা শুনে বড় ভাইকে অবহেলা করে আলাদা করে দেয়, এমন কি সপ্তার পর সপ্তা চলে যায়, বড় ভাইয়ের খোঁজ রাখে না। প্রতিনিয়ত ভালো-মন্দ খাচ্ছে পরছে চলছে, কিন্তু হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করা বড় ভাইটার কথা স্মরণ করে না, বাবা বেঁচে না থেকেও বাবার দায়িত্ব পালন করেছে বড় ভাই। যে বড় ভাইটা তাদের কষ্ট করে মানুষ করেছে। তাকে তো বাবার মত দেখতে হবে, বসিয়ে বসিয়ে আনন্দ সাথে খাওয়াতে হবে। কিন্তু ছোট ভাইয়েরা নিজ নিজ ভাবে আলাদা হয়ে সুখে সংসার করে। এটাই যেন জলয্যান্ত প্রমাণ। তবে সেই ভাইদের একান্ত বোঝা উচিত। যাদের সাথে আনন্দ উল্লাসে ভালো দিন কাটাচ্ছে তারা পাশে ছিল, নাকি মানুষ করার জন্য ও ভালো পর্যায়ে তুলে দেওয়ার জন্য বড় ভাই ভাবি পাশে ছিল।
আর এভাবে প্রতিনিয়ত আমরা কেউ না কেউ বিভিন্ন শিক্ষার সম্মুখীন হয়। আর এই সমস্ত শিক্ষাগুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে,তবে কারো সাথে খারাপ আচরণ করা যাবে না। শুধু একজন আরেকজনের সঠিক পথটা বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যারা ভুলের মধ্যে আছে তারা যেন শুধরাতে পারে। কঠিন মুহূর্তটা যেন তারা বুঝতে পারে। আমার জীবনে কঠিন মুহূর্ত আসবে, আপনার জীবনে আসবে না এটা কিন্তু নয়। মানুষ মাত্র ভুল করে, তাই তাকে ভুল বুঝে দূরে সরে থাকার মধ্যে সমাধান নেই। বাস্তবতার কঠিন মুহূর্তের শিক্ষা তুলে ধরতে হবে আপনদের মাঝে। আর এর মধ্য দিয়ে কঠিন মুহূর্তের শিক্ষাটা নিজের যেমন কাজে আসবে, অন্যেরও কাজে আসবে।
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।