আমার প্রিয় মিষ্টি||ছানার জিলিপির রেসিপি

isha.ish -

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে ভালো আছেন। পোষ্টের কভার ছবি দেখে বুঝতেই পেরে গেছেন আমি কি পোস্ট করতে চলেছি। হ্যাঁ আজকে আমি আমার সব থেকে পছন্দের মিষ্টি অর্থাৎ ছানার জিলিপির রেসিপি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করে নেব।

বাঙালি হয়ে মিষ্টি পছন্দ করে না এরকম বাঙালি খুব কম আছে। আমিও যেহেতু বাঙালি আমার কিন্তু মিষ্টি খুব পছন্দের। গোটা প্লাটফর্ম জুড়ে যত পোস্ট করেছি সব পোস্টই মোটামুটি আমি এই কথা বলেছি যে আমি মিষ্টি খেতে কত ভালোবাসি। তবে হ্যাঁ মিষ্টি বলুন আর যাই বলুন আমি কখনোই অতিরিক্ত কোন কিছু খাওয়া পছন্দ করি না।

খাওয়া-দাওয়া এমন ভাবে করতে হবে যাতে শরীরের ওপর কোনরকম বাজে প্রভাব না পড়ে। আমি মিষ্টি খেতে ভালোবাসলেও কখনো দশটা মিষ্টি খেয়ে নিই নি। বাবার কাছে এখনো গল্প শুনি। বাবা ছোটবেলায় ভীষণ পরিমাণে মিষ্টি খেতে ভালোবাসতো ,আর বাবা একাই ১০- ২০ টা রসগোল্লা খেয়ে নিতে পারতো। কিন্তু এখন দেখলেও অবাক লাগে ,বাবা কিন্তু বেশি মিষ্টি খায় না এখন।

আমি এখনো অব্দি বুঝতে পারি না, কিছু কিছু মানুষ আছে যারা পছন্দের খাবারগুলো খুবই অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়ে থাকে। আমার কাছে মনে হয় নিজের পছন্দের খাবারগুলো খুব অতিরিক্ত খেলে সেটা থেকে একটা রুচিহীনতা তৈরি হয়। যেমন ধরুন আমি কলকাতায় থাকতে প্রচুর পরিমাণে বিরিয়ানি খেতাম।। রান্না করার ভয়ে মাঝেমধ্যেই বিরিয়ানি কিনে কিনে নিয়ে এসে খাওয়া দাওয়া করতাম।
এরকম চলতে চলতে কিছু মাস পরে আমার বিরিয়ানির উপর থেকে ওই অনুভূতিটাই চলে গেল। এখন বিরিয়ানির নাম শুনে খেতে আর ইচ্ছা করে না। তাই আমি সব সময় চেষ্টা করি খাওয়া দাওয়া অতিরিক্ত না করে বুঝে শুনে খাওয়ার।

লিংক

Loading iframe
প্রত্যেক বারের মতো এই রেসিপিরও ভিডিও আমি পোস্ট করেছি। বুঝতে না পারলে ভিডিওটি অবশ্যই দেখবেন।

কৃষ্ণনগর শহর মিষ্টির জন্য খুবই বিখ্যাত। আমার শহরে আসলে আর যাই করবেন না কেন ,মিষ্টির অবশ্যই একবার স্বাদ নিয়ে দেখবেন। আমার কৃষ্ণনগর শহরের বিখ্যাত মিষ্টি হল সরপুরিয়া এবং সরভাজা। এর সাথেও কৃষ্ণনগরের মিষ্টির দোকানের প্রত্যেকটি মিষ্টি অসাধারণ খেতে হয়।। আমার বাড়ির পাশে মিষ্টির দোকান। হাঁটা পথে তিন মিনিট।

ছোটবেলা থেকেই ওই দোকানে মিষ্টি খেয়ে আমি বড় হয়েছি। এখনো অব্দি মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করলে সোজা চলে যায় অমল কাকার মিষ্টির দোকানে। নানান ধরনের মিষ্টি আমি এর আগেও বানিয়েছি। সেগুলো নিয়ে এই প্লাটফর্মে অনেকগুলো পোস্টও করেছিলাম। কিন্তু কখনোই পান্তুয়া কিংবা ছানার জিলিপি নিয়ে আপনাদের সাথে পোস্ট শেয়ার করিনি।
তাই ভাবলাম ছানার জিলিপির রেসিপিটা আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করে নিই।
প্রথমে ছানার জিলিপির উপকরণ গুলো আমরা দেখে নেব।

উপকরণ
নংসামগ্রীপরিমাণ
ছানা১৩০ গ্রাম
ময়দাদুই চামচ
বেকিং সোডা১/৪ টিসপুন
ঘিএক চামচ
চিনিএক কাপ
জলএক কাপ
এলাচতিনটে

মাত্র এই কটা উপকরণে আপনি দুর্দান্ত ছানার জিলিপি তৈরি করতে পারেন। নিজেরাই ভাবুন বাড়িতে এত সহজে ছানার জিলিপি তৈরি করতে পারছেন যখন, তাহলে মিষ্টির দোকানে গিয়ে লাভ কি। চলুন এবার পরপর ধাপে ধাপে আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করে ফেলি কিভাবে ছানার জিলিপি আমি তৈরি করলাম।

প্রথম ধাপ

আমার বাড়িতে প্রত্যেকদিন দুধওয়ালা দুধ দিয়ে যায়। সেই দুধ থেকেই মা ছানা বানিয়ে রেখেছিল। প্রায় ১৩০ গ্রাম ছানা তৈরি হয়েছিল। তারপর সেই ছানাটিকে একটি সুতির কাপড়ে বেঁধে ছানা থেকে পুরো জলটা ঝরিয়ে নিয়েছি। তারপর অনেকক্ষণ এভাবেই বেঁধে ঝুলিয়ে রেখেছিলাম।

ছানা থেকে সমস্ত জল বের হয়ে যাবার পর একটি থালার মধ্যে পুরো ছানাটা নিয়ে নিচ্ছি। এরপর হাতের তালুর সাহায্যে চেপে চেপে পিস্তে থাকবো ছানাগুলো। যাতে ছানার কোন দানা না থাকে।

দ্বিতীয় ধাপ

হাত দিয়ে ওরকম ভাবে মাখতে থাকলে আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারবেন, ছানার দানাগুলো মিহি হয়ে যাবে। সেই অবস্থায় আপনাকে দিয়ে দিতে হবে দু চামচ ময়দা। তারপরে দিতে হবে বেকিং সোডা, আর ঘি। এবার সবকিছু ভালোভাবে ছানার সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। হাতের সাহায্যে ভালোভাবে মেখে নেব সবকিছু।

তৃতীয় ধাপ

এবার আমরা ছানার ডো টা থেকে লেচি কেটে নেব। ছানার জিলিপির আকৃতি দেব। গোল গোল লেচি গুলোকে হাতের তালুর সাহায্যে লম্বা করে নিয়ে , পেঁচিয়ে নেব। এভাবে প্রত্যেকটা তৈরি করে ফেলব।

চতুর্থ ধাপ

ছানার জিলিপিগুলোকে ভাজতে হবে ,তাই আমি কড়াইয়ের মধ্যে তেল গরম করতে দিয়ে দিলাম।

পঞ্চম ধাপ

তেল গরম হয়ে যাবার পর লো থেকে মিডিয়াম আছে গ্যাসের ফ্লেম রেখে আমরা প্রত্যেকটি ছানার জিলিপি ভেজে নেব। বেশ সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে লাল লাল করে ভেজে নিতে হবে। লাল লাল হয়ে গেলে আমরা ছানার জিলিপি গুলোকে তুলে রাখবো।

ষষ্ঠ ধাপ

এবার মিষ্টির রস তৈরি করতে হবে। এই চিনির সিরা তৈরি করতে একটি পাত্রে নিয়ে নিচ্ছি এক কাপ চিনি এবং এক কাপ জল। ছানার জিলিপির সিরা বেশ পাতলা থাকে ,তাই সিরা বেশি টাইট করলে হবে না।

সপ্তম ধাপ

গ্যাসের ফ্লেম মিডিয়াম থেকে হাই এর মধ্যে রেখে ফুটতে দিয়ে দেব। আর তাতে দিয়ে দেবো তিনটে এলাচ। যখন ফুটে যাবে চামচ দিয়ে ,একটু চেক করে নিতে হবে হাতে চ্যাট চ্যাট করছে কিনা। তবেই বোঝা যাবে চিনির সিরা তৈরি হয়ে গেছে।

অষ্টম ধাপ

এবার গরম গরম সিরার মধ্যে দিয়ে দিতে হবে ছানার জিলিপিগুলো, যেগুলো আমরা ভেজে রেখেছিলাম।। ভালোভাবে রসের মধ্যে ডুবিয়ে দিতে হবে। ১৫ থেকে কুড়ি মিনিটের জন্য ঢাকনা দিয়ে রাখতে হবে।

নবম ধাপ

১৫ মিনিট পর ঢাকনা খুলে দেখতে পাওয়া যাবে রসের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা মিষ্টিগুলো ফুলে উঠেছে। রস ভর্তি হয়ে গিয়েছে।

তৈরি

আর এভাবেই তৈরি হয়ে যাবে সুস্বাদু ছানার জিলিপি।

দোকানে এক একটা ছানার জিলাপি ৬ টাকা থেকে ৮ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। দেখতে গেলে দশটা ছানার জিলিপির দাম ৬০ টাকার বেশি হয়।সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বাড়িতে তৈরি করলে খুবই কম খরচে তৈরি হয়ে যায় ছানার জিলিপি। আমার পছন্দের রেসিপি টা আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে পেরে আমারও খুব ভালো লাগলো। সকলে ভালো থাকুন। এই একই পদ্ধতিতে আপনারাও বাড়িতে তৈরি করে ফেলুন। আজ এখানেই শেষ করছি।